img

ব্রিটেনে বাংলাদেশিরা কি ‘বিপদে’ পড়বেন

প্রকাশিত :  ১০:১১, ২৬ মে ২০২৪

ব্রিটেনে বাংলাদেশিরা কি ‘বিপদে’ পড়বেন

সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসন রোধে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্রিটেনজুড়ে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। 

২০১১ সালের ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫২৯ বাংলাদেশি ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে ব্রিটেনে বসবাস করছেন। এঁদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ব্রিটেনেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বাকি ৪৮ শতাংশ বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে জন্ম নিলেও পরবর্তী সময়ে ‘ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপের ছয়টি রুট দিয়ে, বিশেষত ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। ২০২৩ সালে ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গত বছরে ইতালিতে ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের একটি বড় অংশ সম্প্রতি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। অবৈধভাবে প্রবেশ করা এসব অভিবাসীর অনেকেই শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যের আদালতে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। ফল হিসেবে, ব্রিটেনে উদ্বেগজনকভাবে শরণার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাসাইলাম ইনফরমেশন ডেটাবেজের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৪ হাজার ২৫৮ জন আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে ‘প্রোটেকশন স্ট্যাটাস’–এর জন্য আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭১ শতাংশ আবেদনকারীর আবেদন খারিজ করা হয়েছে। 

বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে এ রকম আশ্রয়ের আবেদন বেড়ে যাওয়ার কারণে তা ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে। 

এখানে বলে রাখা দরকার, ব্রিটিশ সরকারের প্রাইভেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী তারা আবেদনকারীর কোনো প্রকার তথ্য প্রকাশ করে না। কাজেই এই আশ্রয়প্রত্যাশীরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, নাকি বিদেশে যাওয়ায় পর তাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, নাকি তাঁরা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন, তা ধারণা করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে অবৈধ অভিবাসন রোধে কঠোর নীতি প্রয়োগ নতুন কোনো বিষয় নয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই এর ধারাবাহিকতা চলছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা এই শরণার্থীর অনেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বা ব্রিটেনে আশ্রয় নিতে চান রাজনৈতিক কারণে।

১৯৫১ সালে স্বাক্ষরিত রিফিউজি কনভেনশন অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসব আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন যাচাই–বাছাই করে। তবে সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি তারা রুয়ান্ডার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে, যার আওতায় যুক্তরাজ্যে আসা অবৈধ অভিবাসীদের একটি বড় অংশকে রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এই অভিবাসীদের যাবতীয় আইনি কার্যকলাপ যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত হলেও তাঁদের রুয়ান্ডায় রাখা হবে। পরবর্তী সময়ে আইনি ধাপ শেষে তাঁদের আবার রুয়ান্ডা থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বেলায়ও এ রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল। অবৈধ অভিবাসীদের পাপুয়া নিউগিনিতে পাঠিয়ে দিয়ে পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক অভিবাসীকে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

ব্রিটিশ সরকারের কঠোর অভিবাসননীতির কারণ হিসেবে প্রথমেই বলা যেতে পারে যে ব্রিটেনে অবৈধ অভিবাসন রোধে সরকারের ওপর বহুমুখী চাপ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানান চ্যালেঞ্জ ব্রিটিশ সরকারকে নানামুখী প্রতিকূলতার মধ্যে ফেলেছে।

অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ বাজেটে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ১৯৫১ সালের কনভেনশন অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকার এই অভিবাসীদের থাকা–খাওয়া, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা এবং প্রয়োজনে চাকরি না থাকলে তাঁদের বেকার ভাতার ব্যবস্থা করতে চুক্তিবদ্ধ। এই চাপ মোকাবিলায় তারা এসব অভিবাসীকে রুয়ান্ডায় পাঠাচ্ছে, যাতে অভিবাসীদের পেছনে বরাদ্দ বাজেটের কিছুটা হলেও সাশ্রয় করা যায়। এতে অর্থনৈতিক মন্দা তথা মূল্যস্ফীতিজনিত অর্থসংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।

ব্রিটেনের কঠোর অভিবাসননীতির প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক। কোভিড–পরবর্তী সময়ে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্রিটেন এবং ইউরোপের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। এ যুদ্ধে ইউক্রেনকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করায় ব্রিটেনকে তার নিজস্ব বাজেট থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের অর্থনীতির ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রদান করতে হচ্ছে।

