img

আজ মহানবমী : ১০৮ নীলপদ্মে চলছে দেবী বন্দনা

প্রকাশিত :  ০৫:২৩, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট: ০৫:২৭, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

আজ মহানবমী : ১০৮ নীলপদ্মে চলছে দেবী বন্দনা

আজ মহানবমী। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার শেষ পর্বের পূজা শুরু হয়ে গেছে। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয়েছে দেবী দুর্গার বন্দনা। মন্ত্রের পাশাপাশি ১০৮ নীলপদ্ম দিয়ে মহানবমীর পূজা করছেন পুরোহিতরা। এছাড়া ১০৮টি বেলপাতা ও ঘি দিয়ে হবে মহানবমীর যজ্ঞ।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই মহানবমীর পূজা শুরু হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। মূলত আজই পূজার শেষ দিন। মঙ্গলবার বিজয়াদশমীর যাত্রা শেষে বিসর্জন হবে, অশ্রুশিক্ত চোখে ভক্তরা বিদায় দেবেন দেবী দুর্গাকে।

শাস্ত্র মতে, মহানবমী পূজা সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে শুরু হয়েছে। বিহিতপূজার মাধ্যমে শুরু হয়েছে মহানবমী পূজা। এদিকে যেমন ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবীদুর্গার, সেই সঙ্গে ১০৮টি বেল পাতা ও ঘি দিয়েও হবে যজ্ঞ। সব শেষে পুষ্পাঞ্জলির মধ্য দিয়ে শেষ হবে মহানবমীর পূজা।

সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী আরও জানা যায়, এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে যার ফল খুব একটা শুভ না। শাস্ত্র অনুযায়ী দেবীর ঘোড়ায় ছাত্রভঙ্গের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া দেবীর গমনও রয়েছে ঘোটকে। যার ফলও শুভ বার্তা দিচ্ছে না।

গত ২১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দেবী এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে, মঙ্গলবার দশমীর দিন বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। মঙ্গলবার ২৪ অক্টোবর সকাল ৯ টার পর দশমী পূজা শুরু হবে। দশমী পূজার পর অনুষ্ঠিত হবে পুষ্পাঞ্জলি।

img

ভার্চুয়াল ওমরাহ!

প্রকাশিত :  ০৫:৪৩, ১৩ মে ২০২৫

প্রথম আলোর ভোরের মতোই নিঃশব্দে একদিন বাচ্চু মিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আবির্ভূত হয়েছিল। একসময় সে ছিল অচেনা এক মুখ—মাঝারি মানের বক্তা, যার ভিডিওতে লাইক পড়ত সীমিত সংখ্যায়। কিন্তু হঠাৎই সে বদলে গেল। ফেসবুক-ইউটিউবের গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করল গ্লোবাল ‘হুজুর ইনফ্লুয়েন্সার’ হিসেবে। আজ সে শুধু বক্তা নয়, উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক, আর কেউ কেউ বলে—‘ঈমানের ডিজিটাল বিপণনকারী’!  

তার নতুন উদ্যোগের নাম—‘উম্মাহ ট্যুর’। প্রথমে শুনলে মনে হতে পারে এটি কোনো পর্যটন সংস্থা। কিন্তু না, এটি একধরনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সরবরাহকারী। তাদের দেওয়া ‘ওমরাহ প্যাকেজ’-এ পাসপোর্ট, ভিসা বা ফ্লাইট টিকিটের প্রয়োজন নেই। শুধু একটি স্মার্টফোন আর ‘খাঁটি নিয়ত’ থাকলেই চলবে! বাচ্চুর কথায়, ‘ভাই ও বোনেরা! জান্নাত এখন হাতের মুঠোয়, মোবাইলের স্ক্রিনে তাওয়াফ করলেই হজ আদায়!’  

ইউটিউবে লাইভে বাচ্চুর প্রথম আবির্ভাব ছিল ব্যতিক্রমী আয়োজন। ঝকঝকে টুপি, কাবা শরিফের এইচডি ব্যাকগ্রাউন্ড, আর মিষ্টি কণ্ঠে আহ্বান: ‘আমার ভাই ও বোনেরা! যারা জীবনে হজ করতে পারেননি, তাদের জন্য জান্নাতি ডিসকাউন্টে ভার্চুয়াল ওমরাহ প্যাকেজ!’ দর্শকদের চোখ ছানাবড়া। কীভাবে সম্ভব? বাচ্চুর ব্যাখ্যা: মোবাইলে কাবার ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও চালু করুন, আঙুলে ঘোরান স্ক্রিন। নিয়ত খাঁটি হলে সাত চক্করে আমল সম্পন্ন!  

কমেন্টবক্সে একের পর এক প্রশ্ন: ‘ভাই, ফোনের স্ক্রিন ছোট হলে তাওয়াফ ঠিক হবে?’ বাচ্চুর উত্তর: ‘নিয়ত বড় হলেই সব কবুল, স্ক্রিন ছোট হলে গুনাহ নেই!’ অন্য জিজ্ঞাসা: ‘তাওয়াফ করতে ফোন গরম হয়ে গেলে?’ বাচ্চুর মজাদার জবাব: ‘ফ্যানের নিচে বসুন। ফোন গরম, নিয়ত ঠাণ্ডা থাকলেই চলবে!’  

