কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে এবার সর্বোচ্চ ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলার পর এসব টাকা পাওয়া গেছে। এখন চলছে টাকা গণনার কাজ। মসজিদ মাদরাসার ১৩৮ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ১৯৮ জন মানুষ টাকা গণনার কাজ করছেন। এবার তিন মাস ১৩ দিন পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত ৬ই মে এসব দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ১৯ বস্তা টাকা গণনা করে তখন এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এবার ২৩ বস্তা টাকা হওয়ায় টাকার পরিমাণ আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) এর উপস্থিতিতে পাগলা মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়।
এবার বড় বস্তায় ২৩ বস্তা টাকা হয়েছে। এরপর শুরু হয় টাকা গণনার কাজ। এবারও দান সিন্দুকে টাকা ছাড়াও স্বর্ণালংকার এবং বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। টাকা গণনার এই এলাহি কাণ্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে গেছেন।
প্রতিবছর নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বাংলাদেশি হজযাত্রীদের। হজ এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (হাব) ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দিষ্ট চক্র এই ব্যবস্থাপনাকে বারবার বিতর্কিত করার চেষ্টা করেন। এবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
২০২৫ সালের হজ পালনের প্রাথমিক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে প্রতি হজযাত্রীর অগ্রিম ৩ লাখ টাকা দিয়ে এই নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। মিনা ও আরাফার তাঁবু ও অন্যান্য সুবিধার জন্য চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধিত সংখ্যা সৌদি আরব পাঠানোর কথা রয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের। অথচ সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হলেও হজযাত্রীর প্রত্যাশিত সাড়া মিলছে না। যদিও এই নিবন্ধন চলবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এতে শনিবার পর্যন্ত প্রাথমিক নিবন্ধন করেছে মাত্র ১ হাজার ৪০৩ জন হজযাত্রী। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছে ৮১২ জন। আর বেসরকারিভাবে নিবন্ধন করেছে ৫৯১ জন।
২০২৫ সালে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই নিবন্ধন কার্যক্রম প্রায় দেড় মাসের মতো চললেও এখনো প্যাকেজ ঘোষণা না করায় হজযাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হজ এজেন্সির মালিকরা জানান, প্রতিবছর হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার আগে সরকারি ও বেসরকারিভাবে একাধিক হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এতে সামর্থ্য অনুযায়ী হজযাত্রীরা নিবন্ধন করেন।
কিন্তু আগামী বছর হজ পালনের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হলেও এখনো কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি। প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। যা গত বছর ছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এতে হজযাত্রীরা এক ধরনের দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
এছাড়া বর্তমানে হজ পালন করতে গেলে গমনে ট্রানজিট বিমান ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি ফ্লাইটে ৭৫-৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। যদিও ডলারের কারণে দাম কমে-বাড়ে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে জনপ্রতি এই বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল।
হজযাত্রীদের কাছ থেকে অযৌক্তিক বিমান ভাড়া আদায় করার জন্য একটি চক্র প্রতিবছর সক্রিয় থাকেন। সেটি এখন বন্ধ করার সময় এসেছে। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা করে হজযাত্রীদের জন্য সব বিমান সংস্থা উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এতে যাত্রী বহনে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। বহনকারী সংস্থা বেশি হলে ভাড়া এমনিতেই কমে আসবে।
হজের প্রাক-প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন জাহিদুল ইসলাম নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এ বছর ধর্ম উপদেষ্টা প্যাকেজের টাকা কমানোর কথা বলায় হজ পালনের আশা সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু প্যাকেজ ঘোষণা না করে প্রাথমিক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে কত টাকা প্রয়োজন তা না জেনে কীভাবে নিবন্ধন করব বুঝতে পারছি না। যেহেতু হজে যাওয়ার জন্য আমার একটা নির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে। আবার নিবন্ধন করে যেতে না পারলে সেই টাকা ফেরত দেবে কিনা তাও জানি না। প্যাকেজ ঘোষণা না করায় এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।
