‘এতদিনের সম্পর্ক তো এক কথায় নষ্ট হয়ে যায় না’
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সম্প্রতি তার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। শপথ নেওয়ার পর অসুস্থ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে দেখতে যাওয়ার অভিপ্রায় জানিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন।
আজ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল পৌনে ১২টায় ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বাফুফে সভাপতির শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিতে তার বাসায় যান। সেখানে কাজী সালাউদ্দিনের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনাও করেছেন।
আলোচনা শেষে কাজী সালাউদ্দিনের বারিধারার বাসা থেকে বেরিয়ে নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ মাধ্যমের কাছে সেসবের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
কাজী সালাউদ্দিনকে আগেই দেখতে যাওয়ার কথা ছিল নাজমুল হাসান পাপনের। সবশেষ আইসিসি মিটিংয়ে যাওয়ার কারণে দেরি হয়েছে। পরশু দেশে ফিরে আজই বাফুফে সভাপতির বাসায় উপস্থিত হয়েছেন।
সেখানে পাপন তার সঙ্গে দেখা করে আশাবাদী কথা শুনিয়েছেন, ‘তাকে (সালাউদ্দিন) দেখতে যেতে চেয়েছিলাম, তাদের জানাতে বলেছিলাম। আমি আবার এর মধ্যে বাইরে চলে গেলাম। পরশু দিন এসে ওখান থেকে বললো যে কোন দিন আসতে পারেন। আজ আসছি। আমি তো ডাক্তার না। তবে তাকে দেখে ভালো লাগছে, সুস্থ লাগছে। নিজেই হাঁটাচলা করছেন। এত বড় সার্জারির পর রিহ্যাব করতে হবে। আমার মনে হয় কিছু দিন পর আবার তাকে সব জয়গায় দেখা যাবে।’
আরও পড়ুন: ফুটবল বিশ্বকাপ-২০২৬ এর ম্যাচসূচি ও ভেন্যু ঘোষণা
বাংলাদেশ নারী দলের অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে মিয়ানমার না যাওয়া নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। এ নিয়ে বাফুফে সভাপতির পাশাপাশি বিসিবি সভাপতিও মন্তব্যও করেছিলেন।
ওই প্রসঙ্গ নাজমুল হাসান পাপনকে মনে করিয়ে দিলে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘এত বছরের সম্পর্ক একদিনের কথায় নষ্ট হয় না। ছোটবেলা থেকে মাঠে যেতাম তো উনার খেলা দেখতে, উনার জন্য। উনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলার তো বাংলাদেশে আর নেই। সেই বিষয়টি তো আছেই। অনেক সময় অনেক কথায় আমি বা উনি হার্ট হতে পারেন। রিঅ্যাকশন দিলাম। কিন্তু সম্পর্ক তো শেষ হয় না।’
ফুটবলের সমস্যা নিয়ে আলোচনা…
কাজী সালাউদ্দিনকে দেখতে যাওয়ার এক ফাঁকে দেশের ফুটবল নিয়ে দুইজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সালাউদ্দিন ফুটবলকে এগিয়ে নিতে কিছু সমস্যার কথা তুলেছেন। পাপনও তাকে আশ্বস্ত করেছেন সেসব দেখবেন বলে, ‘ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে আগেই বসেছিলাম। তখনই মেজর ইস্যু নিয়ে শুনেছিলাম। আজ দেখা করতে এসেছিলাম। উনি(কাজী সালাউদ্দিন) কিছু সমস্যার কথা বলেছেন। আমি বলেছি সুস্থ হয়ে আসেন। এর মধ্যে আমাকে কিছু কাগজ পত্র পাঠান। কী করা যায় দেখি।’
মাঠের প্রসঙ্গটি ঘুরেফিরে এসেছে আলোচনায়। পাপন বিস্তারিত বলতে গিয়ে জানালেন, ‘একই জিনিস। মেজর সমস্যার মধ্যে খেলার মাঠ নেই। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম বন্ধ হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। খেলার মাঠ নেই, এটা তো সত্যি। পরশু দিন যাচ্ছি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম দেখতে। দেরি যেন না হয়, সেটা দেখবো। আপ্রাণ চেষ্টা করবো। যেন সূচি অনুযায়ী দ্রুত কাজ হয়।’
সরকারি সংস্থার সঙ্গে বসবেন কিনা…
আগে খেলাধুলাতে সরকারি সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন তা আগের চেয়ে কমেছে। এই যেমন প্রিমিয়ার হকি লিগে দীর্ঘদিন ধরে খেলা সোনালী ব্যাংক নেই। এই প্রসঙ্গ তুলে ধরতেই পাপন সময় চাইলেন, ‘আমি এখনও বেসিকে আছি। উনাদের মূল সমস্যা শুনছি, আমাকে আরও স্টাডি করতে হবে। টাইম লাইন ঠিক করতে হবে। আপনি(সাংবাদিক) বলছেন যারা খেলছিল তারা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। তাদেরকে আনা কঠিন ব্যাপার নয়। তবে আগে ওদের আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে তো হবে।’
মেয়েদের ফুটবলের প্রসঙ্গ উদাহরণ টেনে পাপন বলেছেন, ‘মেয়েরা তো ফুটবলে ভালো খেলছে। আমি যদি বলি ওদেরকে স্পন্সর করার কথা তাহলে কেউ না করবে না। আসলে বেসিক না দিতে পারলে কথা বলে লাভ কী? খেলার টার্ফ কিংবা মাঠের কথা উনারা বলেছেন। আমি বলেছি আপনাদেরটা(প্রস্তাব বা পরিকল্পনা) পাঠান।’
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ…
বাংলাদেশে দিনের পর দিন ব্যাঙের ছাতার মতো ক্রীড়া ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন আলোর মুখ দেখছে। যাদের অধিকাংশের আন্তর্জাতিক স্তর কিংবা দেশে বড় কোনও ভিত্তি নেই। সব মিলিয়ে এখন ক্রীড়া ফেডারেশন কিংবা অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যা ৫৫টির মতো।
তবে পাপন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে চাইছেন। আজ বলেছেন, ‘ক্রিকেট ছাড়া ৫৫ টা ফেডারেশন আছে। অনেক ফেডারেশন আছে বাংলাদেশে। জিজ্ঞেস করেন, ৯৫ পারসেন্ট লোক তাদের কথা শোনেনি। ওগুলো নিয়ে যতই যা চেষ্টা করি না কেন আহামরি কিছু করতে পারবো না।’
অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ নিয়ে পাপন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে। ফুটবল অবশ্যই সবার আগে আসবে। এর চেয়ে জনপ্রিয় খেলা তো আর নেই। ফুটবলে কিছু একটা করা যায় কিনা। আমি বলছি না সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে যা যৌক্তিক তা করার চেষ্টা করবো। আমার ইচ্ছা হলো যা কমিট করতে পারবো তাই করবো। কমিট করে যদি করতে না পারি তা করে লাভ নেই।