img

ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হবে ‘পাগলামি’: বরিস জনসন

প্রকাশিত :  ১৪:৫৭, ০৬ এপ্রিল ২০২৪

ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হবে ‘পাগলামি’: বরিস জনসন

ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করাকে ‘পাগলামি’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

ইসরাইলের কাছে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র বিক্রি কমানোর বিতর্কের সময় নীরব থাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সমালোচনা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। খবর দ্য গার্ডিয়ানের

সোমবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সঙ্গে যুক্ত তিন ব্রিটিশ ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছে। এরপরই ইসরাইলের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসা বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সব প্রধান রাজনৈতিক দলের এমপিরা। সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতিসহ ছয় শতাধিক আইনজীবীর স্বাক্ষরিত চিঠিতেও একই মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে।

ইসরাইল দাবি করেছে, এ হামলা ইচ্ছাকৃত ছিল না। সেইসঙ্গে ত্রাণ বহরের উপর হামলাকে গুরুতর ব্যর্থতা হিসেবেও বর্ণনা করেছে দেশটি। ইতিমধ্যে ইসরাইলি কর্মকর্তারা হামলায় জড়িত দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ডেইলি মেইলের একটি কলামে  লিখেছেন, ডব্লিউসিকে কনভয়ের উপর হামলা ছিল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। 

বরিস জনসন বলেন, যদি পশ্চিমারা ভেঙে পড়তে থাকে, বিশেষ করে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে ইসরাইলিরা রাফায় প্রবেশ করতে পারবে না। গাজায় হামাসকে সামরিক বাহিনী হিসেবে উৎখাত করতে পারবে না ইসরাইল।

তিনি বলেন, আপনারা যারা বলছেন, ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের জন্য এখন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন আপনারা কি একদল খুনি ও ধর্ষকের হাতে বিজয় তুলে দিতে চান?

এদিকে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি লিখেছেন তিন ডজনের বেশি কংগ্রেসম্যান। সেই চিঠিতে সই করছেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ও ডেমোক্র্যাট দলের বর্ষীয়ান রাজনীতিক ন্যান্সি পেলোসিও।

যুক্তরাজ্য এর আরও খবর

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ডুবে শিশুসহ নিহত ৫ | JANOMOT | জনমত

গার্ডিয়ানের নিবন্ধ

img

টিউলিপকে ডুবিয়েছে বাংলাদেশ-ব্রিটিশ রাজনীতির ‘আঁতাত’

প্রকাশিত :  ০৫:৩৯, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

টিউলিপ (সদ্য পদত্যাগ করা ব্রিটিশ ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক) এমন দুটি জগতের অংশীদার হয়ে উঠেছিলেন, যেখানে আলাদা নিয়মে খেলা চলে। এখন তার পরিবারের সুনাম বাংলাদেশ ও ব্রিটেন—উভয় জায়গায়ই কলঙ্কিত। আর তিনি কোনো জায়গাতেই সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছেন না। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এমন বক্তব্য তুলে ধরেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক সলিল ত্রিপাঠী। তার মতে, বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে অদ্ভুতভাবে নীরব থেকেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

সলিল লিখেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্রিটিশ ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। এ বিষয়টি সত্যিই অস্বাভাবিক। ড. ইউনূস বাংলাদেশে অর্থ পাচারকে ‘সরাসরি ডাকাতি’ বলে অভিহিত করে তা থেকে টিউলিপ সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এবং তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের সঙ্গে টিউলিপের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। বিপদে থাকা ব্রিটিশ ট্রেজারি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি চীন সফরে যাওয়া সরকারি প্রতিনিধিদলে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং মন্ত্রীদের আচরণবিধি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য তুলে দেন এবং অবশেষে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন। টিউলিপ তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন।

চলতি মাসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, টিউলিপ তার খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনের কেন্দ্রে একটি দুই-বেডরুমের ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন। টিউলিপ দাবি করেন, এই ফ্ল্যাটটি তিনি তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন। তবে ম্যাগনাসকে তিনি জানান, এই বাড়িটি যে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর উপহার ছিল, তা তিনি সম্প্রতি জানতে পেরেছেন।

টিউলিপ ২০১৮ সাল পর্যন্ত হ্যাম্পস্টেডে তার ছোট বোনের নামে থাকা আরেকটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। এই ফ্ল্যাটটিও হাসিনা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেক ব্যবসায়ী উপহার দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্রিটিশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ীর ভাড়া করা বাড়িতে বসবাস করছেন। ২০১৫ সালে সিদ্দিক প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জয়ের পর তিনি তার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান, বিশেষ করে ব্রিটিশ আওয়ামী লীগের বাংলাদেশি সদস্যদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে ২০১৩ সালের একটি ছবি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ছবিটিতে তাকে তার খালা হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা গেছে। ছবিটি বাংলাদেশে ১২ বিলিয়ন ডলারের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তোলা। টিউলিপ দাবি করেন, এটি স্রেফ একটি পারিবারিক সফর এবং তিনি সেখানে গিয়েছিলেন পর্যটক হিসেবে। ম্যাগনাস তার ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছেন। তবে এখন টিউলিপ বাংলাদেশের ওই চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির তদন্তের মুখোমুখি।

এদিকে, লরি ম্যাগনাস লন্ডনে টিউলিপের বাড়িগুলোর বিষয়েও কোনো নিয়ম ভঙ্গের প্রমাণ পাননি এবং লেনদেনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, তার কাছে তথ্য ছিল সীমিত এবং টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট ভাবমূর্তি ঝুঁকি সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারতেন। তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার টিউলিপের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চাইলে করতে পারেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, টিউলিপ পদত্যাগে বাধ্য হন।

সলিল ত্রিপাঠী আরও লেখেন, তবে হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে হয়তো বিষয়গুলো ভিন্ন হতে পারত। কিন্তু গত বছর আগস্টে হাসিনার ক্রমবর্ধমান অজনপ্রিয় শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তিনি পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। হাসিনা সরকারের আমলে গুম, নিখোঁজ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে যায়। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের ওপর দমনপীড়ন চালানো হয়। ভিন্নমতাবলম্বী, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়। হাসিনা তার পিতার খ্যাতি পুনঃস্থাপনে অনেক কাজ করলেও তার শাসনামলের এত বিরোধিতা সৃষ্টি হয় যে, তার পতনের পর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়ি আক্রমণ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়।

সলিল লেখেন, মুজিবের অসম্মানের জন্য হাসিনা অনেকাংশেই দায়ী। তিনি নিজেকে সারা বিশ্বের কাছে ধর্মীয় মৌলবাদ মোকাবিলায় দৃঢ় অবস্থানে থাকা একজন নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো একজন শক্তিশালী মিত্র পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, টিউলিপ বহু জায়গায়, যেমন—সিরিয়া ও গাজায় মানবাধিকার নিয়ে সক্রিয়ভাবে কথা বলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের দ্রুত অবনতি হওয়া মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অদ্ভুতভাবে নীরব থেকেছেন এবং বারবার বলেছেন যে তিনি কেবল ‘একজন ব্রিটিশ এমপি’। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্কই তার রাজনৈতিক জীবনে বিপদ ডেকে আনে।

বাংলাদেশে রেজিম পরিবর্তনের সুযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই প্রতিশোধ নিতে তাদের পূর্বসূরিদের বিরুদ্ধে মামলা এবং তদন্তের মাধ্যমে বিদ্বেষ চরিতার্থ করে থাকে। কিন্তু হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো (এবং টিউলিপ সম্পর্কে ওঠা প্রশ্নগুলো) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। রাজনীতিবিদদের অভিযোগ তোলার পেছনে যাই উদ্দেশ্য থাকুক না কেন, বাস্তবতা হলো—বিশ্বব্যাংক পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাতিল করেছিল বিশ্বাসযোগ্য দুর্নীতির অভিযোগের কারণে। এ ছাড়া হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষা কর্মীদের দমন করার ঘটনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।