এরপর আসে প্যাকেজের বিবরণ। প্রিমিয়াম ভার্সন ৯৯৯ টাকায় মিলবে লাইভ হুজুরের গাইডেন্স—‘এখন আপনি হাজরে আসওয়াদের সামনে...’ ইকোনমি ভার্সন ২৯৯ টাকায় ভিডিও ডাউনলোড করে অফলাইনে আমল। বাড়তি সুবিধা: নফল নামাজের অডিও গাইড, যাতে নামাজে ‘কষ্ট’ না হয়!  

আরো আছে বোনাস! কমেন্টে ‘আমি জান্নাত চাই’ লিখলেই মিলবে বাচ্চুর বিশেষ ভিডিও মেসেজ—‘তুমি জান্নাতের যোগ্য, মাশাআল্লাহ!’ সাথে ফ্রি ‘জান্নাতি সুরা বুকমার্ক’—ইসলামি বইয়ে রাখলে ঈমানি অনুভূতি বাড়বে!  

এই উদ্যোগে হতভম্ব ঢাকার হজ দালালরা। পুরান ঢাকার জাফর ভাই, দশ বছরের অভিজ্ঞ হজ এজেন্ট, কফিশপে বললেন: ‘এ কী হুজুর! মোবাইলে হজ করায়?’ পাশের বন্ধু ঠাট্টা করল: ‘আপনি প্রথাগত, বাচ্চু ডিজিটাল। আপনার হজ কষ্টসাধ্য, ওরটা ক্লিকসাধ্য!’  

বাচ্চুর ‘উম্মাহ স্টুডিও’ অ্যাপে এখন ইসলামি ফিল্টার। ইনস্টাগ্রামে সেলফি তুললেই অটো-ক্যাপশন: ‘ইয়া আল্লাহ, হেদায়েত দাও!’ টিকটকে ভিডিও পোস্ট করলে স্ক্রলে ভেসে উঠবে: ‘দুনিয়ার ধুলোয় ঢেকে থাকলেও জান্নাতে ঝলমকে হবো!’ এক অদ্ভুত ধর্মীয় ইনফ্লুয়েন্স!  

আন্তর্জাতিক সফরে প্লেনে উঠেই বাচ্চু লাইভ শুরু করে: ‘ভাই ও বোনেরা! প্লেন উঠছে, যেমন আমরা জান্নাতে উঠব। সবাই বলুন—সুবহানাল্লাহ!’ যাত্রীরা প্রথমে অবাক, পরে জিকিরে মগ্ন। এয়ার হোস্টেসের প্রশ্ন: ‘স্যার, জিকিরের জন্য অ্যাপ লাগবে?’ বাচ্চুর হাসি: ‘না বোন, নিয়তই যথেষ্ট!’  

এরপর ‘হালাল হোটেল’ চালু—মেনুতে ‘ঈমান এক্সপ্রেসো’, ‘তাকওয়া টোস্ট’, আর ‘সুরা হালিম’! এক গ্রাহকের মন্তব্য: ‘হালিম খেয়ে মনে হলো জান্নাতের ট্রায়াল ভার্সন পেলাম!’ এমনকি বিয়ের প্যাকেজও: ‘হালাল বিয়ে, হাই রেজুলেশনে!’ কমেন্টে কেউ লিখল: ‘এই জুটি নিশ্চয় জান্নাতের টিকিট পাবে!’  

সবশেষে ঘোষণা: ‘খুলছি উম্মাহ ট্যুর ইন্টারন্যাশনাল! দুনিয়ার সব গুনাহের দোকানে তালা দিয়ে জান্নাতি প্যাকেজ আনব!’ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখা: ‘জান্নাত এখন গুগল ম্যাপে। নিয়ত দিয়ে সার্চ করুন!’  

বাচ্চু মিয়া—একজন বিপণনকারী, বক্তা, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ, আর ঈমানের ডিজিটাল দূত। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়: এটা ঈমানের নবজাগরণ নাকি কনটেন্ট-বেসড বাণিজ্যিক ছলনা?  

যেখানে ধর্মের স্থান হওয়া উচিত ছিল আত্মিক অনুশীলনে, সেখানে তা পরিণত হচ্ছে বাণিজ্যের হাতিয়ারে। বাচ্চু মিয়াদের কর্মকাণ্ড যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়—ধর্ম এখন পণ্য! হয়তো এর মাধ্যমে কেউ ঈমানের পথ পাবে, কিন্তু যদি এটা শুধু প্রযুক্তি ও মুনাফার খেলায় পরিণত হয়, তবে ভাবনা জাগে: আমরা কি ঈমানের ‘মোবাইল ভার্সনে’ ঢুকে পড়েছি?  

জান্নাত কী এখন অ্যাপে কেনার পণ্য? এই প্রশ্ন আজ সমাজ, চিন্তা আর আত্মার দরজায় জোরালো আঘাত করছে।