আজ পবিত্র লাইলাতুল বরাত

প্রকাশিত :  ০৪:৫৮, ২১ এপ্রিল ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:৫১, ২২ এপ্রিল ২০১৯

আজ পবিত্র লাইলাতুল বরাত

পবিত্র লাইলাতুল বরাত আজ। সৌভাগ্যের রজনী। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য মহিমান্বিত এই রাত   
 ইবাদত-বন্দেগির। পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিষ্কৃতি লাভের। এ রাতে মহান আল্লাহ্‌তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি রহমত ও বরকত নাজিল করেন। এ কারণেই এ রাতকে লাইলাতুল বরাত বা ভাগ্য রজনী বলা হয়। পবিত্র এ রাত উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ, প্রবন্ধ, সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো শবেবরাতের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে। শবেবরাতের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল ইবাদত-বন্দেগি ও কোরআন তিলাওয়াত করে কাটিয়ে থাকেন। এছাড়া দোয়া, মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়। মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে ধর্মীয় আলোচনার। 

শবেবরাত ফার্সি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ ভাগ্য। শবেবরাত অর্থ ভাগ্যরজনী। প্রতি বছরের মতো এবারও শবেবরাত উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান রাতভর ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এদিকে শবেবরাতের রাতে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি’র কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রোববার দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত উদযাপিত হবে। পবিত্র শবেবরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং পবিত্র শবেবরাত অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করার জন্য রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

প্রকাশিত :  ০৬:৪৮, ২৮ মার্চ ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫১, ২৮ মার্চ ২০২৪

আজ ১৭ রমজান। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ১৭ রমজান মদিনার মুসলিম ও কুরাইশদের একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২য় হিজরির এই দিনে মহানবী (সা.)’র নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের ৩১৩ জনের একটি মুজাহিদ বাহিনী বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। ইসলামের ইতিহাসে যাকে জঙ্গে বদর বা বদর যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়েছে।  মুসলমানদের সমৃদ্ধি ও শক্তিবৃদ্ধিতে ঈর্ষা ও শত্রুতা থেকেই পৌত্তলিক মক্কাবাসী রাসুলুল্লাহ (স.) ও তাঁর অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়, ইসলামের ইতিহাসে তা ’গাজওয়ায়ে বদর’ বা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে আবু জেহেলের এক হাজার সুসজ্জিত বাহিনীর বিপরীতে মুসলমানদের সেনা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। 

যেসব পরোক্ষ কারণে বদরযুদ্ধের সূচনা হয়, তা হলো- হিজরতের পর মদিনায় ইসলামের দৃঢ় প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন ওবাই ও ইহুদিদের যড়যন্ত্র, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংস এবং নবীজি (স.)-কে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার হীন চক্রান্ত, কাফেরদের সন্ধি-শর্ত ভঙ্গ, বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। প্রত্যক্ষ কারণ ছিল- নাখালার ঘটনা, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানদের অপপ্রচার, যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য ওহি লাভ ও মক্কাবাসীদের ক্ষোভ।

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নগণ্যসংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ তাআলার গায়েবি সাহায্যে আবু জেহেলের বিশাল বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছিলেন। এই যুদ্ধকে কোরআন কারিমে ‘সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল দূরে এই সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ‘আশহুরে হুরুম’ বা নিষিদ্ধ চার মাসের অন্যতম হচ্ছে পবিত্র রমজান। এই রমজানেই মদিনা আক্রমণ করে বসে কাফেররা। তার বিপরীতে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন মুসলিমরা।

আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাসী মুসলমানদের অস্ত্র ছিল মাত্র তিনটি ঘোড়া, ৭০টি উট, ছয়টি বর্ম ও আটটি তলোয়ার। রসদ কম মনে হলেও বিজয় লাভে তাদের প্রধান উপকরণ ছিল ঈমানি শক্তি। মুসলমানদের বিশ্ব জয়ের সূচনা এবং সর্বোত্তম ইতিহাস রচনার ভিত্তি এই বদর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৭০ জন মুশরিক নিহত ও ৭০ জন বন্দি হয়। অন্যদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম বীর সেনানী শাহাদতের অমীয় সুধা পান করেন।

বদরের এ ঘটনা থেকে মুসলিম জাতীর সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো—মুসলিম উম্মাহ এমন একটি জাতি, যে নীরবে নিভৃতে অত্যাচার-অনাচার-জুলুম সহ্য করবে না। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাকে কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করবে। 

ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করবে। বদর যুদ্ধ মুসলমানকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে শেখায়। আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভর হওয়া শেখায়। যুদ্ধে অবিচল থাকা ও সবর করা শেখায়।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ইসলামবিদ্বেষীদের জুলুমের শিকার হচ্ছেন এবং ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর মুসলমানরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নীরবে বসে আছেন। তা মোটেও ইসলামের শিক্ষা নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বদরের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।