মায়ের জন্মদিনে মেয়ের জন্ম, মৃত্যুও একই দিনে
তিন বছরের শিশু ফাইরুজ কাশেম জামিরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবা ও মা মেহেরুন্নেছা জাহান হেলালীর (২৪) সঙ্গে বাসা থেকে বের হয় খাগড়াছড়িতে ঘুরতে যাবে বলে। সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে বাসের টিকেটও কেটে রেখেছিলেন বাবা শাহজালাল উদ্দিন (৩৪)। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ফাইরুজের খাগড়াছড়ি ঘুরে দেখা হলো না আর।
বেইলি রোডের আগুন কেড়ে নিল ফাইরুজের পুরো পরিবারের প্রাণ। শাহজালালের পরিবারের কেউই জানতেন না এই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন তাদের পরিবারের তিন সদস্য। প্রতি শুক্রবার শাহজালার বাড়িতে ফোন করে সবার খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু এই শুক্রবার ফোন না পেয়ে পারিবারের সকলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
শাহজালালকে ফোনে না পেয়ে তার শ্বশুর মুক্তার আলম হেলালী চলে আসেন ঢাকা মেডিকেলে। খুঁজতে থাকেন তার মেয়ে, জামাই ও নাতনিকে। অবশেষ রাত সাড়ে ৯ টায় খোঁজ মেলে তাদের। ততক্ষণে ঢাকা মেডিকেলের মর্গের হিমাগারে চিরনিদ্রায় ফাইরুজরা।
রাত হয়ে যাওয়ায় তখন মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। শনিবার (২ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এই সময় স্বজনদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। মরদেহ নিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন শাহজালালের ভাইয়েরা। সঙ্গে ছিলেন আরও আত্বীয়-স্বজন এবং শাহজালালের সহকর্মীরা।
ফাইরুজের মা মেহেরুনের জন্মদিন ১৪ সেপ্টেম্বর। একই দিনে ফাইরুজ জন্ম নেয়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মা-মেয়ের জন্মদিন উদ্যাপন করা হয়। কেউ জানত না তাঁদের মৃত্যুর দিনটিও এক হবে। কক্সবাজার উখিয়া থানার পূর্ব গোয়ালিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল কাশেমের ছেলে শাহজালাল। তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কার্যালয়ে শুল্ক বিভাগে তিনি কর্মরত ছিলেন।
মুক্তার আলম হেলালী জানান, শাহজালাল স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কেরাণীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায় থাকতেন। তার অফিস থেকে ৩ দিনের ছুটি পেয়েছিলেন। সেই ছুটি কাটাতে পরিবার নিয়ে খাগড়াছড়ি ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী রাজারবাগ এলাকায় গ্রীনলাইন বাসের টিকেটও কেটেছিলেন। সেই জন্য সন্ধ্যায় ৩ জন বাসা থেকে রওনা হন। এরপর বেইলি রোডে ওই ভবনের কোনো একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে উঠেছিলেন। সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে বেইলি রোডের গ্রীন কোজি কটেজের নিচের অংশে আগুন লাগে। খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৬। আর জীবিত উদ্ধার করা হয় ৭৫ জনকে। সাততলা ওই ভবনে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট, খানাস, ফুকো, অ্যাম্ব্রোশিয়াসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট ও দোতলায় কাপড়ের দোকান ‘ক্লজেট ক্লাউড’ ও ‘ইলিয়েন’ ছিল।