img

নেতৃত্বের প্রতিহিংসাসুলভ আচরণ: শ্রীমঙ্গলে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হতে পারেননি

প্রকাশিত :  ১৪:২৫, ১৩ অক্টোবর ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৩৫, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

নেতৃত্বের প্রতিহিংসাসুলভ আচরণ: শ্রীমঙ্গলে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হতে পারেননি

সংগ্রাম দত্ত

শ্রীমঙ্গলে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই স্বীকৃতি পায়নি। তাদের মধ্যে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার একমাত্র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান এম এ মুসাব্বির, তৎকালীন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ রহিম, এস এ মুজিব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, ডঃ রমা রঞ্জন দেব, ডাক্তার সুধাংশু রঞ্জন দাস , শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের জনসংযোগের চেয়ারম্যান মোঃ রইস মিয়া ( শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল  এর পিতা) , আওয়ামী লীগের কমলেশ ভট্টাচার্য ( তিনি সংগ্রাম পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন এবং স্বাধীনতার পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার গণসংযোগের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন), বিমল জ্যোতি চৌধুরী ননী, পৌর কমিশনার শহিদুল আলম প্রমুখ। 

উল্লেখ্য যে, ১৯৭০ সালের ৬ এপ্রিল পাকিস্তান সরকার সামরিক আইনের সৃষ্টি এম এল আর ক্লোজ এইট এর ধারা বলে পাকিস্তান ভাঙ্গা তথা জয় বাংলা মামলায় ন্যাপ দলীয় রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্ত, মোহাম্মদ শাজাহান মিয়া, আওয়ামী লীগের এমএ রহিম ও এস এ মুজিব কে পাক সরকার গ্রেফতার করে মৌলভীবাজার জেল হাজতে  প্রেরণ করে। পরদিন শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মাঠে ন্যাপের পূর্বনির্ধারিত এক জনসভা ছিল। উক্ত জনসভায় যুগের অগ্নিকন্যা বলে খ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরী ও পাক আমলের ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সাংবাদিক আহমেদুল কবির ঢাকা থেকে ছুটে এসে জনসভায়  জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখে গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবি করেন। ফলে ন্যাপ , আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের হাজার হাজার নেতাকর্মী সহ সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার পরদিন তাদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে উক্ত নেতৃবৃদ্ধসহ অন্যান্যরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। ডাক্তার রমা রঞ্জন দেব ও ডাক্তার সুধাংশু রঞ্জন দাস ভারতের  ক্যাম্পে ডাক্তার হিসেবে শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সাহায্য করেন।

ন্যাপের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্ত ভারতের একটি ক্যাম্পে সম্পাদক হিসেবে কাজ করে ভারত সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পালনের সহযোগিতা ও বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য কাজ করায় ভারত সরকার তাঁকে সম্মানসূচক সার্টিফিকেট প্রদান করে। কিন্তু স্থানীয় যাচাই-বাছাই কমিটি সংকীর্ণ মনা রাজনীতির কারণে জয় বাংলা মামলার উপরোক্ত চার নেতা সহ অন্যান্যদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের আবেদন পত্রে  মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে অভিমত দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের আবেদন গুলো প্রেরণ করেন। যা খুবই দুঃখজনক। যাচাই-বাছাই কমিটিতে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ থাকায় এবং উপরোক্ত ব্যক্তিদ্বয় সব সর্বমহলে পরিচিত থাকার কারণে এবং রাজনীতিতে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে জেনেও উপরোক্ত বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অভিমত ব্যক্ত না করায় অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এর মধ্যে '৯০ এর গণঅদ্ভুত্থানের পর ন্যাপের মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, আওয়ামী লীগের এম এ রহিম প্রচুর বেদনা ও আক্ষেপ নিয়ে মারা গেছেন, এস এ মুজিব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন, গণসংযোগের চেয়ারম্যান মোঃ রইস মিয়া, ডাক্তার রমাদন দেব ডাক্তার, ডাক্তার সুধাংশু রঞ্জন দাস সহ অনেকেই মারা যান। অনেকে অনেক চেষ্টা করেও যাচাই-বাছাই কমিটির নেতৃবৃন্দের সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে তাদের স্বীকৃতি আদায় করতে পারেননি। 


এর মধ্যে কয়েকজনের আপিল সংশ্লিষ্ট বিভাগের আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্বেও তাদের শুনানির কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

ছবিতে তিনজন ন্যাপনেতা রাসেন্দ্র দত্ত, মোহাম্মদ শাহজাহান ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ পৌরসভার চেয়ারম্যান এম এ মুসাব্বির বাদে সবাই আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ছিলেন কিন্তু তারাও প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার।


মতামত এর আরও খবর

img

বিয়ে নয়, ক্যারিয়ার: জীবনের মূল্যের সন্ধানে!

প্রকাশিত :  ১৮:৩০, ১১ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ২০:০৯, ১১ অক্টোবর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

জীবনে প্রতিটি মানুষের জন্য বিভিন্ন মূল্যবোধ থাকে। কিছু মানুষের কাছে বিয়ে হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আবার কিছু মানুষ ক্যারিয়ারকে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করে। আমার কাছে, বিয়ে যে একান্তই মৌলিক হতে পারে, তাতে কোন সন্দেহ নেই; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ক্যারিয়ারই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যখন জীবনযাত্রা অভাবগ্রস্ত অবস্থায় গড়িয়ে যায়, তখনই ভালোবাসা ও সম্পর্কের স্থায়িত্ব অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।

প্রথমত, বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি, যা কেবল দুইজনের মধ্যে নয় বরং দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিয়ের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যাশা এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্বের বোঝাপড়া তৈরি হয়। কিন্তু যখনই জীবনের চাকা ঘোরে, তখন দেখা যায় যে প্রেম ও ভালোবাসা যখন অপ্রতুলতা বা সংকটের মুখোমুখি হয়, তখন সেগুলো কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে। বাস্তবতা হলো, জীবনের প্রত্যাশার সাথে প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে একটি দৃঢ় সম্পর্ক থাকা জরুরি। জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য অর্থ ও ক্যারিয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ার যখন সঠিক পথে এগিয়ে যায়, তখন সে তার পরিবার এবং প্রিয়জনদের জন্য একটি স্থিতিশীল ভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

দ্বিতীয়ত, ক্যারিয়ার একজন মানুষের স্বপ্ন, আশা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এটি কেবল আর্থিক সাফল্য নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, স্বকীয়তা এবং সামাজিক স্বীকৃতিরও সূচক। একজন ব্যক্তি যখন তার ক্যারিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হয়, তখন সে একটি ভালো জীবনযাত্রা উপভোগ করে এবং পরিবারের প্রতি একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি তার পারস্পরিক সম্পর্কগুলোর স্থায়িত্বও বাড়িয়ে দেয়। সে একদিকে যেমন নিজের ভালোবাসাকে সময় দিতে পারে, অন্যদিকে সঙ্গীর স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে পারে।

অন্যদিকে, অভাবগ্রস্ত অবস্থায় ভালোবাসা স্থায়িত্ব পায় না। প্রেমের ভাষা অর্থের অভাবে নিস্তেজ হয়ে যায়। অর্থনৈতিক চাপের ফলে সম্পর্কের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়। যখন কোন সম্পর্কের ভিত্তি কেবল প্রেমের ওপর থাকে, তখন দেখা যায়, অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সেই প্রেমের সূর্যকে মেঘাচ্ছন্ন করে ফেলে। ভালোবাসার সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি গড়তে হলে, দুই পক্ষের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি অপরিহার্য।

তৃতীয়ত, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিভিন্ন প্রত্যাশা কাজ করে। বিবাহিত জীবনের প্রতি সমাজের প্রত্যাশা এমন যে, কিছু মানুষ বুঝতে পারে না যে ভালোবাসা ও ক্যারিয়ার সমান গুরুত্বপূর্ণ। অকাল বিবাহ কিংবা সম্পর্কের তাড়াহুড়ো সমাজে স্টেরিওটাইপ তৈরি করে। এটি একদিকে পরিবার ও সমাজের মধ্যে অশান্তি তৈরি করে, অন্যদিকে ব্যক্তির ক্যারিয়ারকে বাধাগ্রস্ত করে।

বিশ্বজুড়ে, এমন অনেক সফল ব্যক্তি রয়েছেন যারা নিজের ক্যারিয়ারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ক্যারিয়ার নির্মাণের প্রক্রিয়ায় তাদের জন্য কিছু ক্ষেত্রে বিয়ের কোনো আবশ্যকতা ছিল না। তারা নিজেদের স্বপ্নের পেছনে ছুটে গেছেন, যার ফলে তাদের জীবন আরো অর্থবহ হয়ে উঠেছে। যেমন, অনেক নারীর ক্যারিয়ার এবং স্বনির্ভরতা তাদেরকে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অধিক আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। তারা নিজেদের শর্তে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

সুতরাং, আমার কাছে বিয়ের গুরুত্ব আছে, কিন্তু তা আমার ক্যারিয়ারের তুলনায় দ্বিতীয় স্তরের। জীবনের জন্য যে মূল্যের সন্ধান, তা হল একটি সফল ক্যারিয়ার। ক্যারিয়ার ছাড়া শুধু ভালোবাসা থাকার অর্থ হলো জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারা।

অতএব, আমাদের উচিত আমাদের জীবনের পথনির্দেশনার ক্ষেত্রে বিয়েকে নয়, বরং ক্যারিয়ারকে প্রথম পদের দিকে স্থান দেওয়া। একজন সফল ক্যারিয়ার তৈরি করতে সময় এবং শ্রম দেওয়া দরকার, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ভালোবাসার সঙ্গে জীবনের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে, একজন সফল ক্যারিয়ারই প্রধান চাবিকাঠি। তাই, আমাদের উচিত জীবনযাত্রাকে উন্নত করতে ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং অভাবগ্রস্ত অবস্থায় স্থায়ী সম্পর্ক গড়ার পরিবর্তে, নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া।

এটাই আসলে জীবনের সঠিক মূল্যবোধ, যেখানে ক্যারিয়ারই প্রথম। ক্যারিয়ার আমাদের জন্য কেবল একাডেমিক সাফল্য নয়, বরং আমাদের স্বপ্ন, আশা, এবং জীবনের উদ্দেশ্যও প্রকাশ করে। এটি আমাদের কাছে একটি পরিচিতি, যা আমাদের আত্মমর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান তৈরি করে। সুতরাং, আমাদের উচিত ক্যারিয়ারকে অগ্রাধিকার দেওয়া, কারণ এটি জীবনের মূল্যের সন্ধানে আমাদের সাহায্য করে।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর