img

আরার চাঁটগা, চট্টলা অথবা চট্টগ্রাম সবিশেষ

প্রকাশিত :  ১৭:৫০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আরার চাঁটগা, চট্টলা অথবা চট্টগ্রাম  সবিশেষ

ছোড ছোড ঢেউ তুলি মাঝি, লুসাই পাহাড় উত্তর নামিয়ার যার গই কর্ণফুলি; প্রখ্যাত গায়িকা শেফালি ঘোষ ও গায়ক শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের সুমধুর কন্ঠে চট্টগ্রামের এ চিরসবুজ আঞ্চলিক গানটি আজ ও মনে দোলা দিয়ে যায়। 

ওরে সাম্পানওয়ালা অথবা ও দুলাভাই আবেগী এ গানগুলোর সৃষ্টি স্থান রুপালি কর্ণফুলীর পাড়ে স্থাপিত বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম বন্দর শহর আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম, চট্টলা বা চাঁটিগা শহরটির গোড়াপত্তন ও এর সমৃদ্ধ স্থাপনা গুলোর অভূতপূর্ব ইতিহাস! চলুন পাঠক ফিরি সেই স্মৃতিমুখরতায়ঃ

চেরাগী পাহাড়ঃ কথিত আছে, আরব দেশ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হয়রত বদর শাহ নামক এক সুফি সাধক মাটির তৈরি একটি চেরাগ/চাঁটি হাতে নিয়ে সমুদ্র পাথরের উপর চড়ে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছান। তখন চট্টগ্রাম ছিল গভীর জঙ্গলে ঢাকা এবং জীনপরীর আবাস স্থল। সুফি বদর শাহ একটি অনুচ্চ পাহাড়ে উঠতে গেলে জীন পরীরা বাধা প্রদান করে এবং থাকার অনুমতি দেয়না। তখন, বদর শাহ রাতের অন্ধকারে হাতের চেরাগটি পাহাড়ে রেখে জ্বালাবার স্থানটুকু দিতে অনুরোধ করলে জ্বিনরা রাজি হয়। কিন্তু, চেরাগ জ্বালাবার পর চেরাগের তেজ সহ্য করতে না পেরে জ্বিনেরা স্থান ত্যাগ করে এবং বদর শাহ সেখানে ইবাদতের স্থান তৈরি করেন। উল্লেখ্য, চেরাগী পাহাড় টি চাটির পাহাড় নামে ও পরিচিত , চাটি অর্থ মৃৎ প্রদীপ। অনেকে ধারণা করেন— এই চাটি শব্দ হতে চাটিগাঁ— চাটগাঁ—চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। বর্তমানে এই চেরাগী পাহাড়ে চেরাগ সদৃশ একটি সুন্দর স্থাপনা নির্মিত আছে।

রেয়াজুদ্দিন বাজারঃ ঐতিহ্যবাহি এই এলাকাটি একসময় ছিল জমিদার দেওয়ান বৈদ্যনাথের বাগানবাড়ি যা সেগুনবাগিচার ঘন ঝাড়ে ভরে থাকত। পরবতীর্তে এই এলাকাটি কিনে নেন চট্টগ্রামের প্রথম মুসলমান বিএ, বিএল শেখ রেয়াজুদ্দীন সিদ্দিকির পিতা শেখ মোঃ ওয়াশীল। শেখ রেয়াজুদ্দিন এই এলাকার প্রভূত উন্নয়ন ঘটালে এটি তাঁর নামে পরিটিত হয়ে উঠে।

ফিরিঙ্গি বাজারঃ ১৬ শতকের শুরুর দিকে চট্টগ্রামে পতুর্গিজ বণিকরা আগমন করে। তারা এদেশে ফিরিঙ্গি নামে খ্যাত ছিল আর এলাকাটি ছিল ফিরিঙ্গি বণিকদের আড়ত।

খাতুনগঞ্জঃ উনবিংশ শতকে চট্টগ্রামের একজন অভিজাত গুণী ব্যাক্তি ছিলেন খান বাহাদুর হামিদউল্লাহ খাঁ। তিনি ফারসি ভাষায় ‘ তারিখে হামিদী‘ শিরোনামে প্রথম চট্টগ্রামের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাঁর ২য় পত্নীর নাম ছিল—খাতুন বিবি। কালক্রমে তাঁর স্ত্রী খাতুন বিবির নামে এই খাতুনগঞ্জ গড়ে উঠে।

রহমতগঞ্জঃ ১৬৯৮ সালে নবাব রহমতউল্লাহ চট্টগ্রামের শাসনকতার্ নিযুক্ত হলে এই স্থান তাঁর নামে পরিচিত হয়ে উঠে। বর্তমানে, জে.এম.সেন হলের উত্তর পাশে তাঁর কবর বিদ্যমান।

