img

লাল পোশাকে অস্ত্র হাতে মহড়ার যুক্তি কী

প্রকাশিত :  ০৭:১৬, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:২৬, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

লাল পোশাকে অস্ত্র হাতে মহড়ার যুক্তি কী

রাজবাড়ীতে নতুন করে স্পেশাল টাস্কিং গ্রুপ (এসটিজি) গঠন করার প্রয়োজন কী? ‘নাশকতা প্রতিরোধ’, ‘নাশকতাকারী’দের দমনে কি সাধারণ পুলিশই যথেষ্ট নয়? 

রাজবাড়ী থেকে প্রথম আলোর সাংবাদিক জানাচ্ছেন, জেলা পুলিশ এসটিজি নামের পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করেছে। এই দলভুক্ত পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ সুপার বিশেষ একধরনের পোশাক দিয়েছেন। সাদা কলারের মেরুন রঙের পোলো শার্ট ও খাকি প্যান্ট পরে অস্ত্র হাতে তাঁরা রাজবাড়ীতে টহল দিচ্ছেন।

রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও দেখা দিতে পারে। এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য এই বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি বিভাগ ও ইউনিট রয়েছে। যেমন পুলিশের এসবি (বিশেষ শাখা), সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ), ডিবি (গোয়েন্দা বিভাগ), রেলওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও অ্যান্টিটেররিজম পুলিশ। শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মধ্যে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ মোট ২৪টি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগের কাজ সুনির্দিষ্ট ও তাদের পোশাক কেমন হবে, তা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজবাড়ীতে এসটিজির লাল পোলো শার্ট পরার ব্যাপারে কি সেই নির্দেশনা মানা হয়েছে?

পোশাক নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ নির্দেশনাটি জারি হয় ২০০৪ সালের ১০ জানুয়ারি। কোনো কোনো ইউনিট পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদনক্রমে বিশেষ ধরনের পোশাকেরও ব্যবস্থা করেছে, যেমন সোয়াট। তবে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলা পুলিশ নতুন এই ইউনিট গঠন ও পোশাক প্রবর্তনে পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমতি নেয়নি।

এ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছে। লাল পোশাকের এ ধরনের একটি বাহিনী কি একজন পুলিশ সুপার নিজের ইচ্ছায় গঠন করতে পারেন? এটা কি আইন মেনে হয়েছে? তা ছাড়া জেলা পুলিশ সুপার নিজেই বলেছেন রাজবাড়ীতে নাশকতার ঘটনা তেমন একটা ঘটেনি। তাহলে কেন সানগ্লাস চোখে, নতুন পোশাক পরে নতুন নামে একটি ইউনিটের অস্ত্র হাতে জেলায় প্যারেড করতে হয়েছে? এর সদস্যদের পুলিশ বাহিনীর কোন বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে?

পুলিশের পোশাক আমজনতা থেকে তাদের আলাদা রাখে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার নিজের পছন্দমতো যে পোশাক নতুন এই দলের সদস্যদের দিয়েছেন, তা যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে, তা কি তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন? এই পোশাকের অপব্যবহার যদি কেউ করে, তবে তার দায় নেবে কে? বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এই অপব্যবহারের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা তৎপর।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ অবশ্য মনে করেন, বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণ নেই। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, অন্যান্য জেলায় কুইক রেসপন্স টিম আছে, এটাও তেমন। তারা অস্ত্র হাতে পোলো শার্ট পরে টহল দিতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার সময় ডিবি ও সিআইডি সাদাপোশাক পরতে পারে। যদিও তিনি নিজেই বলেছেন, নাশকতা ঠেকাতে নতুন এই ইউনিটটি অভিযান পরিচালনা করবে।

সে ক্ষেত্রে ডিবি, সিআইডির প্রসঙ্গ টানা কতটা যৌক্তিক? নতুন পোশাক পরা পুলিশের একটি দলকে মাঠে নামানোর পেছনে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের কী চিন্তা কাজ করেছে, তা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

আমরা আশা করছি, পুলিশ সদর দপ্তর বিষয়টি পরিষ্কার করবে।

img

বাংলাদেশ: শান্তি ও সম্ভাবনার ঠিকানা

প্রকাশিত :  ১৯:১৬, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রেজুয়ান আহম্মেদ

জীবনের প্রয়োজনে, কাজের তাগিদে নানা দেশে ঘুরতে হয়েছে আমাকে— কখনো কর্মসূত্রে, কখনো নতুন কিছু শেখার তাগিদে, কখনো আবার উন্নত জীবনের হাতছানিতে। প্যারিসের ঝলমলে সন্ধ্যা দেখেছি, নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে বিস্মিত হয়েছি, দুবাইয়ের মরুপ্রান্তরে ভবিষ্যতের শহর গড়ে ওঠা দেখেছি। কিন্তু দিনের শেষে, যখন একটু প্রশান্তির জন্য মন আকুল হয়েছে, তখন বুঝেছি— আমার আসল ঠিকানা একটাই, আমার বাংলাদেশ!

বিদেশের শহরগুলো নিঃসন্দেহে সাজানো-গোছানো, আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ। কিন্তু সেখানকার ব্যস্ততা মানুষকে যেন যন্ত্রে পরিণত করে দেয়। কেউ কারও খোঁজ রাখে না, পাশের ফ্ল্যাটের মানুষও বছরের পর বছর অপরিচিত থেকে যায়। কাজের চাপে হাসির সময় নেই, আত্মীয়তার বন্ধনগুলো যেন শেকড়ছেঁড়া গাছের মতো শুকিয়ে যায়। অথচ বাংলাদেশ! এখানেই সকালবেলা চায়ের দোকানে পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হয়, বিকেলে পাড়ার আড্ডায় হাসির রোল ওঠে, সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করে। জীবন এখানে এখনো সহজ, হৃদয়ের বন্ধনগুলো এখনো অটুট।

বিদেশে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে— অর্থ উপার্জনই কি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য? বিশাল বেতনের চাকরি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি— এগুলোর মোহ শুরুতে থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি হয়, আসল সুখ অন্য কোথাও।

বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে এখনো সকালে ঘুম ভাঙে পাখির কিচিরমিচিরে। শীতের ভোরে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটার যে প্রশান্তি, তা বিশ্বের কোনো উন্নত শহর দিতে পারে না। শহরের ব্যস্ত জীবনেও মানুষ এখনো একে অপরের খোঁজ রাখে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ায়। এমন সম্পর্কের উষ্ণতা কি অন্য কোথাও পাওয়া যায়?

বিদেশে যখন হুট করে বৃষ্টি নামে, তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে মনে পড়ে আমার দেশের বর্ষা! আকাশজুড়ে কালো মেঘের খেলা, টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ, ভেজা বাতাসের স্নিগ্ধ ছোঁয়া— এসব বিদেশে পাওয়া সম্ভব নয়।

অনেকে ভাবে, উন্নতির জন্য বিদেশে যেতেই হবে। সত্যিই কি তাই? বাংলাদেশেই এখন অগণিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়, ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, স্টার্টআপ— সবখানেই বাংলাদেশিরা এগিয়ে যাচ্ছে।

একসময় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা অপেক্ষা করতাম, আর এখন? বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উদগ্রীব। কারণ আমাদের দেশ দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্য, শিল্প— সবখানেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

বিদেশে গিয়ে কেউ হয়তো কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন, কিন্তু সেই টাকা দেশে পাঠানোর পরও সেখানে জীবনযাপন করা সহজ হয় না। অথচ, একই পরিশ্রম যদি বাংলাদেশেই করা যায়, তাহলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানো সম্ভব।

বিদেশের চাকরির নিয়মকানুন এত কঠোর যে ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা প্রায় থাকে না বললেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ আছে, উদ্যোক্তা হয়ে কিছু গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে।

অনেকে ভাবে, বিদেশ মানেই বেশি আয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বাংলাদেশেই সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করলে তার চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব। দেশের বাজার ক্রমশ বড় হচ্ছে, মানুষের চাহিদা বাড়ছে, নতুন নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাহলে কেন আমরা নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে ছুটব?

পৃথিবীর যত দেশেই যাই না কেন, দিনের শেষে মনে হয়— বাংলাদেশই আমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন। শুধু অর্থের জন্য, উন্নতির জন্য, স্বপ্ন পূরণের জন্য বিদেশে যেতে হবে— এই ধারণা বদলানোর সময় এসেছে। আমাদের দেশেই সব সুযোগ আছে, আছে শান্তি, আছে ভালোবাসা।

আমি বহু দেশে ঘুরেছি, নানা সংস্কৃতি দেখেছি, আধুনিক জীবনের স্বাদ পেয়েছি। কিন্তু কোথাও বাংলাদেশের মতো প্রাণের উচ্ছ্বাস পাইনি, পাইনি মাটির টান। তাই বারবার ফিরে আসতে চাই এই পরিচিত আকাশের নিচে, আমার গ্রামবাংলার সবুজ মাটিতে, আমার শহরের কোলাহলে। কারণ, এটাই আমার চিরন্তন ঠিকানা।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর