img

আমি নিশ্চিত, জয় নৌকারই হবে: আজমতউল্লা খান

প্রকাশিত :  ০৬:২৩, ২৫ মে ২০২৩

আমি নিশ্চিত, জয় নৌকারই হবে: আজমতউল্লা খান

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) চলছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্র রয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়।

এদিন সকালে টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসা, বউ বাজার রোড, আরিচপুর কালভার্ট এলাকায় প্রথমবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দেন মেয়র প্রার্থী আজমতউল্লা খান। ভোট দেওয়ার পর গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন তিনি।

আজমতউল্লা খান বলেন, প্রথমবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিলাম, তাই আমার মাঝে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে। জয় পরাজয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। কিন্তু ইতিমধ্যে জনগনের কাছ থেকে আমি যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি, সমর্থন ও ভালোবাসা পেয়েছি তাতে আমি নিশ্চিত জয় নৌকারই হবে। তবে নির্বাচনে যেকোনো রেজাল্ট আসুক না কেনো আমি তা মেনে নিয়ে মানুষের সেবাই কাজ করে যাবো।     

আজমতউল্লা খান ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগ এবং পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। তার রাজনৈতিক জীবন প্রায় ৫৮ বছরের। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি সাবেক টঙ্গী পৌরসভার তিনবার চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। গাজীপুর মহানগর গঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

মেয়র পদপ্রার্থী জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনি হলফনামায় নিজেকে গৃহিণী ও স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তার স্বামী মো. মিজানুর রহমান চার-পাঁচ বছর আগে মারা যান। বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলমসহ তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি যথার্থই গৃহিণী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। কারণ মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগে রাজনীতি বা সামাজিক কোনো ক্ষেত্রে তার নাম শোনা যায়নি। তবে এলাকায় তিনি জনদরদি হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে এবং শিক্ষার্থীসহ গরিব-দুঃখী মানুষকে বরাবরই আর্থিক সহায়তা করেন। 

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমতউল্লা খান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন (টেবিল ঘড়ি), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা), জাকের পার্টির মনোনীত প্রার্থী রাজু আহমেদ (গোলাপ ফুল), গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম (মাছ), স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি (হাতি) ও হারুন অর রশিদ (ঘোড়া)।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমতউল্লা খান দলীয় অবস্থানের কারণে শক্তিশালী প্রার্থী। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় বিজয়ের ব্যাপারে তাকে যেমন নির্ভার মনে হচ্ছে, বাস্তবে তা এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। কারণ সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও ঋণখেলাপির দায়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। একপর্যায়ে জায়েদা খাতুনই আজমতউল্লা খানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। তাই মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আজমতউল্লা খান ও জায়েদা খাতুনের মধ্যে—এমন অভিমত ভোটার ও নগরবাসীর।

এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র, ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন, অর্থাৎ মোট ৩২৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর জন্য ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ৪৮০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪০৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৬ হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনসহায়ক রয়েছেন ১০ হাজার ৯৭১ জন। প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৩০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ১৮ জন।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রসমূহে অস্ত্রসহ একজন এসআই অথবা এএসআই ও চার জন কনস্টেবল, অস্ত্রসহ এক জন অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন অস্ত্রসহ আনসার এপিসি, লাঠিসহ চার জন নারী ও ছয়জন পুরুষ আনসার/ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৭ জন মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রসমূহে ১৬ জন মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচনি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র্যাব দায়িত্ব পালন করবে। এর মধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে একটি করে মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে মোট আটটি রিজার্ভ  স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৩০টি র‍্যাবের টিম থাকবে। নগরীর পাঁচটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে।


মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থী বা প্রভাবশালীদের বাড়ির কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত কেন্দ্র, অতীতে যেসব ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা হয়েছিল, যেসব ভোটকেন্দ্রে যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ এবং এলাকার গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও প্রশাসনিক ভাষায় এসব কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করা হয়েছে।


img

মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হলেও যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেনি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত :  ১৮:২৯, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মানবাবিধকার প্রতিবেদনে তা স্বীকার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহলী সাবরীন। এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেন, ২০২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন নোট করেছে বাংলাদেশ। আমরা যতই আকাঙ্ক্ষা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। কারণ একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে।‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লে­খযোগ্য উন্নতি হয়েছে, তবে যেসবের আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘সরকারের প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, বয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সমাবেশ করার ক্ষেত্রে উল্লে­খযোগ্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এত অর্জন সত্ত্বেও দুঃখের বিষয় মার্কিন প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন স্বীকার করা হয়নি। এছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, এটি পৃথক রিপোর্ট করা বা অভিযুক্ত ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে পরিপূর্ণ নয়।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘এটাও স্পষ্ট যে, প্রতিবেদনে বেশিরভাগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি বেনামি সংস্থা থেকে অনুমাননির্ভর তথ্য নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সে কারণে প্রতিবেদনে সহজাত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে।’
মার্কিন প্রতিবেদনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন।’
মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এটি সঠিক নয়। প্রতিবেদনে বিএনপি এবং এর রাজনৈতিক মিত্রদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও ভাঙচুর তুলে ধরা হয়নি। তাদের সহিংসতা প্রায়ই সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করে এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অত্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক সংলাপ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদনে এই বিষয়ে রাষ্ট্র-সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়িয়ে বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অনুরূপ শ্রম অধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি কেস উলে­খ করা হয়েছে, যেগুলো নিয়ে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘প্রতিবেদনটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মূল্যবান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নোট করেছে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সব নাগরিকের মানবাধিকারের সম্পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার জন্য যে কোনো পরিস্থিতিতে জড়িত থাকার জন্য উন্মুখ।’