img

বাংলাদেশের নির্বাচন এবং নিরপেক্ষতা

প্রকাশিত :  ১৪:০২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের নির্বাচন এবং নিরপেক্ষতা

একটা নির্লজ্জ প্রচারণা চলছে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ টি সিটও পাবেনা!

না পাক আওয়ামী লীগ ১০ সিট, তা আমিও চাইতাম। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে \"এখন\" আওয়ামী লীগের নৌকার চাইতে বিএনপি-জামাতের ধানের শীষ আর পাল্লা যে অধিক ভোট পাবে তা যে কোনো মুর্খও বুঝতে পারে।

\"উনসত্তর-সত্তর-একাত্তর\" এর পরিবর্তিত সময় তুলনায় কী এই \"এখন\" সু সময়?

বাস্তবতায় কি \"নিরপেক্ষ\" এই সময়কাল!

এমতাবস্থায় কি হবে নিরপেক্ষ নির্বাচনে! বাকি সব আসনে জামাত-শিবির- বিএনপি এবং আরো কিছু মৌলবাদী ইসলামি দলগুলি জয়যুক্ত হবে! সেটাও তো আমরা চাইনা!

উল্লেখিত সংগ্রামী সেই সময়ে দেশের মানুষ ছিলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, সমাজতন্ত্রের পক্ষে, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রের পক্ষে। কিন্তু ১৫ আগস্টের বর্বরতায় রাতারাতিই বদলে যায়নি নিশ্চয়ই গণ মানুষের চেতনা! বিষাক্ত ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী সুযোগ নিয়েছিলো মানুষের সেই অভুতপূর্ব চেতনাকে ভোঁতা করে দেওয়ার। তাদের ধর্মীয় আফিং ক্রমশ এবং দ্রুত ব্যবহারে অধিকাংশ মানুষ হয়ে উঠলো ধর্মীয় মৌলবাদে  আসক্ত! সাঈদি, আজহারি, আব্দুর রাজ্জাক, আহমেদ শফি গংদের ওয়াজ হয়ে গেলো বাংলাদেশের আপামর মানুষের চেতনার জিয়নকাঠি! নিরর্থক হয়ে গেলো স্বাধীনতা সংগ্রামের সফলতা, কিংবদন্তী নেতা বঙ্গবন্ধুর অবদান!

আওয়ামী লীগের সমান্তরালে সেই চেতনায় অন্য কোনো রাজনৈতিক দলীয় শক্তির উদ্বভব না হওয়ায় মৌলবাদী শক্তি ও চেতনাকে নস্যাত করার কৌশল নিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ক্রমশ বাধ্য হলো ধর্মীয় লেবাস, উক্তি, ইত্যাদি চালচলনে চলতে! মৌলবাদ বিরোধী শক্তি হিসেবে আমরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকাই নিতে পারলামনা! এখন আওয়ামী লীগকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দায়ি করে তাদের রাজনৈতিক শক্তিকে অবহেলা করার মধ্যে বর্তমানে কোনো বিচক্ষণতা নেই!

এটা এখন দিবালোকের মতো সত্য যে, মৌলবাদ ঠেকাতে হলে যুগপৎ ভাবে আওয়ামী লীগকে নিয়েই বাংলার রাজনীতিতে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে টিকে থাকতে হবে। আওয়ামী শক্তিকে অবহেলার অর্থই হলো বিএনপি-জামাত-শিবির জোটকে ক্ষমতায় আবাহন, যা জাতির জন্য হবে আত্মহননের শামিল।

আওয়ামী লীগ ১৪০ টি সিট পেলেইবা কী হবে, যদি বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায়  যায়! আবার নিরংকুশ জয় যদি আওয়ামী লীগেরও হয় তাতেইবা কি হবে জাতীয় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন, আর এখনইবা হচ্ছে কি! দুদিক থেকেই ভাববার বিষয়!

বিএনপি- জামাত জোটের বেলায় আমরা নিশ্চিত যে এরা পুনরায় আরো দ্বিগুণ মাত্রায় মৌলবাদী তৎপরতায় দেশকে তালেবানী শাসনের দিকে নিয়ে যাবে!

কিন্তু আওয়ামী জোট বিজয় প্রাপ্ত হলে অন্তত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তো ঠেকানো যাবে। অবস্থার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকেই তিনি বুঝতে পারবেন  রাজনীতির কোন কৌশল এরপর প্রয়োজন।

এখনো শেখ হাসিনার বিকল্প খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া কিংবা মির্জা ফখরুল নন।

আর এই দুই শক্তির বিকল্পও ঠিক এখনো নেই!

অতএব, বিএনপি, জামাত জোটের দাবি অনুযায়ী \"নিরপেক্ষ নির্বাচন\"-বিষয়টির পরীক্ষা নিরীক্ষা কতোটা জরুরী,  কতোটা নয়, তা ভেবে দেখার এখনই সময়।

[মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব]

লন্ডন ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মতামত এর আরও খবর

img

করিম চাচার খোলা চিঠি: হর্নের শব্দে ম্লান আমার শেষ বেলার শান্তি!

প্রকাশিত :  ১৩:০১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমার নাম করিম উদ্দিন। বয়স এখন ৮০ ছুই ছুই। শরীরটা আর আগের মতো নেই। হাত-পায়ের জোর আগের চেয়ে কমে গেছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, কানেও ঠিকমতো শুনতে পাই না। তবুও, আমার জীবনটা ভালোই চলে যাচ্ছিল। গ্রামের ছোট্ট বাড়ি, একটু জায়গা জমি, চারপাশে গাছগাছালি—এই নিয়েই আমি থাকি। এ বয়সে এসে মানুষের চাওয়ার আর কী থাকতে পারে? শান্তি। হ্যাঁ, শান্তি-ই তো চেয়েছিলাম। কিন্তু, এ দেশে শান্তিতে মরতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে বড় সন্দেহ!

ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে, তারা এখন শহরে থাকে। কেউ কেউ বিদেশেও থাকে। ওদের সঙ্গে যখন ফোনে কথা হয়, একটাই বিষয় ওরা বারবার বলে—বিদেশে নাকি কেউ রাস্তায় হর্ন বাজায় না। রাস্তায় গাড়ি চলে, কিন্তু সেই গাড়ি যেন শব্দহীন। ওদের কথা শুনে মনে হয়, বিদেশ মানেই যেন এক স্বর্গ! আমি তো জানি না, ওই স্বর্গের আসল চিত্র কেমন। তবে আমার এই ছোট্ট গ্রামে শান্তির ন্যূনতম টুকুও নেই।

গ্রামের রাস্তায় এখন প্রচুর গাড়ি চলে। একটু আগেও যেখানে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতাম, এখন সেখানে বড় বড় বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল দাপিয়ে বেড়ায়। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এই সব গাড়ির চালকরা যেন হর্ন না বাজিয়ে থাকতে পারে না। যেখানে যানবাহনের অল্পই প্রয়োজন, সেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত হর্ন বাজিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করে। হর্নের সেই তীব্র শব্দ আমার বয়স্ক কানে বাজে বুলেটের মতো। হৃদয় যেন থেমে যায় মাঝে মাঝে। মনে হয়, মরার আগেই শান্তি মিলবে না এই দেশে!

ছেলেমেয়েদের বিদেশে যাওয়ার পরে মাঝে মাঝে ওদের সঙ্গে কথা বলি। ওরা বলেছে, বিদেশে কেউ রাস্তায় হর্ন বাজায় না। গাড়ি চলে নিয়ম মেনে, মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়ে। আর আমাদের দেশে? রাস্তায় বেরুলে মনে হয়, মানুষ যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কত জোরে হর্ন বাজাতে পারে। প্রত্যেকটা হর্ন যেন গায়ের মধ্যে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। এ দেশে কি কেউ মানুষের কানের মর্ম বোঝে না? বয়স্ক মানুষদের প্রতি কি কোনো সম্মান নেই?

শহরে তো হর্নের শব্দ সহ্য করার মতো নয়, কিন্তু গ্রামেও এখন এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে শান্তি নেই। রাস্তায় গাড়ি চলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু, হর্নের দরকার কী? ওরা কি জানে না, হর্ন বাজানোর ফলে শুধু আমার মতো বৃদ্ধরাই কষ্ট পায় না, ছোট ছোট বাচ্চারাও ভয় পায়। আমার নাতি-নাতনিরা যখন আসে, ওদের মুখে কান্নার শব্দ শোনা যায়। এত তীব্র শব্দ, বাচ্চাগুলো ভয়ে কুঁকড়ে যায়। আমি ভাবি, এটাই কি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ?

আমার আর কিছুদিনই বাঁচার সম্ভাবনা। মরার আগে একটু শান্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু এ হর্নের আওয়াজ আমার সেই শেষ বেলার শান্তিটুকু কেড়ে নিয়েছে। প্রার্থনা করি, এ দেশের মানুষ যেন কিছুটা সহানুভূতিশীল হয়। হর্নের জন্য অন্যের কষ্টের বিষয়টা যেন তারা বোঝে। মানুষের কান, হৃদয়—এসবও তো সংবেদনশীল। গায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে গেলে যেমন ব্যথা হয়, তেমনি হর্নের তীব্র আওয়াজও আমার মাথার মধ্যে কাঁপুনি ধরে। আমি আর পারি না, বুঝলে!

বিদেশে থাকে এমন কিছু মানুষ আমাকে একবার বলেছিল, ওদের রাস্তায় নাকি আইন খুব কঠিন। কেউ হর্ন বাজালে সাথে সাথেই শাস্তি পায়। ভাবলাম, আমাদের দেশে এমন কোনো নিয়ম হবে না কেন? আমাদের দেশেও তো আইন আছে, কিন্তু কেন মানা হয় না? কোথায় সেই শৃঙ্খলা? শুধু গাড়ির চালকেরাই নয়, সবাই যেন হুটহাট যা খুশি তাই করে বেড়ায়। আইন আছে, কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। আর তার ফল ভোগ করছি আমরা, সাধারণ মানুষ।

আমার শেষ ইচ্ছা শুধু একটাই—এই দেশটা যেন শান্তি পায়। মানুষের মধ্যে মানবিকতা জাগুক। হর্নের আওয়াজে আমি হয়তো আমার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব, কিন্তু আমার মতো যারা বয়স্ক, তাদের কষ্ট যেন আর সহ্য করতে না হয়। তরুণরা যেন এ বিষয়টি নিয়ে ভাবে, এই সমস্যার সমাধান খোঁজে। শুধু বয়স্করাই নয়, এই হর্নের সমস্যা থেকে মুক্তি পেলে শিশুরা নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে। আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ, এসব তো আমাদেরই, তাই আমাদের দায়িত্ব এই দেশটাকে সুন্দর করে তোলা।

এখন হয়তো আমার সময় শেষের দিকে, কিন্তু এই চিঠিটা লিখে রেখে যাচ্ছি তাদের জন্য যারা আমার পরে আসবে। দেশটা এমন হোক, যেখানে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে মানুষকে হর্নের শব্দে কষ্ট পেতে হবে না।

মতামত এর আরও খবর