মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের লেখক এবং ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বড় বোন গীতা মেহতা আর নেই। শনিবার ভারতের রাজধানী দিল্লির বাসভবনে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
৮০ বছর বয়সী গীতা মেহতা মৃত্যুকালে তার ছেলেকে রেখে গেছেন। আর তার প্রকাশক স্বামী সনি মেহতা আগেই মারা গেছেন। বিশিষ্ট লেখক, তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং সাংবাদিক গীতা মেহতা ছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এবং ব্যবসায়ী প্রেম পট্টনায়কের বড় বোন।
১৯৪৩ সালে বিজু পট্টনায়ক ও জ্ঞান পট্টনায়কের কোল আলো করে দিল্লিতে জন্ম হয়েছিল গীতার।
ভারতের পড়াশোনা শেষ করে ইউকের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেল নিজের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন গীতা। তাঁর লেখা একাধিক গ্রন্থ ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ‘কর্ম কোলা’, \'স্নেক\',\'ল্যাডার\', \'এ রিভার সূত্র\', \'দ্য ইটারনাল গণেশা\' এমন বহু ধরনের বই তিনি লিখেছেন।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা আইএএনএস বলছে, গীতা মেহতা ১৯৭০-৭১ সালে আমেরিকান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন।
আর তার সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তার বহুল প্রশংসিত তথ্যচিত্র ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ’-এ বর্ণনা করেছেন।
এদিকে, গীতা মেহতার প্রয়াণে শোকের ছায়া ভারতের সব মহলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গীতা মেহতার প্রয়াণে শোক বার্তা পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রধানমন্ত্রী লেখেন, \'শোকাহত\'।
নিজের শোকবার্তায় মোদি লেখেন, ‘তিনি একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তার বুদ্ধিমত্তা এবং লেখালেখির পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি আগ্রহের জন্য পরিচিত। তিনি প্রকৃতি এবং পানি সংরক্ষণ সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন।’
ঈদ যখন কাঁদে অভাবের কাছে: উৎসবের আলো আর অন্ধকারের গল্প
প্রকাশিত :
০৫:৩০, ০৮ জুন ২০২৫
ঈদের নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট ছোট শিশুর হাসিমাখা মুখ, নতুন জামার রঙ, বাজারের কোলাহল, সুগন্ধে ভরা রান্নাঘর আর পরিবারজুড়ে ভালোবাসার উষ্ণতা। মনে হয়, এ যেন এক মিলনের উৎসব, ভালোবাসার উৎসব—মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর এক মহা-উপলক্ষ।
কিন্তু একটু ভাবুন—এই উৎসব কি সবার জন্য একই রকম আনন্দ বয়ে আনে?
ঈদের পেছনের সেই নিঃশব্দ কান্না
আমরা অনেকেই ঈদের আগে বাজারে যাই, জামাকাপড় কিনি, খাবারদাবারে ঘর সাজাই, ছবি তুলে পোস্ট দিই—সবই স্বাভাবিক আনন্দের অংশ। কিন্তু আমাদের আশপাশেই এমন অনেক পরিবার আছে, যারা ঈদের আগের রাতে জানে না, পরদিন সকালে তাদের শিশুটি আদৌ কিছু খেতে পাবে কি না।
তারা ফেসবুকে অন্যদের ছবিতে ঈদের রঙ দেখে, ছেলেমেয়েদের হাসিমুখ দেখে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঈদের আমেজটা গায়ে মাখার চেষ্টা করে—কিন্তু মনে মনে ভেঙে পড়ে।
একজন মা যখন সন্তানের নতুন জামার আবদার শুনে চুপ করে থাকেন, চোখের জল আড়াল করতে রান্নাঘরে চলে যান—তখন ঈদের আনন্দ তার কাছে হয়ে ওঠে এক অদৃশ্য বোঝা।
তিনি বলেন, “কাল পাবে বাবা, কাল পাবে”—এই ‘কাল’ যে কবে আসবে, তিনি নিজেও জানেন না। তবু সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করাটাই যেন তার ঈদের একমাত্র প্রস্তুতি।
রিকশাচালক বাবার সন্ধ্যা
রিকশা চালানো মানুষটি ঈদের দিনেও রাস্তায় থাকেন—কারণ এই দিনটিতে একটু বেশি উপার্জনের সম্ভাবনা থাকে। সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফেরেন ক্লান্ত শরীরে, পকেট ফাঁকা, মুখে নিঃশব্দ বিষণ্ণতা।
বাচ্চা জিজ্ঞাসা করে, “বাবা, আমার জামা কই?”
তিনি মাথা নিচু করে বলেন, “এইবার না, পরেরবার।”
এই কথাটি বলার সময় তার বুকের ভেতর যে ঝড় বয়ে যায়—তা কেউ দেখে না, কেউ বোঝেও না।
শিশুর চোখে ঈদের রংহীনতা
ঈদ তো শিশুদের আনন্দের দিন—এমনটাই শুনে বড় হয় তারা। কিন্তু যেসব শিশু নতুন জামা পায় না, খেলনা পায় না, পেট ভরে খেতে পায় না—তারা কেমন করে ঈদ উদযাপন করে?
তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঈদ দেখে। এক ধরনের ঈর্ষা, অপমান আর অক্ষমতা মিশে তৈরি হয় তাদের জীবনের প্রথম ঈদের শিক্ষা—“ঈদ সবার জন্য নয়।”
এই শিক্ষা একটি শিশুকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাদের হৃদয়ে জন্ম নেয় অভিমান, সমাজব্যবস্থার প্রতি রাগ, ঈদের প্রতি ঘৃণা।
ঈদের আসল পাঠ—কোথায় হারিয়ে গেল?
ঈদের মূল শিক্ষা ছিল সহমর্মিতা, সমতা ও ভালোবাসা। কিন্তু আজকাল এই শিক্ষা অনেক সময় ফেসবুক পোস্ট আর ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। যাকাত-সদকা অনেকটাই লোক দেখানো কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।
আসলে, একটি দরিদ্র শিশুকে জামা কিনে দেওয়া কোনো দয়া নয়—এটা তার ন্যায্য প্রাপ্য। একজন রিকশাচালককে ঈদের দিনে এক প্যাকেট বিরিয়ানি দেওয়া সহানুভূতি নয়, বরং ন্যূনতম মানবিক দায়িত্ব পালন।
হাজার টাকায় ফিরতে পারে একটি ঈদ
আপনার ঈদের খরচ যদি পঞ্চাশ হাজার টাকা হয়, তার মধ্যে মাত্র এক হাজার টাকা ব্যয় করলেই একটি পরিবারের মুখে ঈদের হাসি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
একটা জামা, একজোড়া জুতো, এক প্লেট বিরিয়ানি—এগুলো কোনো বিলাসিতা নয়। সামান্য সদিচ্ছা থাকলেই এই ছোট ছোট উপহারগুলো বহু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারে।
ঈদ সবার হোক—তবেই পূর্ণতা
আমরা চাই না সবাই সমাজবিপ্লবী হোক। শুধু চাই—আপনার পাশের দরিদ্র শিশুটির জন্য একটি জামা কিনে দিন। রাস্তার সেই বৃদ্ধ মায়ের হাতে এক প্যাকেট মিষ্টি তুলে দিন।
এই ছোট ছোট ভালোবাসার কাজগুলোই ঈদকে সত্যিকার অর্থে সবার করে তোলে।
রাষ্ট্র কি পারত না পাশে দাঁড়াতে?
একটি রাষ্ট্র চাইলে ঈদের দিনে কোনো পরিবার না খেয়ে থাকবে না—এটা নিশ্চিত করা কঠিন কিছু নয়। ঈদের সময় একটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি চালু করে দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া যেত—এটা হতে পারত এক নতুন দৃষ্টান্ত।
সরকারি খাদ্য সহায়তা, জামা বিতরণ, শিশুবান্ধব উপহার কার্যক্রম—এসব শুরু হলে ঈদ আর কারো জন্য অন্ধকার হয়ে থাকত না।
ঈদ হোক ভালোবাসার নাম
আমরা যতই বলি ঈদ মানে আনন্দ, ততদিন তা খালি বুলি হিসেবেই থাকবে—যতদিন না আমরা সেই আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতে শিখি।
এই ঈদে আসুন আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিই—একটি মুখে হাসি ফোটাব, একটি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে বলব: “তোমরা একা নও।”
এই ছোট ছোট ভালোবাসার স্পর্শগুলোই ঈদকে ঈদ বানায়। নামাজ শেষে কোলাকুলি করার আগে যদি একটু ভাবি—আমার চারপাশে কেউ কি আজও না খেয়ে আছে? কারো সন্তানের মুখ কি আজও শুকনো?
কারণ ঈদ শুধু নামাজের উৎসব নয়। ঈদ হলো হৃদয়ের উৎসব—যেখানে সকল শ্রেণি, সকল মানুষ একসাথে বলে, “আমরা একসাথে।”
ঈদ হোক সেই ভালোবাসার গল্প—যা শুরু হয় একজন মানুষের হাসি দিয়ে, আর ছড়িয়ে পড়ে হাজারো হৃদয়ে।