কাজীর দেউড়িঃ গৃহিনীদের অন্যতম প্রিয় পছন্দের বাজার হিসেবে পরিচিত এলাকাটি কাজী মির আবদুল গণির নামানুসারে খ্যাত। ১৮ শতকের গোড়ার দিকে তিনি দিল্লী গিয়ে সেসময়কার মোঘল স¤্রাটের কাছ হতে চট্টগ্রামের কাজী (বিচারক)’র দায়িত্ব লাভ করেন এবং বর্তমান আন্তর্জাতিক চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের পূর্বদিকে নিজ বাড়ি ও মসজিদ স্থাপন করেন। সরগরম বাজারের পাশেই আছে স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ, প্রয়াত সাহিত্যিক মাহবুবুল আলম সড়ক, লড়াকু যোদ্ধাদের মিলনস্থল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস , চট্টলার প্রথম বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘বর্ণক’ আর ভোজনরসিকদের প্রিয় খাবার দুর্গ। 

চন্দপুরাঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত আগরকাঠ প্রাচীনকাল হতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজযোগে ইউরোপে রপ্তানি হত যা সেকালে চন্দনকাঠ নামে খ্যাত ছিল। বর্তমান চন্দনপুরা ছিল এসব চন্দনকাঠের গোলাঘর বা মজুতস্থান।

পার্সিভাল হিলঃ ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ আর জনসভার জন্য আলোচিত প্যারেড গ্রাউন্ডের সন্নিকটে এক উঁচু পাহাড়ে ‘ব্রেডন পার্সিভাল‘ নামের এক পতুর্গিজ বাসিন্দা সপরিবারে বসবাস করার জন্য বাড়ি তৈরি করেন। এই পার্সিভাল পরিবারের একাধিক সদস্য পরবতীর্তে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী ছিলেন। দেশসেরা কলেজিয়েট স্কুলে ও শিক্ষকতার মহান পেশায় নিযুক্ত ছিল কেউ কেউ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারের শেষ পুরুষটি লন্ডনবাসী হিসেবে থিতু গাড়েন।

দেবপাহাড়ঃ ব্রিটিশ সরকার শরচ্চন্দ্র দাস নামের এক ব্যক্তির কাজে খুশি হয়ে তাঁকে পুরষ্কারস্বরুপ জয়নামা বা জাঁহানুমা পাহাড়টি প্রদান করেন। শরচ্চন্দ্র ঐ পাহাড়শীর্ষে একটি দেবমন্দির নিমার্ণ করে নাম দেন দেবপাহাড়।

টাইগার পাসঃ কাকচক্ষু দুরত্বে লালচে দালানের বাংলাদেশ রেলওয়ের স্থাপনা। দু’ পাশে উঁচু পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে এ রাস্তাটি সোজা চলে গেছে সমুদ্রে। ১৮৬২ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত ব্রিটিশ সিভিলিয়ান মিস্টার ক্লের আত্নজীবনী হতে জানা যায় — এখানে নিয়মিত বাঘের আক্রমনে লোকে প্রাণ হারাত। এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ে এই রাস্তা ধরে বাঘ চলাচল করতো বলে এটি টাইগার পাস নামে খ্যাত। স্মৃতির স্মারক হিসেবে এখানে একটি বাঘের মূর্তি স্থাপিত হয়েছে।

ওয়ার সিমেট্রিঃ চট্টেশ্বরী রোডের ওয়ার সিমেট্রি , চোখ জঁুড়ানো সবুজ আর নান্দনিক স্থাপনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্নত্যাগী শহীদদের কথাই বারংবার স্মরণ করিয়ে দেয়। পাশেই অবস্থিত ঘন জঙ্গলাবৃত বাঘভ্যালি/বাঘ উপত্যকা।

লালদীঘিঃ রাজনৈতিক জনসভার জন্য আলোচিত স্থানটি। বর্তমান চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে ইংরেজ আমলে শুরুর দিকে একটি পাকা ভবন ছিল যেটির দেওয়ালে লাল রঙ্গ দেওয়া হয়েছিল যা লালকুঠি নামে পরিচিত ছিল। লালকুঠির কাছের দিঘীটি পরে লালদীঘি নামে বিখ্যাত হয়ে উঠে এবং এখানেই প্রতিটি বাংলা নববর্ষ সেই জব্বারের বলি খেলার দর্শকে মশগুল থাকে।