ব্রিটিশ সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ব্রিটেনে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। যেহেতু ব্রিটিশ সরকার ইউক্রেনকে আর্থিক ও মানবিক দিক থেকে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই ব্রিটেন তাদের সামগ্রিক বাজেটের একটি বড় অংশ ইউক্রেনের পেছনে ব্যয় করছে। ফলে যুক্তরাজ্য অন্যান্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে নতুন কোনো অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি ব্রিটেনের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে না পারে।

রুয়ান্ডা সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে তারা কেন যুক্তরাজ্য সরকারকে সাহায্য করতে আগ্রহী, তার বিভিন্ন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথমত, রুয়ান্ডা বর্তমানে তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে আফ্রিকার দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। 

তবে রুয়ান্ডা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। সে দেশের সরকার এ কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। বলতে গেলে এই অভিযোগগুলো ঢাকার লক্ষ্যে বা নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় রুয়ান্ডা সরকার যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এই চুক্তির অন্যতম কারণ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ। রুয়ান্ডা ধারণা করছে, যুক্তরাজ্য সরকার রুয়ান্ডায় বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করবে। যেহেতু রুয়ান্ডা তার অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করছে, তাই এই সময় বিদেশি বিনিয়োগ রুয়ান্ডার জন্য ব্যাপক সুফল বয়ে আনবে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য থেকে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় দিলে রুয়ান্ডায় ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আসা বিনিয়োগের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।

তৃতীয়ত, রুয়ান্ডায় কর্মক্ষম লোকবলের সংকট রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে এসব অভিবাসীকে কাজে লাগানোরও পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। বলে রাখা ভালো, ইইউ-তুরস্ক চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপে শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে অন্যতম রুট তুরস্ককে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দিয়েছিল (সূত্র: ইউরোপীয় কমিশন)।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, রুয়ান্ডার এই পদক্ষেপ তাদের গণতন্ত্রের দুর্বলতা ঢাকার একটি প্রচেষ্টা। কিন্তু ব্রিটেনের সুশীল সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরা এ ধরনের নীতিমালার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ করছেন। 

তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের সাধারণ জনগণ এই অবৈধ অভিবাসীদের বোঝা মনে করছেন না; বরং যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদেরা রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে অবৈধ অভিবাসনকে সামনে আনছেন। তাঁরা ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, গণতন্ত্র সুরক্ষাসহ মানবিক সংকটে ব্রিটেনের প্রতিশ্রুতি বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক চুক্তি এবং বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি কোনো নতুন বিষয় নয়। এর আগে ২০১৭ সালে ইউরোপে বসবাসরত প্রায় ৯০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এসওপি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির আলোকে ইউরোপে যেসব বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী আছেন, তাঁদের যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে আশ্রয় না পেলে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে।

সে সময় মানবাধিকারকর্মীরা এর ব্যাপক সমালোচনা করে বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানের মতো দুর্বল রাষ্ট্র থেকে আসা অভিবাসীদের বেলায় ভিসা নীতি প্রয়োগের ভয় দেখিয়ে এই চুক্তি করতে বাধ্য করেছিল। সে সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই পদক্ষেপ সমালোচিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে করা চুক্তিতে এ রকম কোনো নীতি আছে কি না, সে সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণা পাইনি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে বাংলাদেশে যাঁরা অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের থেকে সরকারকে কোনো রকম সুপারিশ করার সুযোগ ছিল না। এ চুক্তি সম্পর্কে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ধারণা কারও কাছে নেই।

এখানে আমাদের আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশি যাঁরা আছেন, তাঁদের অধিকার কতটুকু সুনিশ্চিত হচ্ছে? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে প্রতিবছর আমরা এই বৈধ এবং অবৈধ পথে যুক্তরাজ্য যাওয়া অভিবাসীদের মাধ্যমে বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছি। কাজেই তাঁদের প্রতি আমাদের একধরনের দায়বদ্ধতা রয়েছে।