এই বিষয়ে হজ অধিশাখার যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, হজ প্যাকেজ এই মাসের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। এই নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে সৌদি আরবের খরচের হিসাব এখনো পাইনি, তাই একটু দেরি হচ্ছে। গত হজ মৌসুমের প্রাথমিক নিবন্ধনে টাকা পরিমাণ কম হওয়ায় একটু ঝামেলা হয়েছে। তাই এবার টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
হজ প্যাকেজের খরচ না জেনে অনেকেই প্রাথমিক নিবন্ধন করছেন। পরে অর্থ সংকটের কারণে যেতে না পারলে এই টাকা ফেরত দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক নিবন্ধন করলে আর টাকা ফেরত দেওয়া যায় না। তবে সুযোগ থাকলে রিপ্লেস করা যায়।
জানা যায়, ২০২৫ সালে হজে গমনেচ্ছুদের জন্য নিবন্ধন পোর্টাল চালু হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর। পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে ২ হাজার ৮৪৯ জন এবং বেসরকারি মাধ্যমে ৫৩ হাজার ৯৯৫ জন হজযাত্রী ৩০ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। এতে সরকারি মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন ৮১২ জন। আর বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা ৫৯১ জন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি-বেসরকারি দুই মাধ্যমেই হজ নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। প্রাথমিক নিবন্ধনের সময়ের পর আর সময় বাড়ানো হবে না। বর্তমানে হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩০ হাজার টাকা ফি পরিশোধ করে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। আর হজের প্যাকেজ ঘোষণা হলে বাকি টাকা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এ বছর যেসব এজেন্সি হজ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে, তার তালিকা প্রাথমিকভাবে হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার হজযাত্রী নিবন্ধনসংক্রান্ত জরুরি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজের নিবন্ধন না করলে মিনা ও আরাফার ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়বেন হজযাত্রীরা।
এতে বলা হয়, রাজকীয় সৌদি সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে, আল-মাশায়ের ও আল-মোকাদ্দাসার (মিনা ও আরাফা) তাঁবু নির্ধারণ ও সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের কার্যক্রম ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে তাঁবু বরাদ্দ প্রদান করা হয় বলে বিশ্বের অনেক দেশ জামারাহর নিকটবর্তী জোনে তাঁবু বরাদ্দ নেবে। ফলে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন না হলে মিনা ও আরাফার ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। তাঁবু গ্রহণ ও সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে বিলম্ব হলে হজযাত্রীদের জামারাহ থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ি এলাকায় ও নিউ মিনা এলাকায় অবস্থান করতে হবে। এতে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘপথ হাঁটতে হবে যা হজযাত্রীদের জন্য কষ্টকর হবে।
শুক্রবার ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন গণমাধ্যমে বলেছেন, সমুদ্রপথে জাহাজে করে হাজিদের পাঠানো গেলে বিমানের চেয়ে ৪০ শতাংশ ভাড়া কমে যাবে। এ বিষয়ে সৌদি সরকার থেকে অনুমোদন পেলে অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলাপ করব।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি হজ প্যাকেজ করতে চাই, একটি হারাম শরিফের কাছে এবং আরেকটি দুই-তিন কিলোমিটার দূরত্বে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হজের প্যাকেজ কমানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তারা ভাড়া কমানোর ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ফলে আমরা আশাবাদী যৌক্তিকভাবে বিমানের ভাড়া নামিয়ে আনতে পারব।’
গত হজ মৌসুমে অর্থাৎ ২০২৪ সালে সর্বনিম্ন সরকারি প্যাকেজে খরচ ধরা হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকার মতো। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন প্যাকেজে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খরচ বেড়ে যাওয়ায় গতবারও হজ কোটার প্রায় ৩৫ শতাংশ কোটা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। হজযাত্রীদের অভিযোগ, হজের খরচ এত বেশি নির্ধারণ করা হয়, অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করেও অর্থের অভাবে যেতে পারেন না। এ বছর এই প্যাকেজের খরচ কমিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সহজ করে দেওয়ার দাবি জানান তারা।