খালেদা জিয়া রাজার হালতে আছেন: যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোর্ট অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে আমাদের আপত্তি নাই। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে তার বোনের কান্নাকাটিতে সাজা স্থগিত করে আমি বিশেষ ক্ষমতায় তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন দাবী তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে চিকিৎসার জন্য। উনি তো রাজার হালতে আছেন।
বিএনপি ইলেকশন নয়, ইলেকশন বাণিজ্য চায় ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নমিনেশন একটা যায় লন্ডন থেকে, একটা গুলশান থেকে, আরেকটা যায় পল্টন অফিস থেকে। তিনি সিলেটের ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও চট্টগ্রামের মোরশেদ খানকে টাকার জন্য নমিনেশন না দেয়ার ঘটনার উল্লেখ করে বলেন ইলেকশন তো নয়, তারা ইলেকশন বাণিজ্য চায়।
সোমবার (১ অক্টোবর) যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের আয়োজনে লন্ডনের মেথড্রিস্ট সেন্ট্রাল হলে, যুক্তরাজ্যে সফররত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।
গৌরী চৌধুরীর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর কোরান থেকে তেলাওয়াত, গীতাপাঠ, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। ২০০৭ সালে প্রবাসীরা যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তার সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সমস্ত সংস্কার করেছে।
তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা স্বচ্ছ ব্যালট বক্স চালু করেছে এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে।
প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন, পাশাপাশি প্রবাসীরা যাতে পাসপোর্ট দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন সেই ব্যবস্থা ও করা হয়েছে বলে জানান। হুন্ডি প্রতিরোধে অনলাইন ব্যাংকিং এর কথা উল্লেখ করে বলেন এখন বিদেশে বসেই আপনারা নিজেদের একাউন্টে লেনদেন করতে পারবেন।।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে তারা বলত দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যায় না। আর বঙ্গবন্ধু বলতেন, ভিক্ষুক জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু অর্থনীতির চাকা মাত্র সচল করেছিলেন, কিন্তু মাত্র তিন বিছর ৩ মাসের মাথায় সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে সেই যাত্রাকে থামিয়ে দেয়, বঙ্গবন্ধু সময় পেলে স্বাধীনতার ১০ বছরেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করে যেতেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর সংবিধানকে লঙ্ঘন করে হাজার হাজার মানুষ কে গুম খুন করে রাষ্ট্র চালিয়েছিলো জোর করে ক্ষমতায় আসা স্বৈরশাসকরা।
তিনি বলেন, আমি সারাদেশে ঘুরে বেরিয়েছি, গুলি বোমা সহ বারবার আমাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে আমি থেমে যাইনি। আমি তো ভয় পাওয়ার লোক না মৃত্যুকে ভয় পাইনা। আমি শেখ মুজিবের কন্যা, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জাতির পিতার হত্যাকারী কর্নেল রশীদ আর হুদাকে বসিয়েছিল বিরোধীর আসনে। ভোট চোর দের জনগণ মেনে নেয় না। সেই প্রহসনমূলক নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। যারা ভোট চোর তারাই এখন ভোট নিয়ে কথা বলা, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না। তারা তখন মোট ৩০টি আসন পেয়েছিল। জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে বলেই আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছি। খালেদা জিয়া শুধু ধ্বংস জানেন, যেখানে যা ছিল শুধু ধ্বংস করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস করছে, আন্দোলনের নামে আর যদি দেশের মানুষের উপর অত্যাচার করে তবে ওদের ছাড় নাই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ইতিহাস বিকৃত করে ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিয়েছিল অস্ত্র আর ড্রাগ।আমরা বাংলাদেশের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি কখনো হারতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির বাজেট ছিল ৬২ হাজার কোটি টাকা। ৭ লক্ষ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছি আমরা। ইউক্রেন যুদ্ধ, কোবিড, স্যাংশন সব মোকাবেলা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কথা দিয়েছিলাম, সব ঘর আলোকিত করে দিয়েছি, দেশ আজ শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব কথা দিয়েছিলাম, গড়েছি। দেশের মানুষ যেন সুস্থ থাকে, বহু ধনী দেশ কোবিড ভ্যাক্সিন দিতে পারে নাই কিন্তু আমরা পেরেছি। দেশে গিয়ে কর্ণফুলী ট্যানেল বিমান বন্দর টার্মিনালসহ যে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করা হবে তার বিবরণ দেন তিনি।
তিনি বলেন, মুজিবের বাংলায় কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়- প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করে আপনি যা পারেন তা উৎপাদন করেন। আমরা ২০২৬ সাল থেকে উন্নত দেশের তালিকায় প্রবেশ করব, অনেক সুবিধা যেমন আছে তেমনি নানা চ্যালেঞ্জ ও আছে। তবে চ্যালেঞ্জ আমরা ভয় পাই না।
আমেরিকার স্যাংশন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কথায় কথায় স্যাংশন, কে কাকে স্যাংশন দেয় বুঝি না, যে র্যাব তাদের তৈরি, সেই র্যাব দিয়ে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন করেছি, তারা কি তাহলে চায় দেশে জঙিবাদ, সন্ত্রাস থাকুক? তাই স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামানোর কিচ্ছু নাই। দেশ আমাদের, আমাদের দেশ আমরা গড়ে তুলব। স্যাংশন আমরা ও দিতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের তৈরি ডিজিটাল দেশে, তারেক রহমান লন্ডনে বসে ডিজিটাল আন্দোলন করে। বাধা দেই না, করুক, লোকজন কিছু টাকা পয়সা পায়, কিছু খরচ হউক, পাচার করা টাকা তো কিছু দেশে অন্তত ফেরত গেল।
তবে যদি সাধারণ মানুষের গাঁয়ে হাত দেয় তবে ছাড় দিব না।
অনেকেই বলেন মানবিক হতে, ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট, ২০০৪ গ্রেনেড হামলা, শেখ রেহানার বাড়িটিকে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে পরিণত করা, যা তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে পেয়েছিলেন এবং তা বিএনপি সরকারের দখল নেয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেবার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে। যাকে জিয়াউর রহমান ঘরে তুলতে চায়নি, প্রতিদিন আমাদের বাসায় গিয়ে মোড়ায় বসে থাকত, সেই যখন আমাকে অপমান করে, আমি জানি না অন্য কোন প্রধানমন্ত্রী হলে কি করত।
তারেক জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন মায়ের প্রতি দরদ থাকলে তো ছেলে দেশে যেত। এখানে সে আয়েশ করে পায়েস খাচ্ছে। আর কত সহানুভূতি দেখাব। আইন তার আপন গতিতে চলবে।