এখন তাহলে বাংলাদেশের করণীয় কী। প্রথমত, বাংলাদেশ সরকারকে পুরো ব্যাপারটাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। আমাদের অভিবাসননীতিতে এই অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কী ধরনের কাজ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এ বিষয়ে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যাঁরা অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে গেছেন, তাঁরা দিনের পর দিন আবেদনপ্রক্রিয়া–সংক্রান্ত মামলা–মোকাদ্দমা চালানোর কারণে আর্থিক অনটনে রয়েছেন। তাঁদের স্বার্থে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে দ্রুত আলাদা হটলাইন বা সেলের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন অবৈধ অভিবাসীরা দ্রুত হাইকমিশন থেকে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ পান। বিভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ থেকে তাঁরা যেন যুক্তরাজ্যে পাঠানোর সুযোগ পান। অভিবাসীরা যেন যেকোনো আইনি জটিলতায় বিশেষজ্ঞ আইনবিদদের সাহায্যের সুযোগ পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশি অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে কি না, সে বিষয়ে আমাদের কোনো পর্যাপ্ত ধারণা নেই। তবে এই সিদ্ধান্ত বহাল হলে দ্রুত রুয়ান্ডা সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে, যেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা রুয়ান্ডায় থাকতে পারেন বা সেখানে কাজের সুযোগ পান।

চতুর্থত, ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসন রোধে বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে লোক নিয়োগে আগ্রহী। ব্রিটিশ সরকারের এই আগ্রহ সত্যি হলে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করা। নতুন করে লোক না নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পরিবারসহ যাঁরা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন, তাঁদের যেন বৈধ অভিবাসনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সে লক্ষ্যে প্রচলিত আইনি কাঠামোর বাইরে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

পঞ্চমত, অনেক অবৈধ অভিবাসী দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হতে পারেন। রাজনৈতিক কোনো কারণে বা ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে বিদেশে যাওয়ার কারণে তাঁরা যেন বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ সমস্যাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।

সবশেষে দেশে ফেরত আসা অভিবাসীদের অনেকেই যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের পেশাগত দক্ষতা নিয়ে এসেছেন। তাঁদের এই দক্ষতাকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, সে লক্ষ্যে সরকারকে নতুন কর্মপরিকল্পনা গঠন করতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছর বহু মানুষ কাজ করতে আসছেন। অথচ নিজ দেশে কাজ না পেয়ে বাংলাদেশিরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। কাজেই বাংলাদেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমাদের দেশের মানুষের জন্য সৃষ্টি করতে হবে কাজের সুযোগ ।

মতামত এর আরও খবর

|| মকিস মনসুর ||

img

শিক্ষকদেরকে অসম্মান করা জাতির জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক!

প্রকাশিত :  ১৮:৫৪, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|| মকিস মনসুর ||

শিক্ষকের ঋণ কখনো শোধ করা যায় না। আজ আমরা জীবনের যেখানেই প্রতিষ্ঠিত থাকি না কেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক—শিক্ষিকাদের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। শিক্ষাকে যাবতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলে, শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম।বলতে গেলে এর বিকল্প নেই। শিক্ষার হাতেখড়ি যদিও শুরু হয় পরিবার থেকে, কিন্তু তার পূর্ণতা পায় একজন শিক্ষকের হাতে। 

মহান আল্লাহু রাব্বুল আলামিন শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। তাদের সম্মানে ভূষিত করেছেন। ফলে সমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। 

পবিত্র কোরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে।

মহান আল্লা তা’আলা বলেন, ‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক, আয়াত ১—৫)

আমাদের প্রিয় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা  (সা:) (আ:) এরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব—শিষ্টাচার শেখো। এবং যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো, তাকে সম্মান করো। (আল—মুজামুল আওসাত, হাদিস ৬১৮৪)

মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য আমাদের কোনো না কোনোভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যেতে হয়। বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়নে জানা যায়, মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ছিল গুরুগৃহ, অর্থাৎ জ্ঞান অর্জনের জন্য গৃহ ত্যাগ করে শিক্ষাগুরু বাড়িতে যেতে হতো। পবিত্র হাদিস হিসেবে প্রচলিত আছে, জ্ঞান অর্জনের জন্য সূদুর চীন দেশে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষার মূলমন্ত্রই হলো সঠিক জীবন দর্শন দান। এই জীবন দর্শন দান করেন শিক্ষক। একটি শিশু যখন শিক্ষকের কাছে যায় তখন মন থাকে খালি ক্যানভাস। শিক্ষক তাঁর জ্ঞানের তুলি দিয়ে সেখানে জীবনের ছবি আঁকেন। ধীরে ধীরে মানব শিশুকে মানবে পরিণত করেন। জগতের ভালো—মন্দ, ন্যায়—অন্যায় বিচার—বিশ্লেষণের বোধ সঞ্চারিত করেন। স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন, ‘মানুষের অন্তর্নিহিত পরিপূর্ণ বিকাশই হলো শিক্ষা, আর তাঁর পথপ্রদর্শক হলেন শিক্ষক।’ তাই শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড, তবে শিক্ষক হলেন সেই মেরুদণ্ড গড়ার প্রধান কারিগর। একজন শিক্ষকের ভূমিকা ব্যতিত কোনো জাতিই শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হতে পারে না।

একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা—মা’ আমাদের প্রথম শিক্ষক হলে ও আসল শিক্ষক হলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষক যারা আমাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন।

শিক্ষকরা জাতিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে নিজেরা মোমের মতো নিঃশেষিত হন। একজন শিক্ষক নিজে শিক্ষা অর্জন করার পর পরই অপরকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত ও চরিত্র গঠনে ভূমিকা পালন করে থাকেন। 

ইদানিং বাংলাদেশের বতমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লিখতে বাধ্য হচ্ছি, কোনো শিক্ষক যদি ভুল করেন প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্ত করে প্রসাশনিক অ্যাকশন নেওয়ার বিধান রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচার করা হবে। এটাই বাস্তবতা। 

একজন শিক্ষকের দোষ/গুণ/ভালো/মন্দ অনেক বিষয় থাকতেই পারে। সে বিচারের ভার শিক্ষার্থীরা নেবে কেন? 

সারা দেশব্যাপি শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানোর এক হিড়িক দেখা যাচ্ছে। ফেইসবুক ও টিভি চ্যানেল এবং বিভিন্ন পত্রিকার নিউজে বেশ কিছু ছবি এসেছে, একজন স্যারকে জো\'রপূর্বক পদ\'ত্যাগ করানোর সময় স্ট্রো\'ক করেছেন। সত্য কি না জানিনা গতকাল নাকি এই সম্মানিত শিক্ষক মারা গেছেন। আরেকজন ম্যাডামকে জুতা গলায় দেওয়া হয়েছে। অন্যান্যদেরকে মার পিট করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শারিরীর আক্রমন করেছে শিক্ষকদের এ এক হৃদয়বিদারক কান্নার চিত্র। একজন শিক্ষক! 

সারা জীবন শিক্ষকতা পেশায় কাটিয়ে ছাত্রদের বেত্রাঘাতে তার পিটেই আকা হলো ক্ষতবিক্ষত বাংলাদের মানচিত্র ২০২৪? ক্ষমা করো হে জাতির শিক্ষাগুরু আমরা তোমার নিরাপত্তা দিতে পারিনি আমরা লজ্জিত!!!

শিক্ষকদের বিচার করার দায়িত্ব কখনো শিক্ষার্থীদের হতে পারে না। প্রশাসন আছে, আইন আছে, আছে পরিচালনা কমিটি। এমন বেয়াদবি শিক্ষার্থীরা করবে কেন? কোন ভাবেই ছাত্ররা বা অন্যরা শিক্ষককে অপদস্ত হেনাস্থা করে জোর পুর্বক পদত্যাগ করানো, এটা অপ —সংস্কৃতি, অমানুষিক, অমানবিক, 

শিক্ষকদেরকে অসম্মান করা জাতির জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক! 

ফেইসবুকে করা একজন ব্যক্তির কমেন্ট পুরাপুরি তুলে ধরছি, কোন শিক্ষকের অপরাধের পক্ষে আমি নই। শিক্ষক অপরাধ করেছেন, দালালি করেছেন, নানান রকম অনিয়ম করেছেন, অতএব তাঁকে শাস্তি পেতে হবে, আমি আপনার সাথে একমত। এমন অপরাধী কোন শিক্ষক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে না চাইলে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করতে হবে,তাই বলে ছাত্ররা ইচ্ছামত বেয়াদবি করবে? মিডিয়ার সামনে এসে ‘আমি অমুক স্যারের মাথায় থাপ্পড় মেরে উল্লাস করছে আবার আরেকজন এর গায়ে হাত তুলতে পেরেছি!’ বলে বিজয়ের হাসি হাসবে? সেই চিত্র বা সাল কি ভূলে যাবে জনগন। শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করার এটাই কি একমাত্র পদ্ধতি?

সদ্য পদত্যাগ কারী একজন শিক্ষকের মনে আকুতি। 

কী দেখার কথা, কী দেখছি?

সদ্য পদত্যাগ করা একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের লেখনিঃ

আমি যেহেতু প্রায় ২২ বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে ছিলাম তাই ব্যর্থতা আমারই। 

প্রিয় এলাকাবাসী ক্ষমা করবেন চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমাদের যেমন সীমাবদ্ধতার অভাব নেই, তেমন চেষ্টারও ত্রুটি ছিল না। কিন্তু পারিনি।

আসলে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় ছাত্রদের জন্যে, ভাটি এলাকার এই কলেজটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দরিদ্র এলাকা ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্য।

সুতরাং তাদের চাহিদা মোতাবেক সাজাতে হয়।

আমি আমার ছাত্রদেরকে নিজের সন্তানের মত ভালোবেসেছি।

তাদের উত্তম ভবিষ্যৎ এর জন্য চেষ্টা করেছি, আদর দিয়েছি, সোহাগ করেছি, ধমক দিয়েছি, বুকে টেনে নিয়েছি, কিন্তু চাহিদা পুরন করতে পারিনি।

ইদানিং এ আমার কিছু কথার দ্বারা আমি আমার সন্তানসম ছাত্রদেরকে বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

তাই তারা আমাকে আর চায়না। ক্ষমার কোনো সুযোগও নেই, বিচার ছাড়াই ফাঁসির ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

আমি মেনে নিয়েছি।

সারা পৃথিবীতেই তো সন্তানের জীবন সাজাতে গিয়ে অনেক বাবা—মা রাই নিঃস্ব হচ্ছে, পথে বসছে। আমি ব্যতিক্রম হব কেন?

তারাতো কোমলমতি বুঝতে পারেনি এক বাবাকে শাস্তি দিতে গিয়ে তারা তার আরেক ভাই /বোনের রিজিক বন্ধের হাতিয়ার হয়েছে।

আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আর কি দোষ? সারা বাংলাদেশে এত এত পদত্যাগ, ওরা যদি একটা দু\'টা পদত্যাগ না করাতে পারে।

তাহলে এটা তাদের ব্যর্থতা মনে হবে!

পৃথিবীর সব বাবার মত আমিও সব সময় আমার সন্তানের বিজয় দেখতে চাই।

আমি একজন ব্যর্থ মানুষ, তবুও স্বপ্ন দেখতাম এই ক্যাম্পাস থেকে সাদা কাফনে বা লাল গালিচায়, ফুলেল শুভেচ্ছায় বিদায় হবো, আমার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। এক নিমিষেই সব শেষ।

এই শেষ বয়স এসে পৃথিবীর কারোর প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, কষ্ট পেয়েছি, প্রাণ খুলে কেঁদেছি, হালকা হয়েছি, মেনে নিতে চেষ্টা করছি।

সবকিছুর ফয়সালাতো উপর থেকেই হয়।

আল্লাহর কাছে বলেছি \"হে আল্লাহ তোমার দুনিয়া তো অনেক বড়, তুমি নিশ্চয়ই কোন না কোন জায়গায় আমার জন্য, আমার সন্তানের জন্য উত্তম রিজিক এবং সম্মানের ব্যবস্থা করে রেখেছো।

“আমি আশা করতে চাই বা বলতে চাই.. বাংলাদেশের তথা পৃথিবীর কোন ছাত্র যেন তার নিকৃষ্ট শিক্ষকটিরও রিজিক বন্ধের হাতিয়ার না হয়।

কারণ, এই পদ্ধতি যে কত বেদনার, কত কষ্টের তা আমি ভুক্তভুগি ভালোভাবে টের পেয়েছি।

আমি যেন এই পদ্ধতিতে বিদায় হওয়ার পৃথিবীর শেষ শিক্ষকটি হতে পারি।

শিক্ষক বিদায় করার অনেক পদ্ধতি আছে। সেগুলো প্রয়োগ করা হোক, ছাত্র দিয়ে কেন?