আন্দরকিল্লাঃ আরকানি আমলে এখানে প্রাচীন দুর্গ ছিল—ু চাঁটিগা দুর্গ। ১৬৬৬ সালে মোগল বাহিনী আরকানি বাহিনীকে পরাজিত করে এই দুর্গ দখল করলে প্রধান সেনাপতি উমেদ খাঁ এই দুর্গের নাম দেন আন্দরকিল্লা। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, মক্কী মসজিদ, অলি খাঁ মসজিদ সহ ১৩২ বছর আগে নির্মিত পি.কে.সেন.ভবন সহ নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা ইতিহাসের সেই অদ্ভুত দিনগুলোরই স্মারক।

পাথরঘাটাঃ প্রবাদ আছে, পীর বদর শাহ আরব দেশ হতে সমুদ্রপথে একটি পাথরের উপর সওয়ার হয়ে চট্টগ্রাম আসেন এবং সেই পাথরখানি কর্ণফুলী নদীর তীরবতীর্ একটি স্থানে থামার পর তিনি তীরে উঠে আসেন। পাথরঘাটা নামের প্রচলন, সাথে বিখ্যাত নিউমার্কেটের মনোহর পশরা একটু দূরে, বোস ব্রাদাসের রসে টইটম্বুর স্পঞ্জ রসগোল্লা আর পুরনো হিন্দু ও খ্রিস্টান ধমার্বলম্বীদের এক সুন্দর সহাবস্থান।

হাজারি লেনঃ আন্দরকিল্লার মধ্যস্থিত এই গলিতে বারজন মোগল হাজারি বা সেনাপতির অন্যতম ভগবান সিং হাজারির বাড়ি ছিল।

মেহেদিবাগঃ চৌরাস্তার মোড় যেখান হতে নয়নাভিরাম ফয়েজ লেক আর দিগন্ত বিস্তৃত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত যাওয়ার পথ শুরু সেই জি.এস.সি মোড় ফেলে গোল পাহাড় চত্বর আর অনতিদূরেই মেহেদীগাছের আধিক্যে ভরা মেহেদীবাগ।

চকবাজারঃ পূর্ব নাম সদরবাজার। চট্টগ্রামের ১৮তম মোগল শাসক নবাব অলি বেগ খাঁ নাম পরিবর্তন করে চকবাজার রাখেন যার মাধ্যমে শহরটির গোড়াপত্তন হয়।

কাপাসগোলাঃ কাপার্স শব্দের বিকৃত রুপ, কাপাস। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্ত কাপার্স তুলার গুদামঘরের নামে নামাঙ্কিত। বর্তমানে, বষার্য় ডুবন্ত চাঁটগার ভাসমান বাকি এলাকাগুলো আশে—পাশেই অবস্থিত—কাতালগঞ্জ,পাঁচলাইশ কিংবা কাঠবাদামের গাছে সহ¯্র বাদুড়ের চিৎকারঃ কুমিল্লার মত বাদুরতলা নামেই পরিচিত এলাকাটি। 

হালিশহরঃ আরবি হাওয়ালে শহর হতে উদ্ভুত —অর্থ শহরতলি। চটগ্রাম বন্দরের পার্শ্ববতীর্ জায়গাটি আরব বণিকদের সাময়িক বসবাসের স্থান হলে ও আজ তা সমুদ্রপথের কান্ডারিদের/ মেরিনারদের অন্যতম আশ্রয়স্থল।

সুলকবহরঃ আরব বণিকদের প্রাচীন নৌবাণিজ্যের যুগে কর্ণফুলী নদীর যে স্থানটিতে বাণিজ্যতরী খঁুটি গাড়ত তা সুলকুল বহর বা বিরতি স্থান বা পোতাশ্রয় নামে পরিচিত ছিল। যা কালের বির্বতনে সুলকবহর নামে পরিচিতি পেয়েছে। পাশেই রয়েছে ষোলশহর,যা চাহেলে শহর বা নদী তীরবতীর্ শহর বলে খ্যাত।

চোখ জঁুড়ানো সবুজ , একপাশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার আর পীর মুর্শিদের শহর চাঁটগার লাভলেইনের মজাদার পান, আলকরণের পুরনো গন্ডারের শিং, মোগল মুসলমান সেনাদলের আখড়া এনায়েতবাজার, সেই ব্যাটারি গলি,অভিজাত খুলশি (জনবিরল),নাসিরাবাদ কিংবা বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ—আঁরা চাঁইগাইয়া নওজোয়ান অনোরারে আমন্ত্রণ।।

(সূত্রঃ চট্টগ্রামের ইতিহাসঃ ওহীদুল আলম,ব ন্দর শহর চট্টগ্রামঃ আবদুল হক চৌধুরী)

নুজহাত নূর সাদিয়া,

১২ই সেপ্টেমবর, ২০২৩ ইংরেজি।



img

বাংলাদেশ: শান্তি ও সম্ভাবনার ঠিকানা

প্রকাশিত :  ১৯:১৬, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রেজুয়ান আহম্মেদ

জীবনের প্রয়োজনে, কাজের তাগিদে নানা দেশে ঘুরতে হয়েছে আমাকে— কখনো কর্মসূত্রে, কখনো নতুন কিছু শেখার তাগিদে, কখনো আবার উন্নত জীবনের হাতছানিতে। প্যারিসের ঝলমলে সন্ধ্যা দেখেছি, নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে বিস্মিত হয়েছি, দুবাইয়ের মরুপ্রান্তরে ভবিষ্যতের শহর গড়ে ওঠা দেখেছি। কিন্তু দিনের শেষে, যখন একটু প্রশান্তির জন্য মন আকুল হয়েছে, তখন বুঝেছি— আমার আসল ঠিকানা একটাই, আমার বাংলাদেশ!

