img

কানাডা ইস্যু : সত্যিই কি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেবে আমেরিকা?

প্রকাশিত :  ০৯:৪১, ০৭ অক্টোবর ২০২৩

কানাডা ইস্যু : সত্যিই কি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেবে আমেরিকা?

সম্প্রতি কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে ভারতের। মূলত কানাডায় বসবাসকারী খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা নিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত বলে অভিযোগ কানাডার। তবে ভারত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এরই মধ্যে এই উত্তেজনা ব্যাপক প্রভাব ফেলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে। পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা হিসেবে উভয় দেশ কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। কানাডাও নিজ নাগরিকদের জন্য ভারতে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। স্থগিত করেছে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা। সবশেষ পদক্ষেপ হিসেবে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে আরো ৪১ কূটনীতিক সরিয়ে নিতে কানাডাকে নির্দেশ দিয়েছে ভারত।

এদিকে, এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় উঠে এসেছে কানাডার ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গ। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, খালিস্তানি ইস্যুকে কেন্দ্র ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে পারে আমেরিকা।

নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি এমন আভাস দিয়েছেন বলে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত নয়াদিল্লিতে তার সহকর্মীদের বলেছেন- ওয়াশিংটন নয়াদিল্লির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে পারে এবং সে ঘটনা ‘নিকট ভবিষ্যতেই’ ঘটবে।

এমন সময় ওই মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ বললেন যখন হোয়াইট হাউজ গত মঙ্গলবার বলেছিল, নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার যে অভিযোগ কানাডা করেছে তা ‘গুরুতর’ এবং তা খতিয়ে দেখা দরকার। অবশ্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন, দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আগের মতোই শক্তিশালী থাকবে। তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বচূড়ায় অবস্থান করছে।”

এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত গারসেটির বরাত দিয়ে পলিটিকো যে খবর দিয়েছে তা অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাস। 

দূতাবাসের একজন মুখপাত্রের কাছে ওই রিপোর্টের সত্যতা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “মার্কিন দূতাবাস এ ধরনের রিপোর্ট অস্বীকার করছে। রাষ্ট্রদূত গারসেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার গভীর সম্পর্ককে আরো জোরদার করার জন্য নিরসল কাজ করে যাচ্ছেন।”

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে কানাডায় বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৪৫ বছর বয়সি খালিস্তানি নেতা হরদিপ সিং নিজ্জর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। কানাডা সরকার দাবি করেছে, ভারত সরকার তার এজেন্টদের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এরপরই মূলত দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক চরমভাবে অবনতি হতে থাকে। সূত্র: পলিটিকো, আরটি, এনডিটিভি

img

বাংলাদেশ: শান্তি ও সম্ভাবনার ঠিকানা

প্রকাশিত :  ১৯:১৬, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রেজুয়ান আহম্মেদ

জীবনের প্রয়োজনে, কাজের তাগিদে নানা দেশে ঘুরতে হয়েছে আমাকে— কখনো কর্মসূত্রে, কখনো নতুন কিছু শেখার তাগিদে, কখনো আবার উন্নত জীবনের হাতছানিতে। প্যারিসের ঝলমলে সন্ধ্যা দেখেছি, নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে বিস্মিত হয়েছি, দুবাইয়ের মরুপ্রান্তরে ভবিষ্যতের শহর গড়ে ওঠা দেখেছি। কিন্তু দিনের শেষে, যখন একটু প্রশান্তির জন্য মন আকুল হয়েছে, তখন বুঝেছি— আমার আসল ঠিকানা একটাই, আমার বাংলাদেশ!

বিদেশের শহরগুলো নিঃসন্দেহে সাজানো-গোছানো, আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ। কিন্তু সেখানকার ব্যস্ততা মানুষকে যেন যন্ত্রে পরিণত করে দেয়। কেউ কারও খোঁজ রাখে না, পাশের ফ্ল্যাটের মানুষও বছরের পর বছর অপরিচিত থেকে যায়। কাজের চাপে হাসির সময় নেই, আত্মীয়তার বন্ধনগুলো যেন শেকড়ছেঁড়া গাছের মতো শুকিয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশ! এখানেই সকালবেলা চায়ের দোকানে পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হয়, বিকেলে পাড়ার আড্ডায় হাসির রোল ওঠে, সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করে। জীবন এখানে এখনো সহজ, হৃদয়ের বন্ধনগুলো এখনো অটুট।

বিদেশে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে— অর্থ উপার্জনই কি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য? বিশাল বেতনের চাকরি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি— এগুলোর মোহ শুরুতে থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি হয়, আসল সুখ অন্য কোথাও।

বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এখনো সকালে ঘুম ভাঙে পাখির কিচিরমিচিরে। শীতের ভোরে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটার যে প্রশান্তি, তা বিশ্বের কোনো উন্নত শহর দিতে পারে না। শহরের ব্যস্ত জীবনেও মানুষ এখনো একে অপরের খোঁজ রাখে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ায়। এমন সম্পর্কের উষ্ণতা কি অন্য কোথাও পাওয়া যায়?

বিদেশে যখন হুট করে বৃষ্টি নামে, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে মনে পড়ে আমার দেশের বর্ষা! আকাশজুড়ে কালো মেঘের খেলা, টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ, ভেজা বাতাসের স্নিগ্ধ ছোঁয়া— এসব বিদেশে পাওয়া সম্ভব নয়।

অনেকে ভাবে, উন্নতির জন্য বিদেশে যেতেই হবে। সত্যিই কি তাই? বাংলাদেশেই এখন অগণিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, স্টার্টআপ— সবখানেই বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাচ্ছে।

একসময় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম, আর এখন? বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উদগ্রীব। কারণ আমাদের দেশ দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্য, শিল্প— সবখানেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

বিদেশে গিয়ে কেউ হয়তো কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন, কিন্তু সেই টাকা দেশে পাঠানোর পরও সেখানে জীবনযাপন করা সহজ হয় না। অথচ, একই পরিশ্রম যদি বাংলাদেশেই করা যায়, তাহলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানো সম্ভব।

বিদেশের চাকরির নিয়মকানুন এত কঠোর যে ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা প্রায় থাকে না বললেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ আছে, উদ্যোক্তা হয়ে কিছু গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে।

অনেকে ভাবে, বিদেশ মানেই বেশি আয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বাংলাদেশেই সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করলে তার চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব। দেশের বাজার ক্রমশ বড় হচ্ছে, মানুষের চাহিদা বাড়ছে, নতুন নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাহলে কেন আমরা নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে ছুটব?

পৃথিবীর যত দেশেই যাই না কেন, দিনের শেষে মনে হয়— বাংলাদেশই আমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন। শুধু অর্থের জন্য, উন্নতির জন্য, স্বপ্ন পূরণের জন্য বিদেশে যেতে হবে— এই ধারণা বদলানোর সময় এসেছে। আমাদের দেশেই সব সুযোগ আছে, আছে শান্তি, আছে ভালোবাসা।

আমি বহু দেশে ঘুরেছি, নানা সংস্কৃতি দেখেছি, আধুনিক জীবনের স্বাদ পেয়েছি। কিন্তু কোথাও বাংলাদেশের মতো প্রাণের উচ্ছ্বাস পাইনি, পাইনি মাটির টান। তাই বারবার ফিরে আসতে চাই এই পরিচিত আকাশের নিচে, আমার গ্রামবাংলার সবুজ মাটিতে, আমার শহরের কোলাহলে। কারণ, এটাই আমার চিরন্তন ঠিকানা।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর