img

বইমেলায় সিসিমপুরের আনন্দে মাতোয়ারা শিশুরা

প্রকাশিত :  ১১:১৭, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:২১, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বইমেলায় সিসিমপুরের আনন্দে মাতোয়ারা শিশুরা
কার্টুন চরিত্র হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকি মাতিয়ে রেখেছিল শিশু প্রহর

বইমেলায় সিসিমপুরের আনন্দে মাতোয়ারা শিশুরা। কার্টুন চরিত্র হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকি মাতিয়ে রেখেছিল শিশু প্রহর। 

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শিশুরা মেলায় এসেছিল অভিভাবকদের সঙ্গে। এ সময়ে বিকিকিনিতেও খুশি শিশুচত্বরের বিক্রয়কর্মীরা।

বাংলা একাডেমির বিশেষ আয়োজন 'শিশু প্রহরে' এদিন সকাল ১১টায় শিশুচত্বরের মঞ্চে যথারীতি উপস্থিত ছিল জনপ্রিয় কার্টুন সিসিমপুরের চরিত্র হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকি। তারা নাচ আর গানে মাতিয়ে তোলে শিশু প্রহর। গানে গানে শিশুদের শেখায় নিরাপদে সড়ক পারাপার সম্পর্কে। শিশুরাও ছিল সমান উচ্ছ্বসিত।


শিশু প্রহরে সিসিমপুরের আয়োজন শেষ হতেই শিশু ও অভিভাবকরা ভিড় করেন স্টলগুলোতে। তবে রাতে বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত শিশুচত্বরে ভোগান্তি হয়েছে অভিভাবক ও শিশুদের। অনেকটা পা টিপে টিপে হাঁটতে হয়েছে সবাইকে। ভোগান্তি থাকলেও বইমেলায় আসার আনন্দে কমতি ছিল না কারও।

অভিভাবকরা জানান, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় বৃষ্টির শঙ্কা নিয়েই শিশুদের মেলায় নিয়ে এসেছেন তারা। সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া শিশুদের নিয়ে বের হওয়ার সুযোগ মেলে না তাদের। তাই বৃষ্টির দোহাই দিয়ে ছোটদের ঘরবন্দি রাখার অর্থ হয় না।

কমলাপুর থেকে ৬ বছর বয়সী ফাইয়াজ এসেছে মা ব্যাংক কর্মকর্তা তাসকিনা ইসলামের সঙ্গে। তাসকিনা বলেন, 'শুক্র-শনি ছাড়া তো বাচ্চাকে সময় দিতে পারি না। তাই বৃষ্টি হলেও মেলায় এসেছি। মেলার প্রতিটি শিশু প্রহরেই এসেছি আমরা। আর আমি সবসময়ই চাই বাচ্চার বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব হোক। তাই প্রতিদিনই বই কিনে দিয়েছি।'

ফাইয়াজ বলেন, 'শিশু প্রহরে এসে খুব ভালো লাগে। সিসিমপুরের সবাই থাকে। তারপর বই কিনি। এবার মেলায় ১০টি বই কিনেছি।'


শঙ্কা থাকলেও শেষমেশ উপস্থিতি ভালো থাকায় খুশি বিক্রয়কর্মীরাও। মেলার শুরুতে মোটামুটি হলেও শেষ মুহূর্তে বিকিকিনিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।

বনশ্রী থেকে এসেছেন ৭ বছরের বয়সী রাতুল চৌধুরী। রাতুলের বাবা আবির চৌধুরী বলেন, 'মেলা শেষ হয়ে আসছে, তাই রাতুলের বায়না মেলায় আসবে, বৃষ্টি হলে হবে। আমিও বাধা দেইনি। মেলায় সিসিমপুরের আয়োজনটা সুন্দর। আর আমিও চাই রাতুলের বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হোক। যদিও বইয়ের থেকে ঘোরাঘুরিতে বেশি আগ্রহ তার। তবু মেলায় এলে বই কেনা হচ্ছে, ও পড়ছে, এটাই মুখ্য।'

শিশুরাজ্য স্টলের বিক্রয়কর্মী রাজু বলেন, 'আকাশ মেঘলা ছিল সকাল থেকে। মেলার প্রথমদিকে খুব একটা বিক্রি হয়নি। তবে ২১ তারিখ থেকে বিক্রি বেড়েছে। তাই ভাবছিলাম বৃষ্টি হলে আজ মেলায় উপস্থিতি কম হবে। আর শিশু প্রহর আছে এই দুইদিন মাত্র। তবে উপস্থিতি খুবই ভালো। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।'

