img

‘জেড’ ক্যাটাগরির ২৩ কোম্পানির কার্যক্রম পরিবদর্শন করবে ডিএসই

প্রকাশিত :  ০৫:৩৫, ২৭ মার্চ ২০২৪

‘জেড’ ক্যাটাগরির ২৩ কোম্পানির  কার্যক্রম পরিবদর্শন করবে ডিএসই

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-কে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির ২৩টি কোম্পানির সামগ্রিক কার্যক্রম পরিদর্শন ও যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের কোম্পানিগুলো কেন রিটার্ন দিতে পারছে না এবং সময়মতো বার্ষিক সাধারণ সভা করতে পারছে না, তা খতিয়ে দেখবে ডিএসই। ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিএসইসি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

কোম্পানিগুলো হলো অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, আরামিত সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং, বিআইএফসি, জিবিবি পাওয়ার, ইনটেক লিমিটেড, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, নুরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, পিপলস লিজিং, রেনউইক জাজনেশ্বর, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রিং শাইন টেক্সটাইল, আরএসআরএম, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, সাফকো স্পিনিংস, শুহ্নদ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড।

বিএসইসি’র আদেশে বলা হয়েছে, এসব কোম্পানি যথাসময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে ব্যর্থ হয়েছে, টানা দুই বছর ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে অবহেলা করেছে, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এবং পুঞ্জীভূত লোকসান বা ঋণাত্মক আয় পরিশোধিত মূলধনের বেশি, যেগুলো সাধারণভাবে জাঙ্ক শেয়ার হিসাবে বিবেচিত।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি তালিকাভুক্তির পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। এরমধ্যে রয়েছে মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ।

এছাড়া, অ্যাপেলো ইস্পাত কমপ্লেক্স ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৩ সালে শেয়ারবাজার থেকে ২২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। লোকসানে থাকা কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পর শুধুমাত্র এক বছর বিনিয়োগকারীদের ৮ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

ফেনীতে অবস্থিতসোয়েটার রপ্তানিকারক কোম্পানি নুরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার ২০১৭ সালে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৪৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। ডিএসইর পরিদর্শন ও তদন্তে দেখা গেছে, আইপিও তহবিলের ৪১ কোটি টাকার বেশি উদ্যোক্তারা আত্মসাৎ করেছে, যারা পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এটিও তালিকাভুক্তির পর এক বছর ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস সমস্যাগ্রস্ত একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। চার বছর পর চলতি মাসে আবার লেনদেনে ফিরেছে। এর আগে ২০১৯ সালের জুলাই ডিএসই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয়।

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রভাব কতটা? আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন ঠান্ডা মাথায় মূল্যায়ন!

প্রকাশিত :  ১৯:০১, ১৬ জুন ২০২৫

বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েনের মঞ্চ আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা এতদিন আড়ালে থাকলেও এখন তা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে, যার অভিঘাত পড়ছে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে এবং বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করছে সংশয় ও অনিশ্চয়তা। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই যুদ্ধ কি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বড় কোনো ধাক্কা আনবে?

সরাসরি উত্তর—খুব একটা নয়। তবে ‘না’ বলেই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা যাবে না। পরিস্থিতি বুঝে, বিচক্ষণতার সঙ্গে এগোনোই হবে সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত কাজ।

যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ববাজারে, তবে বাংলাদেশের বাজারের বাস্তবতা ভিন্ন

বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন তা বাজারে বড় প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে অপরিশোধিত জ্বালানি, স্বর্ণ ও ডলারের ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০ ডলার বেড়েছে। ভবিষ্যতে এ দাম আরও বাড়বে কি না, তা নির্ভর করছে যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হয় তার উপর।

কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সেই ধাক্কা পায় অনেক দেরিতে এবং অনেকটাই মৃদু আকারে। কারণ পরিষ্কার—আমাদের শেয়ারবাজার এখনো প্রধানত স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণে। বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ হওয়ায় বৈশ্বিক অস্থিরতার তাৎক্ষণিক প্রভাব এখানে তেমন পড়ে না।

বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত নন, বরং সচেতনভাবে অপেক্ষমাণ

যুদ্ধের খবরের পর ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি কিছু এশীয় বাজারেও ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে তেমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বরং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বিগত কয়েকদিন ধরে একটি স্থিতিশীল এবং খানিকটা ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

