
জমিয়ত ছেড়ে তৃণমূল বিএনপিতে শাহীনূর পাশা

বহুল আলোচিত, সমালোচিত, বিচিত্রধর্মী চরিত্রের রাজনীতিক শাহীনূর পাশা চৌধুরী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এবার জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ছেড়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।
এর আগে কয়েকটি ইসলামী দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন শাহীনূর পাশা। তাই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দলীয় শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার দায়ে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ স্থগিত করে।
শাহীনূর পাশা চৌধুরী তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জমিয়তের জন্য নিজের জীবন–যৌবন সব শেষ করলাম। অথচ আজ দলের একটি অংশ ষড়যন্ত্র করে আমাকে দল ছাড়তে বাধ্য করল। আমি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেব।’
পাশা আরো বলেন, “জমিয়তে আসা কতিপয় বসন্তের কোকিল ও সিলেট বিদ্বেষী একটি চক্র ২০১৭ সাল থেকে দলে আমাকে কোণঠাসা করে রেখেছিলো। তাদের চক্রান্তই আমাকে পদত্যাগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাকে যে দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হলো, একই দোষে দলের স্থায়ী কমিটির কমপক্ষে চারজন সদস্য সম্পৃক্ত। অথচ আমার সদস্যপদ স্থগিত করার আগে টেলিফোনেও একবার আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেওয়া হয়নি। যে দলের জন্য জীবনযৌবন, ধনসম্পদ সব হারালাম, সেই দল শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে অবিচার করলো।” কারা ছিলেন একই দোষে দোষী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানাবো।’ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন।
তার এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জরুল ইসলাম আফেন্দি সিলেটের ডাককে বলেন, শাহীনূর পাশার এই অভিযোগ শুধু অসত্যই নয়, হাস্যকরও বটে। মানুষ যখন নৈতিকভাবে পরাজিত হয়, তখন আবোলতাবোল কথা বলে। দলের বিরুদ্ধে তার এহেন কথাবার্তা তার নৈতিক পরাজয়ের আরেকটি প্রমাণ।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) জগন্নাথপুর উপজেলায় শাহীনূর পাশার বাড়ি। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলেন। দলের একজন নীতিনির্ধারক ছিলেন তিনি। শাহীনুর পাশা চৌধুরী সুনামগঞ্জ-৩ আসনে ২০০৫ সালের উপনির্বাচনসহ মোট পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে চারবার বিএনপি-জামায়াতের জোটের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে, একবার নির্বাচন করেছেন নিজের দলের প্রতীক খেজুরগাছ নিয়ে।
এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হন তিনি। উপনির্বাচনে তখন আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দুই বছরের জন্য সংসদ সদস্য হয়েছিলেন শাহীনুর পাশা চৌধুরী। এরপর ২০০৮, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও আর জয়ী হতে পারেননি তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে শাহীনূর পাশা চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। আমরা তার কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাই। তিনি আশ্বস্ত করেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে সন্তুষ্ট, তাই নির্বাচনে অংশ নেব। দল বদলে কোনো প্রভাব পড়বে না। এই নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি গ্রামে আমার কর্মী-সমর্থক আছেন। আমি সবার সহযোগিতা পাব।’