নাটোরে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি বাস আগুনে পুড়ে গেছে । নাটোর শহরের বড়হরিশপুর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা এসব বাসে গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। থানায় এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গতকাল রাতে বড়হরিশপুর এলাকার গণি পেট্রলপাম্পের সামনে ও ভিআইপি হোটেলের পূর্ব পাশে ২০টি বাস দাঁড় করানো ছিল। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ ‘সামি জনি’ ও ‘রাজকীয়’ পরিবহনের দুটি বাসে আগুন জ্বলে ওঠে। পরে ‘সামি জনি’ পরিবহনের অপর একটি বাসেও আগুন ধরে। প্রথম আগুন লাগা বাস দুটি সম্পূর্ণ এবং পরেরটি আংশিক পুড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
খবর পেয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ, নাটোর-২-এর সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলামসহ প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সংসদ সদস্য গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধকারীরা নির্বাচন বানচাল করতে বাস-ট্রাক পুড়িয়ে নাশকতা করছে। তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সদর থানার ওসি নাসিম আহম্মেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরাই বাসগুলোয় আগুন দিয়েছে। তবে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা যায়নি। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রভাব কতটা? আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন ঠান্ডা মাথায় মূল্যায়ন!
প্রকাশিত :
১৯:০১, ১৬ জুন ২০২৫
বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েনের মঞ্চ আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা এতদিন আড়ালে থাকলেও এখন তা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে, যার অভিঘাত পড়ছে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে এবং বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করছে সংশয় ও অনিশ্চয়তা। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই যুদ্ধ কি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বড় কোনো ধাক্কা আনবে?
সরাসরি উত্তর—খুব একটা নয়। তবে ‘না’ বলেই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা যাবে না। পরিস্থিতি বুঝে, বিচক্ষণতার সঙ্গে এগোনোই হবে সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত কাজ।
যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ববাজারে, তবে বাংলাদেশের বাজারের বাস্তবতা ভিন্ন
বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন তা বাজারে বড় প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে অপরিশোধিত জ্বালানি, স্বর্ণ ও ডলারের ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০ ডলার বেড়েছে। ভবিষ্যতে এ দাম আরও বাড়বে কি না, তা নির্ভর করছে যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হয় তার উপর।
কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সেই ধাক্কা পায় অনেক দেরিতে এবং অনেকটাই মৃদু আকারে। কারণ পরিষ্কার—আমাদের শেয়ারবাজার এখনো প্রধানত স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণে। বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ হওয়ায় বৈশ্বিক অস্থিরতার তাৎক্ষণিক প্রভাব এখানে তেমন পড়ে না।
বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত নন, বরং সচেতনভাবে অপেক্ষমাণ
যুদ্ধের খবরের পর ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি কিছু এশীয় বাজারেও ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে তেমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বরং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বিগত কয়েকদিন ধরে একটি স্থিতিশীল এবং খানিকটা ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
ডিএসই-এর একজন অভিজ্ঞ ব্রোকার হাউজের কর্ণধার বলেন, “এখন আমাদের বিনিয়োগকারীরা অনেক পরিণত। আগের মতো আর গুজব শুনেই হুড়োহুড়ি শুরু করেন না। এখন তারা পরিস্থিতি দেখে, বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।”
তেলের দাম বাড়লে তার ছায়া পড়বে অর্থনীতিতে, শেয়ারবাজারেও
বাংলাদেশ প্রায় পুরোপুরি জ্বালানি তেলের আমদানির উপর নির্ভরশীল। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং তেলের দাম যদি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সরকারকে হয় বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে, নয়তো জনগণের উপর সেই বাড়তি মূল্য চাপিয়ে দিতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।
এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, পরিবহন খরচ ও কৃষি উৎপাদনের খরচও বেড়ে যাবে। সবকিছুরই প্রভাব পড়বে উৎপাদন খরচে, কমবে কোম্পানির মুনাফা, এবং একপর্যায়ে শেয়ারবাজারে তা প্রতিফলিত হবে।
তবে এর সবটাই নির্ভর করবে সরকারের বাজেট প্রস্তুতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের ওপর।
ব্যাংক ও বিমা খাত: বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিমুক্ত খাতের দিকে ঝোঁকেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও বিমা খাত এখনও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করা হয়। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় এবং আয় নির্ভরযোগ্য, সেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে।
সম্প্রতি ব্যাংক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—খেলাপি ঋণ কমেছে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতি হয়েছে, এবং গ্রাহকের আস্থা কিছুটা ফিরে এসেছে। বিমা খাতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোতে।
স্বর্ণ ও নিরাপদ সম্পদে ঝোঁক বাড়লেও বাংলাদেশের সুযোগ সীমিত
আন্তর্জাতিক অস্থিরতার সময়ে স্বর্ণের প্রতি ঝোঁক বাড়ে, কারণ এটি ঐতিহ্যগতভাবে ‘সেফ হ্যাভেন’ হিসেবে পরিচিত। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সরাসরি স্বর্ণে বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। ফলে কিছু বিনিয়োগকারী বিকল্প পন্থায় মূল্য সংরক্ষণের চেষ্টা করলেও, সেটি বাজারে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
যদি বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথভাবে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা করে এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে, তবে টাকাও একটি স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ডলার সংকট ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ঝুঁকি
যুদ্ধের প্রভাবে যদি ডলারের মূল্য বিশ্ববাজারে বেড়ে যায়, তাহলে আমদানি খরচ বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদন পর্যন্ত। এতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়বে এবং কিছু উৎপাদনমুখী কোম্পানির আয় হ্রাস পেতে পারে, যা শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রতিফলন ঘটাবে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ডলার সরবরাহে সক্রিয় হয়েছে এবং বাজারে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে সহায়ক।
সার্বিক মূল্যায়ন: যুদ্ধের প্রভাব সীমিত, তবে সচেতনতা জরুরি
সব দিক বিবেচনায় বলা যায়, বর্তমানে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক কোনো বড় ধরনের নেতিবাচক ধাক্কার আশঙ্কা নেই। কারণগুলো হলো:
বিদেশি বিনিয়োগের হার কম,
বাজার অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত,
অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভিত্তি এখনও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।
তবে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে, এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও মুদ্রার অস্থিরতা বাড়লে, তার কিছু পরোক্ষ প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা যেতে পারে। তখন কোম্পানির খরচ বাড়বে, মুনাফা কমবে এবং বাজারে কিছুটা নেতিবাচক সাড়া দেখা দিতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ: আবেগ নয়, বিশ্লেষণই হোক সিদ্ধান্তের ভিত্তি
এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে তথ্য-ভিত্তিক বিশ্লেষণের উপর ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। শক্ত ভিত্তির কোম্পানিতে, যেগুলো নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় এবং যাদের ব্যালান্স শিট সুদৃঢ়, তাতে বিনিয়োগ ধরে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
বিশ্ব রাজনীতি কারো হাতের মুঠোয় নেই। কিন্তু নিজের বিনিয়োগ পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ মূল্যায়নের ভিত্তিতে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহনশীল, পরিণত এবং বিনিয়োগবান্ধব।
তাই যুদ্ধের শব্দে বিচলিত না হয়ে, বাস্তবতার নিরিখে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হোক সবার লক্ষ্য।