প্রকাশিত :  ১৮:০০, ২৭ মার্চ ২০২৩

আইএমএফ’র শর্ত পূরণে ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কার

আইএমএফ’র শর্ত পূরণে ব্যাংক খাতে ব্যাপক সংস্কার

জনমত ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের লক্ষ্যে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২১ আসন্ন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে। সেখানে অধিকার ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে 'ব্যাংক' শব্দ ব্যবহার করার অপরাধে সর্বোচ্চ ৭ বছর বা ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রেও কঠোর বিধান অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সব প্রক্রিয়া শেষে খসড়া আইনের প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর জাতীয় সংসদে প্রেরণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আইএমএফ যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ ঋণ দিয়েছে। সেই ঋণ পেতে অনেক শর্তও দিয়েছে সংস্থাটি। তারমধ্যে ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২১ উত্থাপনের বিষয়টিও রয়েছে।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়, কোনো ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক হিসাবে অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবেন না। তবে এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালক হওয়া ব্যক্তির স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অপর ব্যক্তি একই ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবে না। পরিচালনা পর্ষদে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করা যাবে না।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্তকরণ প্রসঙ্গে খসড়া আইনে বলা আছে প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশক্রমে একটি কমিটি গঠন করবে। ওই কমিটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ শনাক্ত এবং চূড়ান্ত করবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতার তালিকা প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে। এই তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করতে পারবে। আর চূড়ান্তভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আপিল করতে পারবেন।

তবে এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। সেখানে আরও বলা হয়, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসাবে শনাক্ত হলে তার ওপর গাড়ি-বাড়ি, জমি রেজিস্ট্রেশন এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

এছাড়া যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলো অধিদপ্তর থেকে কোম্পানির নিবন্ধন এবং ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারবে না। এছাড়া সামাজিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সংগঠনের কোনো পদে থাকতে পারবেন না।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।

আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে-কোনো ব্যাংকের পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে ওই ব্যাংকের পরিচালক পদ হারাবেন। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বা অগ্রিম নিয়ে ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও পরিচালকের পদ থাকবে না।

এছাড়া প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা পর্ষদের বাইরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অডিট কমিটি এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়ে একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবে।

আর ব্যাংকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে পরিচালনা পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধি বিষয়ে সময় সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। খসড়া আইনে দুর্বল ব্যাংক মার্জার করার বিধান রাখা হয়েছে।




Leave Your Comments


অর্থনীতি এর আরও খবর