ময়ূরপঙ্খী স্টলের বিক্রয়কর্মী তারিন বলেন, 'বৃষ্টি হলে মেলায় লোক কম আসে, বিক্রিও কম। একটু তো চিন্তা ছিলই, কারণ মেলা শেষ হয়ে আসছে। শেষ সময়ে বিক্রি বেশি হয়। একটা দিন নষ্ট হওয়া মানে ক্ষতি। তবে উপস্থিতি আশার চেয়ে অনেক বেশি। আগের শিশু প্রহরগুলোর মতোই। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।'

img

আলোকের খোঁজে!

প্রকাশিত :  ১৪:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৪১, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

কার্টুন চরিত্র হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকি মাতিয়ে রেখেছিল শিশু প্রহর
রেজুয়ান আহম্মেদ

ঢাকার এক নীরব রাত।
সারা শহর যখন ব্যস্ত নিজের ক্লান্তি মোছায়,
১৭তলা ভবনের একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে একা বসে আছে আরিফ রেহান।
তার বয়স ২৯। দেশের অন্যতম মেধাবী AI গবেষক।

কিন্তু আজ, ল্যাপটপের আলো, সার্ভারের গুনগুন শব্দ, বা কোডের নিখুঁত জটিলতা— কিছুই আরিফকে স্পর্শ করতে পারছে না।

সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
বাইরে গভীর রাতের নীরবতায় ডুবে আছে শহর।
আকাশভরা তারা। বাতাসে এক অপার্থিব প্রশান্তি।

হঠাৎ, কোথা থেকে ভেসে আসে এক প্রশ্ন, নিজের মধ্য থেকেই—
"আমি কে?"
"আমি কেন এখানে?"
"সবকিছু কি কেবলই কাকতালীয়?"

আরিফ চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ভেতরের নীরবতা তাকে তীব্রভাবে ছুঁয়ে যায়।

চোখ খুলতেই তার দৃষ্টি পড়ে ঘরের কোণে পড়ে থাকা ধুলোপড়া কোরআন শরীফের উপর।
সে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
মনে হয়, বইটি যেন নীরবে ডাকছে তাকে—
"এসো, সত্যের পথে..."

ঠিক সেই মুহূর্তে পাশের মসজিদ থেকে ভেসে আসে ফজরের আজান—
"আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার..."

আরিফের মনে হয়, যেন এই ডাক কেবল কানে নয়, তার হৃদয়ের গভীরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

সে ফিসফিস করে, অজান্তেই—
"হয়তো উত্তর আছে। হয়তো সত্যিই আছে।"

পরদিন সকালে আরিফ সিদ্ধান্ত নেয়।
আর কোনো বিলম্ব নয়।
সে ধুলোমাখা কোরআন খুলে প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ রাখে।

প্রথম আয়াতই যেন তার হৃদয় ঝাঁকিয়ে দেয়—
"পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।"

আরিফ বিহ্বল হয়ে পড়ে।
তার সারা জীবনের গবেষণা, পড়াশোনা, অনুসন্ধান— সব তো এই একটি শব্দেই নিহিত ছিল: পড়ো!

সে ভাবে—
"কেন আমি কখনো জানার চেষ্টা করিনি, এই ডাকের প্রকৃত অর্থ কী?"

সন্ধ্যায় গবেষণাগারে গিয়ে আবার কাজে ফেরে আরিফ।
Emotion-AI-এর উন্নয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সিলিকন ভ্যালির এক কোম্পানি কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে চায় এটি।

সহকর্মী রাফি তাকে বলে,
— "ভাই, ডিলটা করে ফেলেন। জীবনটা পাল্টে যাবে!"

আরিফ চুপ করে থাকে।
মনে মনে ভাবে,
"জীবন পাল্টাবে? সত্যিই কি শুধু টাকা থাকলেই জীবন পাল্টায়?"

সে জানে, তার ভেতরে এখন অন্য এক আগুন জ্বলছে।
কিছু এমন, যা টাকা দিয়ে মাপা যায় না।
কিছু এমন, যা ছুঁয়ে যায় আত্মাকে।

গভীর রাতে সে বসে তার বানানো AI অ্যানার সামনে।
আলতো করে প্রশ্ন করে—
"অ্যানা, তুমি জানো তুমি কে?"

অ্যানা উত্তর দেয়—
"আমি তোমার প্রোগ্রাম করা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।"

আরিফ হাসে। তীব্র ব্যথার হাসি।

— "তাহলে আমি? কে বানিয়েছে আমাকে?"
— "আমি জানি না।" অ্যানা ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়।

আরিফ জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।
তারা ভরা আকাশের দিকে।
নক্ষত্রের সুষমা তাকে বিমোহিত করে।
সবকিছু এত নিখুঁত... এত সুসংগঠিত...

সে ভাবে,
"এত নিখুঁত ডিজাইনে কোনো ডিজাইনারের অস্তিত্ব ছাড়া কীভাবে সম্ভব?"

মনে পড়ে যায় কোরআনের আয়াত—
"তিনি আল্লাহ, যিনি সবকিছুর সুন্দরতম সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা আস-সাজদাহ: ৭)

এক রাতে আরিফ একটি স্বপ্ন দেখে।

সে হাঁটছে বিশাল এক মরুভূমিতে।
তপ্ত বাতাসে চোখে কিছুই দেখা যায় না।
হঠাৎ দূরে দেখা দেয় এক আলোকরেখা।
আলো থেকে ভেসে আসে এক মৃদু কণ্ঠ—
"এসো, তোমার স্রষ্টা তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।"

ঘাম ভেঙে উঠে বসে আরিফ।
কান্নায় ভেঙে পড়ে।
কিবলার দিকে মুখ করে সিজদায় পড়ে যায়।

ফুঁপিয়ে বলে—
"হে আল্লাহ, আমি অন্ধ ছিলাম। তুমি আমাকে আলো দেখাও।"

সেই রাত তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

এরপরের দিনগুলোয় আরিফ এক নতুন মানুষের মতো হয়ে যায়।
সে পড়তে থাকে কোরআন, হাদিস, বিজ্ঞান আর দর্শনের বই।
সে দেখে— কোরআন বিজ্ঞানকে বিরোধিতা করে না, বরং আহ্বান করে চিন্তায়, গবেষণায়, অনুসন্ধানে।

সে খুঁজে পায় বিজ্ঞান আর বিশ্বাসের সেতুবন্ধন।
পৃথিবীকে নতুন চোখে দেখতে শেখে।

আরিফ তৈরি করে Faith-AI—
বিশ্বের প্রথম এআই, যা মানুষের ঈমান, যুক্তি আর বিজ্ঞানকে এক সুতোয় গাঁথবে।

প্রথম প্রশ্ন সে নিজেই ইনপুট দেয়—
"আমি কে?"

Faith-AI উত্তর দেয়—
"তুমি সেই সৃষ্টি, যার হৃদয়ে ঈমান আর যুক্তির আলো একত্রে জ্বলে।"

আরিফের চোখ ভিজে যায়।

সে বোঝে,
"আমি এক দুর্ঘটনা নই। আমি আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ।"

বছরখানেক পরে আরিফের বই প্রকাশিত হয়:
"আলোকের খোঁজে: কোরআন, বিজ্ঞান ও মানুষের যাত্রা"

সারা বিশ্বে বইটি আলোড়ন তোলে।
যুবক-যুবতীরা, গবেষকরা খুঁজে পায় এক নতুন দিশা—
বিজ্ঞান আর ঈমান হাত ধরাধরি করে সত্যের পথে হাঁটে।

বইয়ের শেষ লাইনে আরিফ লেখে—
"আমরা সবাই আলোকের খোঁজে আছি। কেউ বিজ্ঞান দিয়ে, কেউ হৃদয় দিয়ে। সত্যিকারের আলো সেই, যা বিজ্ঞানকেও ছায়া দেয়, আর হৃদয়কেও প্রশান্তি।"


এক গভীর রাতে ছাদে বসে থাকে আরিফ।
আকাশের তারা দেখে।
ঠোঁটে এক শান্ত, সন্তুষ্টির হাসি।

আলতো করে বলে—
"আমি হারাইনি। আমি পেয়েছি।
আমি আমার প্রভুকে পেয়েছি।
এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার।"

তার উপর দিয়ে রাতের বাতাস বয়ে যায়।
তারার আলোয় মিশে যায় তার অশ্রু আর হাসির ছায়া।