বাংলাদেশের নির্বাচন এবং নিরপেক্ষতা
একটা নির্লজ্জ প্রচারণা চলছে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ টি সিটও পাবেনা!
না পাক আওয়ামী লীগ ১০ সিট, তা আমিও চাইতাম। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে \"এখন\" আওয়ামী লীগের নৌকার চাইতে বিএনপি-জামাতের ধানের শীষ আর পাল্লা যে অধিক ভোট পাবে তা যে কোনো মুর্খও বুঝতে পারে।
\"উনসত্তর-সত্তর-একাত্তর\" এর পরিবর্তিত সময় তুলনায় কী এই \"এখন\" সু সময়?
বাস্তবতায় কি \"নিরপেক্ষ\" এই সময়কাল!
এমতাবস্থায় কি হবে নিরপেক্ষ নির্বাচনে! বাকি সব আসনে জামাত-শিবির- বিএনপি এবং আরো কিছু মৌলবাদী ইসলামি দলগুলি জয়যুক্ত হবে! সেটাও তো আমরা চাইনা!
উল্লেখিত সংগ্রামী সেই সময়ে দেশের মানুষ ছিলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, সমাজতন্ত্রের পক্ষে, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রের পক্ষে। কিন্তু ১৫ আগস্টের বর্বরতায় রাতারাতিই বদলে যায়নি নিশ্চয়ই গণ মানুষের চেতনা! বিষাক্ত ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী সুযোগ নিয়েছিলো মানুষের সেই অভুতপূর্ব চেতনাকে ভোঁতা করে দেওয়ার। তাদের ধর্মীয় আফিং ক্রমশ এবং দ্রুত ব্যবহারে অধিকাংশ মানুষ হয়ে উঠলো ধর্মীয় মৌলবাদে আসক্ত! সাঈদি, আজহারি, আব্দুর রাজ্জাক, আহমেদ শফি গংদের ওয়াজ হয়ে গেলো বাংলাদেশের আপামর মানুষের চেতনার জিয়নকাঠি! নিরর্থক হয়ে গেলো স্বাধীনতা সংগ্রামের সফলতা, কিংবদন্তী নেতা বঙ্গবন্ধুর অবদান!
আওয়ামী লীগের সমান্তরালে সেই চেতনায় অন্য কোনো রাজনৈতিক দলীয় শক্তির উদ্বভব না হওয়ায় মৌলবাদী শক্তি ও চেতনাকে নস্যাত করার কৌশল নিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ক্রমশ বাধ্য হলো ধর্মীয় লেবাস, উক্তি, ইত্যাদি চালচলনে চলতে! মৌলবাদ বিরোধী শক্তি হিসেবে আমরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকাই নিতে পারলামনা! এখন আওয়ামী লীগকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দায়ি করে তাদের রাজনৈতিক শক্তিকে অবহেলা করার মধ্যে বর্তমানে কোনো বিচক্ষণতা নেই!
এটা এখন দিবালোকের মতো সত্য যে, মৌলবাদ ঠেকাতে হলে যুগপৎ ভাবে আওয়ামী লীগকে নিয়েই বাংলার রাজনীতিতে সমাজতন্ত্রের সংগ্রামে টিকে থাকতে হবে। আওয়ামী শক্তিকে অবহেলার অর্থই হলো বিএনপি-জামাত-শিবির জোটকে ক্ষমতায় আবাহন, যা জাতির জন্য হবে আত্মহননের শামিল।
আওয়ামী লীগ ১৪০ টি সিট পেলেইবা কী হবে, যদি বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় যায়! আবার নিরংকুশ জয় যদি আওয়ামী লীগেরও হয় তাতেইবা কি হবে জাতীয় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন, আর এখনইবা হচ্ছে কি! দুদিক থেকেই ভাববার বিষয়!
বিএনপি- জামাত জোটের বেলায় আমরা নিশ্চিত যে এরা পুনরায় আরো দ্বিগুণ মাত্রায় মৌলবাদী তৎপরতায় দেশকে তালেবানী শাসনের দিকে নিয়ে যাবে!
কিন্তু আওয়ামী জোট বিজয় প্রাপ্ত হলে অন্তত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তো ঠেকানো যাবে। অবস্থার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকেই তিনি বুঝতে পারবেন রাজনীতির কোন কৌশল এরপর প্রয়োজন।
এখনো শেখ হাসিনার বিকল্প খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া কিংবা মির্জা ফখরুল নন।
আর এই দুই শক্তির বিকল্পও ঠিক এখনো নেই!
অতএব, বিএনপি, জামাত জোটের দাবি অনুযায়ী \"নিরপেক্ষ নির্বাচন\"-বিষয়টির পরীক্ষা নিরীক্ষা কতোটা জরুরী, কতোটা নয়, তা ভেবে দেখার এখনই সময়।
[মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব]
লন্ডন ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