বিদেশের শহরগুলো নিঃসন্দেহে সাজানো-গোছানো, আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ। কিন্তু সেখানকার ব্যস্ততা মানুষকে যেন যন্ত্রে পরিণত করে দেয়। কেউ কারও খোঁজ রাখে না, পাশের ফ্ল্যাটের মানুষও বছরের পর বছর অপরিচিত থেকে যায়। কাজের চাপে হাসির সময় নেই, আত্মীয়তার বন্ধনগুলো যেন শেকড়ছেঁড়া গাছের মতো শুকিয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশ! এখানেই সকালবেলা চায়ের দোকানে পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হয়, বিকেলে পাড়ার আড্ডায় হাসির রোল ওঠে, সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করে। জীবন এখানে এখনো সহজ, হৃদয়ের বন্ধনগুলো এখনো অটুট।

বিদেশে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে— অর্থ উপার্জনই কি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য? বিশাল বেতনের চাকরি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি— এগুলোর মোহ শুরুতে থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি হয়, আসল সুখ অন্য কোথাও।

বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এখনো সকালে ঘুম ভাঙে পাখির কিচিরমিচিরে। শীতের ভোরে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটার যে প্রশান্তি, তা বিশ্বের কোনো উন্নত শহর দিতে পারে না। শহরের ব্যস্ত জীবনেও মানুষ এখনো একে অপরের খোঁজ রাখে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ায়। এমন সম্পর্কের উষ্ণতা কি অন্য কোথাও পাওয়া যায়?

বিদেশে যখন হুট করে বৃষ্টি নামে, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে মনে পড়ে আমার দেশের বর্ষা! আকাশজুড়ে কালো মেঘের খেলা, টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ, ভেজা বাতাসের স্নিগ্ধ ছোঁয়া— এসব বিদেশে পাওয়া সম্ভব নয়।

অনেকে ভাবে, উন্নতির জন্য বিদেশে যেতেই হবে। সত্যিই কি তাই? বাংলাদেশেই এখন অগণিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, স্টার্টআপ— সবখানেই বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাচ্ছে।

একসময় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম, আর এখন? বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উদগ্রীব। কারণ আমাদের দেশ দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্য, শিল্প— সবখানেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

বিদেশে গিয়ে কেউ হয়তো কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন, কিন্তু সেই টাকা দেশে পাঠানোর পরও সেখানে জীবনযাপন করা সহজ হয় না। অথচ, একই পরিশ্রম যদি বাংলাদেশেই করা যায়, তাহলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানো সম্ভব।

বিদেশের চাকরির নিয়মকানুন এত কঠোর যে ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা প্রায় থাকে না বললেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ আছে, উদ্যোক্তা হয়ে কিছু গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে।

অনেকে ভাবে, বিদেশ মানেই বেশি আয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বাংলাদেশেই সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করলে তার চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব। দেশের বাজার ক্রমশ বড় হচ্ছে, মানুষের চাহিদা বাড়ছে, নতুন নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাহলে কেন আমরা নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে ছুটব?

পৃথিবীর যত দেশেই যাই না কেন, দিনের শেষে মনে হয়— বাংলাদেশই আমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন। শুধু অর্থের জন্য, উন্নতির জন্য, স্বপ্ন পূরণের জন্য বিদেশে যেতে হবে— এই ধারণা বদলানোর সময় এসেছে। আমাদের দেশেই সব সুযোগ আছে, আছে শান্তি, আছে ভালোবাসা।

আমি বহু দেশে ঘুরেছি, নানা সংস্কৃতি দেখেছি, আধুনিক জীবনের স্বাদ পেয়েছি। কিন্তু কোথাও বাংলাদেশের মতো প্রাণের উচ্ছ্বাস পাইনি, পাইনি মাটির টান। তাই বারবার ফিরে আসতে চাই এই পরিচিত আকাশের নিচে, আমার গ্রামবাংলার সবুজ মাটিতে, আমার শহরের কোলাহলে। কারণ, এটাই আমার চিরন্তন ঠিকানা।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর