সুখের পাশপাশি দুঃখও জীবনের অংশ। ব্যস্ত জীবনে নানা কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। সামান্য আনন্দটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে ৷ মন গ্রাস করছে হতাশায়। দিনের পর দিন হতাশা থেকে মানসিক অবসাদ দেখা দিচ্ছে।
মন খারাপ থাকলে অনেকে কারও সঙ্গে শেয়ার করতে চান না। এটা ঠিক নয়। সমস্যা যতই বিরক্তিকর বা বিড়ম্বনার হোক না কেন তা এড়িয়ে যাবেন না। সমস্যা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলুন।
ভালো ঘুম হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাতে ঘুমোনোর সময় মোবাইল দেখবেন না। এতে ঘুম ভালো হয় না। তার বদলে বই পড়ুন কিংবা মন শান্ত করার কোনও মিউজিক শুনুন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বেশিক্ষণ বিছানায় থাকবেন না। তাতে এলোমেলো চিন্তার প্রবণতা বাড়ে।
নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখবেন না। মন খারাপ হলে বাইরে বেরোন। যেখানে ইচ্ছে সেখানে যান। প্রয়োজনে কোনও পার্কে গিয়ে হাঁটতে পারেন কিংবা চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেতে পারেন। কিছুক্ষণ পরে হালকা বোধ করবেন।
মন খারাপ করে এমন কোনও খবর, সিনেমা, সিরিয়াল কিংবা ওয়েব সিরিজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বরং এমন কিছু করুন বা দেখুন যাতে মন ভালো হয়।
মানসিক অবসাদে অপরাধবোধ বেশি করে ঘিরে ধরে। এটা হতে দেবেন না। মনে রাখবেন, পৃথিবীর সব কিছুর দায় আপনার নয়।
সোশাল মিডিয়ায় রিল দেখে বা ভিডিও গেম খেলে সমস্যাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। মানসিক অবসাদ বেশি চেপে বসলে বিশেষজ্ঞর কাছে গিয়ে মনের কথা খুলে বলুন। দেখবেন অনেকটা হালকা লাগবে।
বাসার চাবি কোথায় রেখেছেন তা মনে না পড়া কিংবা বাজার থেকে কী কী কিনতে হবে তা হুট করে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ইদানীং অনেকেই ভুগছেন। এমনটা যে বয়স্কদের হচ্ছে তা নয়। অনেক কম বয়সীদের মধ্যেও এ ধরনের ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। হুট করে সবকিছু গুলিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে ভুলে যাওয়া কিংবা পছন্দের মানুষের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর তারিখ ইত্যাদি ভুলে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা নয়। চলার পথে হুট করে কিছু মনে না রাখত্রে পারলে খানিকটা পিছিয়ে পড়তে হয়। কখনো কখনো অন্যদের সামনে বেশ অস্বস্তিতেও পড়তে হয়।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করছে। দিনের পর দিন একই অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে।
উচ্চস্বরে গান শোনা: গান শোনা খুব ভালো একটি অভ্যাস। গান শুনলে মস্তিষ্ক শীতল হয়। দুশ্চিন্তা দূর হয়। কিন্তু কানে হেডফোন গুঁজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উচ্চস্বরে গান শুনলে মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়। টানা ৩০ মিনিট অতি উচ্চমাত্রার শব্দ শুনতে থাকলে শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণ রূপে লোপ পেতে পারে। শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও লোপ পেতে পারে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম: অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম’ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। অফিসে সারা ক্ষণ কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের সামনে মুখ গুঁজে বসে থাকা, সারাক্ষণ ফোন স্ক্রল করা, স্ক্রিনে গেমস খেলা, ওয়েব সিরিজ দেখা ইত্যাদি কাজগুলো করলে দিনের অধিকাংশ সময় স্ক্রিনে চোখ থাকে। এতে চোখের যেমন ক্ষতি হয়, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও কমে যায়। এতে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে।
অন্ধকারে থাকা: কেউ কেউ অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসেন। দীর্ঘ সময় অন্ধকারে থাকার অভ্যাস মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। এই অভ্যাস মনে বিষণ্ণতা তৈরি করে। আর বিষণ্ণতা মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ধীর করে দেয়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সঠিক রাখতে প্রাকৃতিক আলোতে থাকতে হবে। সূর্যের আলোতে সময় কাটাতে হবে। এতে মেজাজ ভাল থাকে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়ে।
একা থাকার অভ্যাস: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারলে অনেক বন্ধু পাওয়া যায়। কিন্তু ভার্চুয়াল বন্ধুরা কাছের হয় না। এখন বেশিরভাগ মানুষ ভেতর থেকে একা হয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ভীড়-আড্ডা-অনুষ্ঠানে যেতে চান না। পারিবারিক অনুষ্ঠান হোক কিংবা অফিসের পার্টি— সব কিছুই এড়িয়ে চলতে চান। অর্থাৎ নিজের মতো একা থাকতে চান। একা থাকার অভ্যাসও কিন্তু মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা কাছের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় হাসিখুশি ও কর্মদক্ষ হন। তাঁদের স্মৃতিশক্তিও অন্যদের তুলনায় বেশি হয়।
অধিক পরিমাণে চিনি খাওয়া: অতিরিক্ত চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার খাওয়াও মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। আবার বার্গার, ভাজাপোড়া খাবার, আলুর চিপ্স বা কোমল পানীয়ের মতো খাবার স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। তাই এসব খাবারের বদলে খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফল ও বাদামজাতীয় খাবার রাখতে হবে।