দুশ্চিন্তা অথবা অস্থিরতা অনুভব করা আজকাল একটি সাধারণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে । তবে মন খারাপ বা মাথায় হাজার রকম চিন্তা থাকলে সহজে ঘুম আসতে চায় না। দুশ্চিন্তায় অনেকেই রাতের পর রাত জেগে থাকেন। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও উদ্বেগ কাটাতে পারেন না। দুশ্চিন্তা এড়ানোর সহজ কিছু টিপস জেনে রাখতে পারেন।
খুব বেশি দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে শান্ত করে দশ মিনিট ব্যায়াম করুন। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। চোখ বন্ধ করে নিজেকে বোঝান যা আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে তা দীর্ঘস্থায়ি নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পরিপূর্ণ পুষ্টিকর খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। খাবারের উপরেও মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে । অতিরিক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাবার উদ্বেগ ও হাইপার টেনশন বাড়িয়ে দেয়। তাই খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে।
সুস্থ থাকতে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম না করলেই শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শরীর মন দুই সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। রোজ ব্যায়াম করলে ডোপামিন ক্ষরণ হয় যা মন ভালো রাখে।
শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলিকে ত্বরান্তিত করতে সাহায্য করে খনিজ লবণ। তাই মেজাজ ভালো রাখতে মাঝেমধ্যে খাবারের তালিকায় খনিজ লবণ রাখতে হবে।
বাইরে সময় কাটান। বিশেষ করে ভোর বা সন্ধ্যায় সূর্যরশ্মি শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলতে পারে। তাই সারাক্ষণ ঘরকুনো হয়ে বসে থাকবেন না।
প্রকাশিত :
১১:১৩, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ১১:১৯, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
কান্নাকাটিকে অনেকে বিড়ম্বনার বিষয় বলেই মনে করেন। যদিও বাস্তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কান্না মন ও শরীর দুইয়ের জন্যই ভালো। আনন্দে আবেগআপ্লুত হয়েও অনেকে কাঁদেন। দুঃখ বা আঘাতে ব্যথা পেলে কান্না করাটা স্বাভাবিক ভাবে নেয় সবাই। তবে বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের কান্নার প্রবণতা বেশি। তেমনি পুরুষের তুলনায় বেশি কাঁদেন নারীরা। প্রতিটি মানুষই জীবনে কখনো না কখনো কাঁদবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে কান্নারও যে কিছু শারীরিক উপকারিতা রয়েছে তা নিশ্চই জানা ছিলনা? মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বীপেন চৌধুরী জানিয়েছেন কাঁদলে কী ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
ব্যথা উপশম করে
কান্নাকাটি করার ফলে শরীরে এন্ডোরফিন উৎপন্ন হয়, যা কিছু কিছু ব্যথাও উপশম করে। কান্নাকাটি আপনার প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকেও সক্রিয় করে, যা শিথিলতা বাড়ায়, স্ট্রেস বা চাপ কমায় এবং ব্যথা উপশম করে।
চাপ প্রশমিত করে
কান্না কর্টিসলের মতো স্ট্রেস-সম্পর্কিত রাসায়নিকগুলো বের করে দেয়, যা আপনার শরীরকে ধুয়েমুছে ডিটক্সিফাই করে। ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়।
এনে দেয় প্রশান্তির ঘুম
অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটির ফলে শরীরে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের পাশাপাশি প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়। মাঝেমধ্যে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। যার ফলে মাথা ঠান্ডা হয়ে একধরনের প্রশান্তি বোধ করবেন, এটা আপনাকে শান্তিপূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম দিতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে মাঝেমধ্যে একটু কান্নাকাটি করতেই পারেন!
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে
চোখের পানিতে লাইসোজাইম নামক একধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এনজাইম রয়েছে। লাইসোজাইম ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করে আপনার চোখকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
মুড ভালো করে
মনোবিদেরা বলেন, কান্না আবেগ দমন করে আপনার মুড ভালো করে দিতে পারে। কান্নার মাধ্যমে আপনি প্রকারান্তরে ক্ষতিকর হরমোনগুলো শরীর থেকে বের করে দিয়ে ফুরফুরে হয়ে ওঠেন।
কান্নাকাটি করার সময় আমরা দ্রুত নিশ্বাস নিই, এতে মস্তিষ্ক ‘ঠান্ডা’ হয়ে অক্সিজেন নেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
চোখ সুস্থ রাখে, উন্নত করে দৃষ্টিশক্তি
কান্নাকাটি চোখকে স্বাভাবিকভাবে পিচ্ছিল করে, শুষ্কতা প্রতিরোধ করে, কর্নিয়া থাকে আর্দ্র ও পরিষ্কার। ফলে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি কমে। চোখের জল ধুলাবালু ও অন্য বিরক্তিকর পদার্থগুলো ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে। এ ছাড়া নেত্রনালি সতেজ করে চোখকে আরাম দেয় কান্না।
মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে
অনেক সময় বন্ধু বিয়োগ হলে বা ব্রেকআপ হলে আমরা কান্নায় ভেঙে পড়ি। এ ধরনের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে কান্না। তখন মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ও চাপ কাজ করে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে কান্না।
বাচ্চাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ও ঘুমাতে সাহায্য করে
শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে কি কারো ভালো লাগে? কিন্তু কান্নাকাটি শিশুদের জন্যও উপকারী। এটি শিশুদের শ্বাসনালি পরিষ্কার করে। বেশি বেশি অক্সিজেন নিতে সহায়তা করে। এতে তার কষ্ট লাঘব হয়।
‘ছন্দোবদ্ধ’ কান্না শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঠিক বড়দের মতোই কান্নাকাটির পর শিশুদের চাপ ও দুশ্চিন্তা কমে যায়, ফলে সে রিল্যাক্সড হয়। ঘুম ভালো হয়।
প্রশান্তি এনে দেয়
চিৎকার করে বা নীরবে—যেভাবেই কান্নাকাটি করুন না কেন, দেখবেন আপনার মন কিছুটা হালকা লাগছে। কারণ, কান্না আপনাকে প্রশান্তি দিতে পারে। কান্না আমাদের প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে।
যা স্নায়ু শিথিলীকরণের জন্য দায়ী বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ, হজম ও সেরে ওঠার সঙ্গে জড়িত। কান্নার ফলে এন্ডোরফিন বা ‘সুখী হরমোন’ নিঃসৃত হয়, যা প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি করে।
সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করে
মুখে না বলেও কান্নার মাধ্যমে অন্যদের কাছে আমাদের সমর্থন, সহানুভূতি, সান্ত্বনা প্রকাশ করতে পারি। এতে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী হয়।
তবে আপনি যদি প্রায়ই কান্নাকাটি করেন আর এটি যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে বা উদ্বেগের কারণ হয়, তাহলে একজন মনোবিদের শরণাপন্ন হতে পারেন।