প্রকাশিত :  ২০:২৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রশ্নপত্র কিনে মেয়েকে মেডিকেলে ভর্তি করেন মা

প্রশ্নপত্র কিনে মেয়েকে মেডিকেলে ভর্তি করেন মা

মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে এবার গ্রেপ্তার হলেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষিকা মাকসুদা মালা। এ ছাড়া একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকার থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ের পরিচালক ডা. বশিরুল হকসহ বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল থেকে পাস করা আরও পাঁচ চিকিৎসক। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিকা মাকসুদাসহ সাত চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ ছাড়া সিআইডি গত ১০ বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য এ পর্যন্ত ১৭ জন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। 

মঙ্গলবার গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন– ডা. অনিমেষ কুমার কুণ্ডু, ডা. জাকিয়া ফারইভা ইভানা, ডা. সাবরিনা নুসরাত রেজা টুসী, ডা. জাকারিয়া আশরাফ, ডা. মৈত্রী সাহা। তাদের কাছ থেকে ৮টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে। বুধবার সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এ তথ্য জানান। সিআইডির মুখপাত্র জানান, গত ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে করা মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।  

এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্য প্রকাশিত হলে এই চক্রের মূল হোতা জসীম উদ্দিন মুন্নুসহ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের মধ্যে ১৯ জনই চিকিৎসক। এ ছাড়া গত ৩০ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ১২ চিকিৎসকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এদের মধ্যে ১০ জন মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে থেকে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্য এবং মেডিকেলে অসাধু উপায়ে ভর্তি হওয়া কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া চক্রের হোতা জসীম উদ্দিনের কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকেও সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার সহযোগীদের নাম পাওয়া যায়। 

কার কী পরিচয়

তদন্ত সূত্র জানায়, শিক্ষিকা মাকসুদা আক্তার মালা ২০১৫ সালে নিজের মেয়ে ইকরা বিনতে বাশারসহ আরও সাত শিক্ষার্থীকে ফাঁসকরা প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। এর মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা কামিয়ে নেন তিনি। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মাধ্যমের প্রভাতি শাখার সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গভর্নিংবডির শিক্ষক প্রতিনিধি মাকসুদা। গ্রেপ্তারের পর প্রতিষ্ঠানটির রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়, মাকসুদার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। চাকরিতে নিয়োগের শর্তাবলি ভঙ্গের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে সাময়িক বরখাস্ত কার্যকরের কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। মাকসুদার মেয়ে ইকরা বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. বশিরুল হক দীর্ঘদিন প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। এর আগে গ্রেপ্তার একাধিক আসামি জবানবন্দিতে ডা. বশিরের নাম বলেছে। এ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁস চক্রের হোতা জসীমের গোপন ডায়েরিতেও ডা. বশিরের নাম ছিল।

অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) কে-৬৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী বর্তমানে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকতা (বর্তমান ঢামেক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত) ডা. অনিমেষ কুণ্ডু। তাঁর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পেয়ে ২০১৫-১৬ সেশনে ডা. সাবরিনা রেজা টুসী রংপুর মেডিকেল এবং ডা. মৈত্রী সাহা ও ডা. জাকারিয়া আশরাফ ঢামেকে ভর্তির সুযোগ পান। ওই সেশনে ডা. অনিমেষ মোট ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতেন। এদের মধ্যে টুসী, মৈত্রী ও জাকারিয়াসহ ৮ জন বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পান। পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র পড়াতেন ডা. অনিমেষ। শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের সঙ্গে ১০ লাখ টাকা করে চুক্তি ছিল তাঁর। ভর্তির জন্য ডা. অনিমেষ জামানত হিসেবে চেকও রেখেছিলেন।

ঢামেকের কে-৬৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. জাকিয়া ফারইভা ইভানা। তিনি ২০০৬-০৭ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেধায় ৬০তম স্থান অর্জন করেন। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রে জড়িত চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম হোতা ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধানের কাছ থেকে প্রশ্ন নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হন। ডা. ময়েজকে আগেই গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।





Leave Your Comments


শিক্ষা এর আরও খবর