img

লোক দেখানো ইবাদতের পরিণতি

প্রকাশিত :  ১১:৪৫, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

লোক দেখানো ইবাদতের পরিণতি

যে কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য রিয়া বা লৌকিকতামুক্ত থাকতে হবে। কোরআন হাদিসের নির্দেশিত নিয়মে হতে হবে। মানুষকে দেখানো বা অন্য কোনো দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য হতে পারবে না। কেননা যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করবে, সে ছোট শিরক (অংশীদারি) করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে। তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তাই সেটা বড় আমল হোক বা ছোট আমল হোক। যেমন লোক দেখানো নামাজ, লোক দেখানো দান।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইবাদতের মধ্যে একটি ধূলিকণা পরিমাণ লোক দেখানো মনোভাব থাকলে আল্লাহতায়ালা ওই ইবাদত কবুল করেন না।’

স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে রিয়া নিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহ’র সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সঙ্গে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা সালাত আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে।’ (সূরা নিসা: ১৪২)

কেউ মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য কোনো ইবাদত শুরু করার পরে যদি শয়তানের খপ্পরে পড়ে তার মানসিকতায় লোক দেখানো ভাব চলে আসে কিন্তু সে তা অগ্রাহ্য করে, ঘৃণা করে তার থেকে সরে আসার চেষ্টা করে, তাহলে তার সে ইবাদত শুদ্ধ হবে।

কিন্তু যদি তা না করে লোক দেখানো মনোভাব বজায় রেখে অন্তরে আনন্দ অনুভব করে, তাহলে তার আমল বাতিল হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর ইবাদত করার সময় তাই এই ধরনের মনোভাব যেন আসতে না পারে সে জন্য ইবাদতে একাগ্রচিত্তে দাঁড়ানো উচিত। যে ব্যাক্তি লোক দেখানো কাজ করবে কিয়ামতের দিন তাকে হে রিয়াকারি, হে বিশ্বাসঘাতক, হে অবাধ্য, হে ক্ষতিগ্রস্থ এ চারটি বিশেষ নামে সম্বোধন করা হবে। এরপর তাকে বলা হবে হে ধোঁকাবাজ! তোমার আমল সব বাতিল হয়ে গেছে, তোমার প্রতিদান নষ্ট হয়ে গেছে, আমার কাছে তোমার কিছু পাওনা নেই। তুমি যে উদ্দেশ্যে বা যার জন্য কাজ করেছ যাও তার কাছে গিয়ে তোমার পাওনা বুঝে নাও।(সহিহ আল বুখারি)

অনেক মসজিদে দেখা যায়, কেউ দান-খয়রাত করলে তার নাম প্রচার করা হয়। জুমার দিন দানকারী ব্যক্তিদের নামের তালিকা মাইকে বলা হয়। অথচ ইসলামে নির্দেশ আছে, তোমারা এমনভাবে দান করো যাতে ডান হাতে দান করলে বাম হাত টের না পায়।

মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য গরীব, দু:খী, মসজিদ, মাদ্রাসা, ফকির, মিসকিনদের দান করা অতি উত্তম ইবাদত, তবে তা প্রচার করতে হবে এমন কোনো কারণ নেই। প্রচার করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে এ ইবাদত রিয়াতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টির সঙ্গে মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমল করবে তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘কেউ কখনো কোনো আমল করে এবং তাতে আমার সঙ্গে শরীক করে আমি তাকে ও তার আমল উভয়কে বর্জন করি।’

কেউ কোনো ইবাদত আরম্ভ করার পর বা মাঝে যদি কেউ এসে জায়, দেখে ফেলে তাহলে উল্লসিত হয়ে আরো সুন্দরভাবে ইবাদত করলে সে ইবাদত রিয়া বলে গণ্য হবে। মানুষের মুখে ইবাদতের প্রশংসা শুনে আনন্দিত হওয়া বা গর্ববোধ করাও রিয়া।

একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করছি। সাহাবীরা বললেন– ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ছোট শিরক কি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তা হলো ‘রিয়া’ বা লোক দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের আমলের পুরস্কার প্রদান করবেন, সেদিন রিয়াকারীদেরকে বলবেন- যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো, তাদের কাছ থেকে কোনো পুরস্কার পাও কিনা?’ (মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনে খুজায়মা ) এ হাদিস দ্বারা রোজ কিয়ামতের দিন রিয়াকারীর পরিণতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে আরো বলেন, ‘আমি(আল্লাহ্‌) ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য তারা যেসব আমল করবে, আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অত:পর সেইগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।’ (সূরা আল-ফুরকান: ২৩)

হজরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) শুনিয়ে দিবেন। আর যে লোক দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার বদলে তাকে (কিয়ামতের দিন) দেখিয়ে দিবেন।’ (সহীহ বুখারী)

অনেককে দেখা যায় ইবাদত করে ফলাও করে প্রচার করতে। অনেকে দান-সদকা করে তা প্রচার করতে থাকেন। আমল সর্বদা আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে। আমাদের দেশে রমজান মাসে হুড়োহুড়ি করে জাকাত নিতে গিয়ে মানুষ পদদলিত হয়। এ ধরনের পদ্ধতি রিয়া ভাব জাগ্রত করে। যদি তা হয় তবে সে আমল কবুল হবে না। দুনিয়াবি লাভের উদ্দ্যেশ্যেও ইবাদতের চিন্তা আনা হারাম। এতেও কোনো লাভ হয় না।

ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত একটি বড় বিষয়। আমরা যখন কিছু করার মনস্থির করি তখন তাকে নিয়ত বলে। যদি নিয়ত পরিস্কার থাকে তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে সে ইবাদত কবুল হয়ে জাবে। যদি নিয়ত শুদ্ধ না হয় মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য না হয় তবে সে আমলের মূল্যায়ন নেই। মহানবী (সা.) বলেন, \'নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বাহ্যিক আকৃতি এবং সম্পদের প্রতি তাকান না; বরং তিনি তাকান তোমাদের অন্তর এবং আমলের প্রতি।’ (মুসলিম)


আর তাই, যেকোনো আমল করার আগে তার নিয়ত হতে হবে পরিশুদ্ধ, অন্তর হতে হবে পবিত্র ও শুদ্ধ। আল্লাহুম্মা আমিন।

img

সূরা ফাতিহা না পড়লে কি নামাজ হবে?

প্রকাশিত :  ১০:৫৯, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১১:১৪, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

সূরা ফাতিহা না পড়লে কি নামাজ হবে?

কেউ যদি ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে অথবা সুন্নত ও নফল নামাজের কোনও রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়তে ভুলে যায়, তাহলে তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। তবে যদি কেউ ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে সূরায়ে ফাতেহা ছেড়ে দেয় বা সুরা ফাতেহার জায়গায় অন্য সূরা পড়ে নেয় তাহলে তার নামাজ হয়ে যাবে।

সূরা ফাতিহার ব্যাখ্যা:

সূরা ফাতিহা ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এটি সাতটি আয়াত সম্বলিত এবং আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা এবং তাঁর সাহায্য প্রাপ্তির জন্য আবেদনের একটি সমন্বিত দোয়া। সূরা ফাতিহা মুমিনদের জন্য পথনির্দেশক এবং হৃদয়ে শান্তি প্রদানকারী। এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর সর্বশক্তিমত্তা, তাঁর দয়ালুতা, এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা।

বিশেষভাবে, এই সূরা পঠনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা ও আবেদন জানাতে পারি, যাতে তিনি আমাদের সোজা পথ দেখান এবং আমাদেরকে সুপথে পরিচালিত করেন। এটি নামাজের প্রতিটি রাক'আতে পাঠ করতে হয়, যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সূরা ফাতিহার ফজিলত:

সূরা ফাতিহার অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। এটি পঠনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয় এবং মন ও হৃদয়ে শান্তি আসে। কিছু বিশেষ ফজিলত:

প্রতিদিনের নামাজে প্রয়োজনীয়তা: সূরা ফাতিহা প্রতিদিনের নামাজে অন্তর্ভুক্ত, তাই এটি মুসলিম জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গুনাহ মাফ করা: সূরা ফাতিহা অত্যন্ত বরকতময়, এবং এর দ্বারা মানুষের গুনাহ মাফ হতে পারে।

মনোযোগী হতে সহায়ক: এটি পঠনে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আরও কাছাকাছি পৌঁছায়।

চিকিৎসা: কিছু হাদিসে বলা হয়েছে যে, সূরা ফাতিহা একটি শক্তিশালী চিকিৎসা হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষত শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য।

সূরা ফাতিহা অর্থ:

সূরা ফাতিহা, যা "আল-কিতাবের শুরু" হিসেবে পরিচিত, সমস্ত সূরাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম সূরা, যা সূচনা ও প্রারম্ভের প্রতীক। এটি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের প্রতীক। এই সূরায় আল্লাহর মহিমা ও তাঁর পথের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।