ভালো থেকো ‘চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ’ খুব ভালো থেকো”। আমীন।

চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের সদ্য পদত্যাগ কারী একজন শিক্ষকের মনের আকুতি এই লেখা পড়ে খুউব লজ্জা হচ্ছিলো, এ কি হচ্ছে, এটা কোন ধরনের অমানুষিক ও অমানবিক কার্যক্রম। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুর বলেছিলেন মানুষ তো সবার ঘরে জন্মায়, কিন্তু মানুষ্যত্ব সবার ঘরে জন্মায় না।”

স্যার এ পি যে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, মেধাবী হয়ে গর্ব করার কিছু নেই, শয়তান ও কিন্তু মেধাবী হয়। মনুষ্যত্ব ও সততা না থাকলে সে মেধা ঘৃণিত, কোনো সুস্থ মানুষ এইসব অপকর্ম সাপোর্ট করতে পারেনা। এসব বন্ধ করানো হচ্ছে না কেনো, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা কি চোখ থাকিতে অন্ধ হয়ে আছেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব  ও একজন শিক্ষক ছিলেন। প্লিজ একটু চোখ খুলুন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, সম্মানিত শিক্ষকদের এই অপমান কেনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না, এটা খুবই দুঃখজনক।

আগে শিক্ষক দেখে শিক্ষার্থীরা ভয় পেতো, এখন শিক্ষার্থীদের দেখে শিক্ষককেরা ভয় পাচ্ছে । জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে; আমাদের প্রাণের বাংলাদেশে শিক্ষকদের প্রতি কতিপয় নামধারী মেধাবীদের সন্ত্রাসী আচরনে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মানুষের মধ্যে মানুষ্যত্ব এবং পশুত্ব দুটোই থাকে। কিন্তু অমানুষের মধ্যে আদৌ মানুষ্যত্ব থাকেনা, যা থাকে তার পশুত্ব।

প্রকৃত শিক্ষা যে অর্জন করেছে সে কখনও শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করতে পারে না, এসব ঘটনার জন্য আমি বা আমরা সব ছাত্রদের দায়ি করতে চাই না।

যে  সব নামধারী ছাত্র আজ তার শিক্ষকের গায়ে হাত তুলছে আগামীতে সে তার বাবার গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা বোধ করবে না।

এসব বন্ধ না করা হলে শিক্ষকের অভিশাপ নিয়ে এই প্রজন্ম কোনোদিন কিছু করতে পারবে না।

শিক্ষক এর বিচার করার দায়িত্ব কোনো শিক্ষার্থীর হতে পারে না। যিনি একটি অক্ষর শিখিয়েছেন তিনিও শিক্ষক সম্মানের পাত্র।

দোষী হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অব্যাহতি/চাকুরিচ্যুতি বা যেকোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিবে; কিন্তু অভদ্র বেয়াদবেরা হেনস্থা করে জোরপুর্বক পদত্যাগ করাবে? তা নিতান্ত অমানবিক, সন্ত্রাসতুল্য অপরাধ। 

শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে না—পারলে, নীতি নৈতিকতা ও জাতির বিপর্যয় অনিবার্য।

সকল বিবেকবান মানুষের মতো  আজকের এই লিখনীর মাধ্যমে আমি ও এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি, এবং আশাকরছি এই সব অমানুষিক, অমানবিক কাজ যাতে বন্ধ হয় এর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহ দোষীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। আসুন, “শিক্ষক হচ্ছেন পিতার সমান, সারাজীবন জানাবো সম্মান” এই হোক আমাদের সবার অঙ্গীকার। 

জয় হোক মানবতার, মানুষ্যত্ব জাগ্রত হোক, প্রানের বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখকঃ মোহাম্মদ মকিস মনসুর, চেয়ারম্যান, ইউকে বিডি টিভি; প্রধান সমন্নয়ক; প্রতিভা মেধা প্রকল্প; সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি, ডেইলি সিলেট এন্ড দৈনিক মৌলভীবাজার মৌমাছি কন্ঠঃ সম্পাদক, ওয়েলস বাংলা নিউজ


মতামত এর আরও খবর