ডিএসই-এর একজন অভিজ্ঞ ব্রোকার হাউজের কর্ণধার বলেন, “এখন আমাদের বিনিয়োগকারীরা অনেক পরিণত। আগের মতো আর গুজব শুনেই হুড়োহুড়ি শুরু করেন না। এখন তারা পরিস্থিতি দেখে, বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।”

তেলের দাম বাড়লে তার ছায়া পড়বে অর্থনীতিতে, শেয়ারবাজারেও

বাংলাদেশ প্রায় পুরোপুরি জ্বালানি তেলের আমদানির উপর নির্ভরশীল। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং তেলের দাম যদি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সরকারকে হয় বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে, নয়তো জনগণের উপর সেই বাড়তি মূল্য চাপিয়ে দিতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।

এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, পরিবহন খরচ ও কৃষি উৎপাদনের খরচও বেড়ে যাবে। সবকিছুরই প্রভাব পড়বে উৎপাদন খরচে, কমবে কোম্পানির মুনাফা, এবং একপর্যায়ে শেয়ারবাজারে তা প্রতিফলিত হবে।

তবে এর সবটাই নির্ভর করবে সরকারের বাজেট প্রস্তুতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের ওপর।

ব্যাংক ও বিমা খাত: বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিমুক্ত খাতের দিকে ঝোঁকেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও বিমা খাত এখনও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করা হয়। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় এবং আয় নির্ভরযোগ্য, সেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে।

সম্প্রতি ব্যাংক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—খেলাপি ঋণ কমেছে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতি হয়েছে, এবং গ্রাহকের আস্থা কিছুটা ফিরে এসেছে। বিমা খাতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোতে।

স্বর্ণ ও নিরাপদ সম্পদে ঝোঁক বাড়লেও বাংলাদেশের সুযোগ সীমিত

আন্তর্জাতিক অস্থিরতার সময়ে স্বর্ণের প্রতি ঝোঁক বাড়ে, কারণ এটি ঐতিহ্যগতভাবে ‘সেফ হ্যাভেন’ হিসেবে পরিচিত। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সরাসরি স্বর্ণে বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। ফলে কিছু বিনিয়োগকারী বিকল্প পন্থায় মূল্য সংরক্ষণের চেষ্টা করলেও, সেটি বাজারে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

যদি বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথভাবে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা করে এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে, তবে টাকাও একটি স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ডলার সংকট ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ঝুঁকি

যুদ্ধের প্রভাবে যদি ডলারের মূল্য বিশ্ববাজারে বেড়ে যায়, তাহলে আমদানি খরচ বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদন পর্যন্ত। এতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়বে এবং কিছু উৎপাদনমুখী কোম্পানির আয় হ্রাস পেতে পারে, যা শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রতিফলন ঘটাবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ডলার সরবরাহে সক্রিয় হয়েছে এবং বাজারে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে সহায়ক।

সার্বিক মূল্যায়ন: যুদ্ধের প্রভাব সীমিত, তবে সচেতনতা জরুরি

সব দিক বিবেচনায় বলা যায়, বর্তমানে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক কোনো বড় ধরনের নেতিবাচক ধাক্কার আশঙ্কা নেই। কারণগুলো হলো:

বিদেশি বিনিয়োগের হার কম,

বাজার অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত,

অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভিত্তি এখনও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।

তবে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে, এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও মুদ্রার অস্থিরতা বাড়লে, তার কিছু পরোক্ষ প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা যেতে পারে। তখন কোম্পানির খরচ বাড়বে, মুনাফা কমবে এবং বাজারে কিছুটা নেতিবাচক সাড়া দেখা দিতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ: আবেগ নয়, বিশ্লেষণই হোক সিদ্ধান্তের ভিত্তি

এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে তথ্য-ভিত্তিক বিশ্লেষণের উপর ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। শক্ত ভিত্তির কোম্পানিতে, যেগুলো নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় এবং যাদের ব্যালান্স শিট সুদৃঢ়, তাতে বিনিয়োগ ধরে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

বিশ্ব রাজনীতি কারো হাতের মুঠোয় নেই। কিন্তু নিজের বিনিয়োগ পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ মূল্যায়নের ভিত্তিতে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহনশীল, পরিণত এবং বিনিয়োগবান্ধব।

তাই যুদ্ধের শব্দে বিচলিত না হয়ে, বাস্তবতার নিরিখে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হোক সবার লক্ষ্য।


লেখক: রেজুয়ান আহম্মেদ
প্রকাশকাল: ১৬ জুন ২০২৫