জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বিএসইসি
প্রকাশিত :
১২:৩৩, ২১ মে ২০২৪
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিকে আগামী ২ জুলাই থেকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের বিষয়ে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সোমবার (২০ মে) বিএসইসি’র জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়, শর্তগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি শর্ত লংঘন করলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ওই কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেষ ডিভিডেন্ডঘোষণার তারিখ থেকে বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে পরপর দুই বছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে ব্যর্থ হলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।
এর পাশাপাশি আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে কোনো রিট পিটিশন বা আদালতে বিচারাধীন কোনো আইনি প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ উপ-বিচারের বিষয় বা জোরপূর্বক ঘটনা ঘটলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছর সময় পর্যন্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংস্কার বা বিএমআরই (ভারসাম্য, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন এবং সম্প্রসারণ) এর জন্য এই ধরনের কোনো সময় ব্যাতীত ন্যূনতম ছয় মাস ধরে একটানা উৎপাদনে না থাকলে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।
এছাড়াও পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা যাবে।
এছাড়া কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত বা অনুমোদিত ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ পরিশোধ বা বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে স্টক এক্সচেঞ্জ তা জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারে।
ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ছাড়া জেড ক্যাটাগরিভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের শেয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
ফলে বিএসইসির অনুমতি ছাড়া তারা ওই কোম্পানির কোনো শেয়ার কিনতে, বেচতে বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। টি+৩ ভিত্তিতে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের লেনদেনের নিষ্পত্তি হবে।
শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও আগামীকালের পূর্বাভাস -
প্রকাশিত :
১৯:০১, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ১৯:০১, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের শেয়ার বাজার গত কয়েক মাসে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাজারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামীকাল শেয়ার বাজারের গতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে, তবে কিছু সেক্টরে বিশেষ গতিশীলতা দেখা যাবে।
গত সপ্তাহের বাজারের ওঠানামার প্রেক্ষিতে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী কিছু নির্দিষ্ট সেক্টরে মনোযোগ দিচ্ছেন। ব্যাংকিং সেক্টর, ফার্মাসিউটিক্যাল, এবং প্রযুক্তি খাতগুলোতে শেয়ার দর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, নির্মাণ ও বস্ত্র খাতে কিছুটা স্থবিরতা দেখা গেছে। এসব প্রবণতা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোন সেক্টর ভালো করতে পারে?
১. ব্যাংকিং সেক্টর
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত গত কয়েক মাসে মিশ্র ফলাফল দেখালেও, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ব্যাংকিং সেক্টরে পুনরায় উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্যের সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক নীতিগুলি কার্যকর হচ্ছে, যা আগামীকালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংকিং সেক্টরকে আকর্ষণীয় করতে পারে। ব্যাংকগুলোর আয় বাড়তে পারে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে এবং ঋণের মানোন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আগামীকাল ব্যাংকিং সেক্টরের দিকে বেশি ঝুঁকতে পারেন।
২. ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর
ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর বরাবরই শেয়ার বাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। বিশেষত, বাংলাদেশে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকাল এই সেক্টর ভালো করতে পারে, বিশেষ করে যারা ঔষধ রপ্তানি করছে বা দেশে চাহিদা পূরণ করছে।
৩. প্রযুক্তি সেক্টর
প্রযুক্তি খাত সাম্প্রতিক সময়ে বেশ লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, এবং সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো বিশেষত ভালো ফল দেখাচ্ছে। প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ার ফলে ভবিষ্যতে এই সেক্টরে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল প্রযুক্তি খাতের শেয়ার দর কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
৪. টেলিকম সেক্টর
টেলিকম সেক্টর বাংলাদেশে অন্যতম বড় এবং স্থিতিশীল খাত হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবার প্রসার ঘটায় এই খাতটি ক্রমাগত শক্তিশালী হয়েছে। মোবাইল ডেটার চাহিদা বাড়তে থাকায় এবং ৫জি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের ফলে টেলিকম সেক্টর বিনিয়োগের জন্য ভালো হতে পারে। আগামীকাল এই সেক্টরে শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে।
কোন সেক্টরগুলোতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন?
১. নির্মাণ সেক্টর
নির্মাণ খাত সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা দুর্বল ফলাফল প্রদর্শন করছে। যদিও দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নির্মাণ খাতে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দামের অস্থিতিশীলতা এই খাতের শেয়ারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের এই সেক্টরে বিনিয়োগের আগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
২. বস্ত্র সেক্টর
বস্ত্র খাতও বর্তমানে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে রপ্তানি হ্রাস পাওয়া, এবং ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এই খাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে বস্ত্র খাত শক্তিশালী, তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সেক্টরে আগামীকালের বাজারে শেয়ারের দাম নিম্নমুখী থাকতে পারে।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের উপর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরও বড় প্রভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এবং চীনের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সতর্ক হয়ে উঠেছেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের এই মন্দাভাব বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে না, কারণ দেশের শেয়ার বাজার মূলত অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীদের উপর নির্ভরশীল। তবুও, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিতিশীলতা কিছু খাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন পেট্রোলিয়াম ও শক্তি খাত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামীকাল বিনিয়োগকারীদের কৌশলী হওয়া উচিত। মিশ্র প্রভাবের কারণে বাজারে একদিকে সুযোগ থাকবে, আবার অন্যদিকে কিছু ঝুঁকিও থাকবে। যাঁরা কম ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁরা ব্যাংকিং, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং টেলিকম সেক্টরের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। অন্যদিকে, যাঁরা অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য প্রযুক্তি খাত এবং কিছু অংশে বস্ত্র খাত আকর্ষণীয় হতে পারে।
তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাজারের পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। আগামীকাল শেয়ার বাজারে কোনও বড় পরিবর্তন না হলেও, সঠিক সেক্টরে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম