উখিয়ার ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২ রোহিঙ্গা নিহত
প্রকাশিত :
০৭:৪২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিবদমান সশস্ত্র দু গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় ৬ নম্বর ক্যাম্পের ২ নম্বর পাহাড়ের খেলার মাঠে এ ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইন চার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন নিহতারা হলেন নুর মোহাম্মদ (১৭), পিতা - মৃত গফুর আহমদ, মাতা- সাবেকুন্নাহার এফসিএন-১২৮২৯৭, ক্যাম্প-২/ইস্ট, ব্লক- ডি ও সামসু আলম (২৩), পিতা- আহমেদ হোসেন, এফসিএন- ১১৭৬৬৭, - ব্লক-সি/ ক্যাম্প ৭।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে , ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ২ নম্বর পাহাড়ের খেলার মাঠে এসে বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে। গুলিতে রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ ঘটনাস্থলে মারা যায়। গুরুতর আহত সামশুল আলমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে ।
বর্তমানে ঘটনাস্থলে এপিবিএন পুলিশ ও জেলা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
জীবনের প্রয়োজনে, কাজের তাগিদে নানা দেশে ঘুরতে হয়েছে আমাকে— কখনো কর্মসূত্রে, কখনো নতুন কিছু শেখার তাগিদে, কখনো আবার উন্নত জীবনের হাতছানিতে। প্যারিসের ঝলমলে সন্ধ্যা দেখেছি, নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে বিস্মিত হয়েছি, দুবাইয়ের মরুপ্রান্তরে ভবিষ্যতের শহর গড়ে ওঠা দেখেছি। কিন্তু দিনের শেষে, যখন একটু প্রশান্তির জন্য মন আকুল হয়েছে, তখন বুঝেছি— আমার আসল ঠিকানা একটাই, আমার বাংলাদেশ!
বিদেশের শহরগুলো নিঃসন্দেহে সাজানো-গোছানো, আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ। কিন্তু সেখানকার ব্যস্ততা মানুষকে যেন যন্ত্রে পরিণত করে দেয়। কেউ কারও খোঁজ রাখে না, পাশের ফ্ল্যাটের মানুষও বছরের পর বছর অপরিচিত থেকে যায়। কাজের চাপে হাসির সময় নেই, আত্মীয়তার বন্ধনগুলো যেন শেকড়ছেঁড়া গাছের মতো শুকিয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশ! এখানেই সকালবেলা চায়ের দোকানে পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হয়, বিকেলে পাড়ার আড্ডায় হাসির রোল ওঠে, সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করে। জীবন এখানে এখনো সহজ, হৃদয়ের বন্ধনগুলো এখনো অটুট।
বিদেশে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে— অর্থ উপার্জনই কি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য? বিশাল বেতনের চাকরি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি— এগুলোর মোহ শুরুতে থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি হয়, আসল সুখ অন্য কোথাও।
বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এখনো সকালে ঘুম ভাঙে পাখির কিচিরমিচিরে। শীতের ভোরে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটার যে প্রশান্তি, তা বিশ্বের কোনো উন্নত শহর দিতে পারে না। শহরের ব্যস্ত জীবনেও মানুষ এখনো একে অপরের খোঁজ রাখে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ায়। এমন সম্পর্কের উষ্ণতা কি অন্য কোথাও পাওয়া যায়?
বিদেশে যখন হুট করে বৃষ্টি নামে, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে মনে পড়ে আমার দেশের বর্ষা! আকাশজুড়ে কালো মেঘের খেলা, টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ, ভেজা বাতাসের স্নিগ্ধ ছোঁয়া— এসব বিদেশে পাওয়া সম্ভব নয়।
অনেকে ভাবে, উন্নতির জন্য বিদেশে যেতেই হবে। সত্যিই কি তাই? বাংলাদেশেই এখন অগণিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, স্টার্টআপ— সবখানেই বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাচ্ছে।
একসময় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম, আর এখন? বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উদগ্রীব। কারণ আমাদের দেশ দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্য, শিল্প— সবখানেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
বিদেশে গিয়ে কেউ হয়তো কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন, কিন্তু সেই টাকা দেশে পাঠানোর পরও সেখানে জীবনযাপন করা সহজ হয় না। অথচ, একই পরিশ্রম যদি বাংলাদেশেই করা যায়, তাহলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানো সম্ভব।
বিদেশের চাকরির নিয়মকানুন এত কঠোর যে ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা প্রায় থাকে না বললেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ আছে, উদ্যোক্তা হয়ে কিছু গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে।
অনেকে ভাবে, বিদেশ মানেই বেশি আয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বাংলাদেশেই সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করলে তার চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব। দেশের বাজার ক্রমশ বড় হচ্ছে, মানুষের চাহিদা বাড়ছে, নতুন নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাহলে কেন আমরা নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে ছুটব?
পৃথিবীর যত দেশেই যাই না কেন, দিনের শেষে মনে হয়— বাংলাদেশই আমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন। শুধু অর্থের জন্য, উন্নতির জন্য, স্বপ্ন পূরণের জন্য বিদেশে যেতে হবে— এই ধারণা বদলানোর সময় এসেছে। আমাদের দেশেই সব সুযোগ আছে, আছে শান্তি, আছে ভালোবাসা।
আমি বহু দেশে ঘুরেছি, নানা সংস্কৃতি দেখেছি, আধুনিক জীবনের স্বাদ পেয়েছি। কিন্তু কোথাও বাংলাদেশের মতো প্রাণের উচ্ছ্বাস পাইনি, পাইনি মাটির টান। তাই বারবার ফিরে আসতে চাই এই পরিচিত আকাশের নিচে, আমার গ্রামবাংলার সবুজ মাটিতে, আমার শহরের কোলাহলে। কারণ, এটাই আমার চিরন্তন ঠিকানা।
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম