img

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশঃ নতুন সমীকরণ?

প্রকাশিত :  ২০:১১, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশঃ নতুন সমীকরণ?

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, হটাৎ করে বৈদেশিক নীতির আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী ল্যান্ডস্কেপ জুড়ে শকওয়েভ পাঠাতে পারে। এরকম একটি সাম্প্রতিক উন্নয়ন যা উল্লেখযোগ্য মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হল বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপাত দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর ঘটনাটি । এই কৌশলগত পুনর্বিন্যাস বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে যা যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত অতীতের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থাপনাগুলির সাথে যুক্ত হওয়ার প্রভাবগুলি ঘনিষ্ঠভাবে তাঁরা পর্যালোচনা করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ঐতিহাসিকভাবে সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত, এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সত্তার সাথে তার নতুন সম্পর্ক নিয়ে ভ্রু তুলেছে যাদের ট্র্যাক রেকর্ড অতীতে মার্কিন—বিরোধী দ্বারা দাগযুক্ত। অনুভূতি বৈদেশিক নীতির এই পরিবর্তন প্রশ্ন জাগিয়েছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি কৌশলগত স্বার্থের জন্য তার মূল্যবোধ ও নীতির সাথে আপস করছে?

এই পুনর্গঠনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকগুলির মধ্যে একটি হল এই অঞ্চলের স্বৈরশাসকদের ভূতের কথিত পৃষ্ঠপোষকতা। বাংলাদেশের একটি জটিল রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে যা সামরিক শাসন এবং কর্তৃত্ববাদের সময়কাল দ্বারা চিহ্নিত। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কিছু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের শিকড় রয়েছে এমন শাসনব্যবস্থায় যারা তাদের জনগণকে নিপীড়িত করেছিল এবং আমেরিকান স্বার্থের প্রতি বিরূপ ছিল। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ঐতিহ্যগতভাবে দাবি করে এমন নৈতিক উচ্চতার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ায়। আমেরিকার এই নব্য পলিসি পরিবর্তন অনেকেই মনে করছে যে, মধ্যপ্রাচে যেখানে তারা এই ক্যাটাগরির কারো সাথেই সখত্যা গড়ে তুলতে আগ্রহী নয় পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকটা জেঁচে পরেই এগিয়ে আসছে বলে আপাতভাবে মনে হচ্ছে । কিন্তু কেন? 

এই কূটনৈতিক পরিবর্তনের ভিত্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে জোটের উপর নির্ভর করে যারা ঐতিহাসিকভাবে অতীতে মার্কিন বিরোধী অবস্থান নিয়েছেল। এটা একটা প্যারাডক্স যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা, হওয়া সত্তেও এখন এমন নেতাদের কাছে জন্য তদ্বির করছে  যারা অতীতে প্রকাশ্যে আমেরিকান নীতি ও মতাদর্শের সমালোচনা করেছে আজীবনঃ অনেকে মৌলবাদীদের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে ইউ এস বিরুদ্ধে মিছিল — মিটিং স্লোগান দিয়েছে  । এই নব্য পরিসংখ্যানগুলির আকস্মিক আলিঙ্গন বিশ্ব মঞ্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করে। 


বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের ইস্যুতে জর্জরিত হয়েছিলো,  তখন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বিভ্রান্ত করে তুলেছিল একদা। এই সমস্যাগুলির সাথে যুক্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে নিজেকে সারিবদ্ধ করার মাধ্যমে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের প্রচেষ্টার জন্য বিশ্বব্যাপী উকিল হিসাবে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি নেয়। সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে এই পদক্ষেপ অসাবধানতাবশতঃ চরমপন্থী মতাদর্শের গোষ্ঠীগুলিকে ক্ষমতায়িত করতে পারে, যা শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য নয়, বৃহত্তর অঞ্চলের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা এখন মার্কিন সমর্থন উপভোগ করছেন তারা অতীতে দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, যারা প্রায়শই স্বচ্ছতা এবং সুশাসনের চ্যাম্পিয়ন বলে দাবী করে, অথচ দুর্নীতি কেলেঙ্কারির কারণে কলঙ্কিত নেতাদের সাথে সারিবদ্ধ হওয়া তার পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায়। এই পদক্ষেপটি এই অঞ্চলে বলে অনেকে বিশেষজ্ঞরাই বলছেন। 

বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন  দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক আচরণের মুখোমুখি বলে মনে হচ্ছে ।  যদিও কৌশলগত স্বার্থ এবং ভূ—রাজনৈতিক বিবেচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মূল মূল্যবোধ এবং নীতিগুলির সাথে আপস করা দীর্ঘস্থায়ী হুমকিতেও  পরিণতি হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই জটিল ভূখণ্ডে নেভিগেট করার সময়, কৌশলগত লক্ষ্যগুলির অনুসরণ যাতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে তার খ্যাতির মূল্যে না আসে তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে অবশ্যই সাবধানে চলতে হবে। এবং অত্র অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক নতুন ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে ঐ সব অপরিপক্ক এবং ডুপলিসিয়াস মহলের সাথে বন্ধুত্ব কাউন্টার প্রোডাক্টিভ হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকতে পারে। ভূ রাজনিততে যে দেশ হুমকি হিসাবে প্রতীয়মান তাকে রুখতে হলে আমেরিকার দরকার সমমনা এবং বাংলাদেশের ও  প্রতিবেশী দেশ সমূহের সম্মলিত ঐক্য। 

হঠাৎ করেই বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির স্থানান্তর তীব্র পর্যালোচনা ও বিতর্কের বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জোট গঠন করে যার অতীত ট্র্যাক রেকর্ড মার্কিন—বিরোধীদের দ্বারা বিকৃত। সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি এবং মৌলবাদের কারণে এটি কৌশলগত স্বার্থ এবং মৌলিক মূল্যবোধের আনুগত্যের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই জটিল কূটনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ নেভিগেট করার সময় বিশ্ব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, এই অপ্রত্যাশিত পিভটের পেছনের প্রেরণা এবং বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতার জন্য এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। 

মতামত এর আরও খবর

img

করিম চাচার খোলা চিঠি: হর্নের শব্দে ম্লান আমার শেষ বেলার শান্তি!

প্রকাশিত :  ১৩:০১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমার নাম করিম উদ্দিন। বয়স এখন ৮০ ছুই ছুই। শরীরটা আর আগের মতো নেই। হাত-পায়ের জোর আগের চেয়ে কমে গেছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, কানেও ঠিকমতো শুনতে পাই না। তবুও, আমার জীবনটা ভালোই চলে যাচ্ছিল। গ্রামের ছোট্ট বাড়ি, একটু জায়গা জমি, চারপাশে গাছগাছালি—এই নিয়েই আমি থাকি। এ বয়সে এসে মানুষের চাওয়ার আর কী থাকতে পারে? শান্তি। হ্যাঁ, শান্তি-ই তো চেয়েছিলাম। কিন্তু, এ দেশে শান্তিতে মরতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে বড় সন্দেহ!

ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে, তারা এখন শহরে থাকে। কেউ কেউ বিদেশেও থাকে। ওদের সঙ্গে যখন ফোনে কথা হয়, একটাই বিষয় ওরা বারবার বলে—বিদেশে নাকি কেউ রাস্তায় হর্ন বাজায় না। রাস্তায় গাড়ি চলে, কিন্তু সেই গাড়ি যেন শব্দহীন। ওদের কথা শুনে মনে হয়, বিদেশ মানেই যেন এক স্বর্গ! আমি তো জানি না, ওই স্বর্গের আসল চিত্র কেমন। তবে আমার এই ছোট্ট গ্রামে শান্তির ন্যূনতম টুকুও নেই।

গ্রামের রাস্তায় এখন প্রচুর গাড়ি চলে। একটু আগেও যেখানে কাঁঠাল গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতাম, এখন সেখানে বড় বড় বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল দাপিয়ে বেড়ায়। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এই সব গাড়ির চালকরা যেন হর্ন না বাজিয়ে থাকতে পারে না। যেখানে যানবাহনের অল্পই প্রয়োজন, সেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত হর্ন বাজিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করে। হর্নের সেই তীব্র শব্দ আমার বয়স্ক কানে বাজে বুলেটের মতো। হৃদয় যেন থেমে যায় মাঝে মাঝে। মনে হয়, মরার আগেই শান্তি মিলবে না এই দেশে!

ছেলেমেয়েদের বিদেশে যাওয়ার পরে মাঝে মাঝে ওদের সঙ্গে কথা বলি। ওরা বলেছে, বিদেশে কেউ রাস্তায় হর্ন বাজায় না। গাড়ি চলে নিয়ম মেনে, মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়ে। আর আমাদের দেশে? রাস্তায় বেরুলে মনে হয়, মানুষ যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে কত জোরে হর্ন বাজাতে পারে। প্রত্যেকটা হর্ন যেন গায়ের মধ্যে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। এ দেশে কি কেউ মানুষের কানের মর্ম বোঝে না? বয়স্ক মানুষদের প্রতি কি কোনো সম্মান নেই?

শহরে তো হর্নের শব্দ সহ্য করার মতো নয়, কিন্তু গ্রামেও এখন এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে শান্তি নেই। রাস্তায় গাড়ি চলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু, হর্নের দরকার কী? ওরা কি জানে না, হর্ন বাজানোর ফলে শুধু আমার মতো বৃদ্ধরাই কষ্ট পায় না, ছোট ছোট বাচ্চারাও ভয় পায়। আমার নাতি-নাতনিরা যখন আসে, ওদের মুখে কান্নার শব্দ শোনা যায়। এত তীব্র শব্দ, বাচ্চাগুলো ভয়ে কুঁকড়ে যায়। আমি ভাবি, এটাই কি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ?

আমার আর কিছুদিনই বাঁচার সম্ভাবনা। মরার আগে একটু শান্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু এ হর্নের আওয়াজ আমার সেই শেষ বেলার শান্তিটুকু কেড়ে নিয়েছে। প্রার্থনা করি, এ দেশের মানুষ যেন কিছুটা সহানুভূতিশীল হয়। হর্নের জন্য অন্যের কষ্টের বিষয়টা যেন তারা বোঝে। মানুষের কান, হৃদয়—এসবও তো সংবেদনশীল। গায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে গেলে যেমন ব্যথা হয়, তেমনি হর্নের তীব্র আওয়াজও আমার মাথার মধ্যে কাঁপুনি ধরে। আমি আর পারি না, বুঝলে!

বিদেশে থাকে এমন কিছু মানুষ আমাকে একবার বলেছিল, ওদের রাস্তায় নাকি আইন খুব কঠিন। কেউ হর্ন বাজালে সাথে সাথেই শাস্তি পায়। ভাবলাম, আমাদের দেশে এমন কোনো নিয়ম হবে না কেন? আমাদের দেশেও তো আইন আছে, কিন্তু কেন মানা হয় না? কোথায় সেই শৃঙ্খলা? শুধু গাড়ির চালকেরাই নয়, সবাই যেন হুটহাট যা খুশি তাই করে বেড়ায়। আইন আছে, কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। আর তার ফল ভোগ করছি আমরা, সাধারণ মানুষ।

আমার শেষ ইচ্ছা শুধু একটাই—এই দেশটা যেন শান্তি পায়। মানুষের মধ্যে মানবিকতা জাগুক। হর্নের আওয়াজে আমি হয়তো আমার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব, কিন্তু আমার মতো যারা বয়স্ক, তাদের কষ্ট যেন আর সহ্য করতে না হয়। তরুণরা যেন এ বিষয়টি নিয়ে ভাবে, এই সমস্যার সমাধান খোঁজে। শুধু বয়স্করাই নয়, এই হর্নের সমস্যা থেকে মুক্তি পেলে শিশুরা নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারবে। আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ, এসব তো আমাদেরই, তাই আমাদের দায়িত্ব এই দেশটাকে সুন্দর করে তোলা।

এখন হয়তো আমার সময় শেষের দিকে, কিন্তু এই চিঠিটা লিখে রেখে যাচ্ছি তাদের জন্য যারা আমার পরে আসবে। দেশটা এমন হোক, যেখানে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে মানুষকে হর্নের শব্দে কষ্ট পেতে হবে না।

মতামত এর আরও খবর