img

বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী : ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত :  ১১:০৬, ০৮ জুন ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:২১, ০৮ জুন ২০২৪

 বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী : ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গত ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মূল লক্ষ্য চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সংকট দূর এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারাবিশ্বে অর্থনীতির সংকটকালে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী।

আজ শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বাজেট পরবর্তি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, ‘এই বাজেটর লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে করোনা অতিমারি এবং বিশ্বে চলমান যুদ্ধ পূর্ববর্তী উচ্চ গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ফিরিয়ে নেয়া। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সংকটকালে এ বাজেট বাস্তবসম্মত ও গণমুখী।’

প্রস্তাবিত বাজেটকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ বাজেটকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। ভারসাম্যমূলক একটি বাজেট উপহার দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটকালেও সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবনমান দিন দিন উন্নততর হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন শুধু ডাল-ভাতে নয়, পুষ্টি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সব কয়টি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে। এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন গড়ে ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা সারা দুনিয়ায় উচ্চতম প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্যতম করে তুলেছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে গিয়েছিল। জনগণের ধারাবাহিক সমর্থন নিয়ে আমাদের সরকার মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে সে দারিদ্র্য ১৮.৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অতি দারিদ্র এখন মাত্র ৫.৬ শতাংশ।

তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে। এতে আমদানি কমেছে বছরে ১৫ শতাংশের বেশি হারে যার ফলে সংকটকালেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩ মাসের বেশি আমদানির জন্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তা সত্ত্বেও টাকার মান ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে ফলে রিজার্ভ অনেক কমে গিয়েছে।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে নতুন সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এবারের বাজেটেও তার পূর্ণ প্রতিফলন রয়েছে।

সড়ক পরিবহন ওসেতুমন্ত্রী বলেন, অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাহিদা কমিয়ে এবং পণ্য ও সেবার সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো যায়। এবারের বাজেট এই দুই পথের মিলন ঘটিয়েছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কিছু দিন পূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মূদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। যার মাধ্যমে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে এবং নতুন পদ্ধতিতে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার। এতে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। নতুন করে ডলার সংকট হবার সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছে না। রিজার্ভ এখন থেকে বাড়তে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবারের বাজেটে রাজস্বনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচী চলমান রাখা হয়েছে, কর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমদানি বিকল্প উৎপাদন উৎসাহিত করা হয়েছে এবং কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি চলমানরেখে তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের এ সকল উদ্যোগ একদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে অন্যদিকে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ বাজেটের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতির গড় ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা করি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতোমধ্যে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ২০০৯ সালের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬ গুনের বেশি বৃদ্ধি করে বর্তমানে ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে যার মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে উৎপাদন করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ হওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ ৪ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা কম ধরা হয়েছে। জ্বালানীর আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের নিমিত্তে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৯টি কুপ খনন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে আমাদের গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট যা বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। অধিকতর গ্যাস উত্তোলনের জন্য অগভীর সমুদ্রের ২৪টি ব্লকের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পিএসসি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে ৬টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে দেশে ৯৪৮ কিলোমিটার নতুনরেললাইন নির্মাণ এবং ১ হাজার ৩৯১ কিলোমিটার পুরনো লাইনের সংস্কার করা হয়েছে। খুলনা হতে মোংলা লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে যা ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে এবং উপ-আঞ্চলিক করিডোরের একটি বড় অংশ হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মানের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব কাজ এগিয়ে  নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখনও আমরা ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির একটা অর্থনীতি পেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনার দক্ষতার গুণে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে আমরা সে মূল্যস্ফীতি দমন করে জাতিকে স্থিতিশীল অর্থনীতি উপহার দিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অংশের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এবারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও আমরা সক্ষম হব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক অধিকার, কৃষি, দেশীয় শিল্প ও সামাজিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা অতিমারি থেকে শুরু করে চলমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট ডলার সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও প্রতি বছরই বাংলাদেশ অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে ভারসাম্যমূলক বাজেটের কারণে মুদ্রাস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে এনে আগামী অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও ডা.মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক ও সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রভাব কতটা? আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন ঠান্ডা মাথায় মূল্যায়ন!

প্রকাশিত :  ১৯:০১, ১৬ জুন ২০২৫

বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েনের মঞ্চ আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা এতদিন আড়ালে থাকলেও এখন তা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে, যার অভিঘাত পড়ছে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে এবং বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করছে সংশয় ও অনিশ্চয়তা। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই যুদ্ধ কি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বড় কোনো ধাক্কা আনবে?

সরাসরি উত্তর—খুব একটা নয়। তবে ‘না’ বলেই নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা যাবে না। পরিস্থিতি বুঝে, বিচক্ষণতার সঙ্গে এগোনোই হবে সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত কাজ।

যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ববাজারে, তবে বাংলাদেশের বাজারের বাস্তবতা ভিন্ন

বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন তা বাজারে বড় প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে অপরিশোধিত জ্বালানি, স্বর্ণ ও ডলারের ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০ ডলার বেড়েছে। ভবিষ্যতে এ দাম আরও বাড়বে কি না, তা নির্ভর করছে যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হয় তার উপর।

কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সেই ধাক্কা পায় অনেক দেরিতে এবং অনেকটাই মৃদু আকারে। কারণ পরিষ্কার—আমাদের শেয়ারবাজার এখনো প্রধানত স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণে। বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ হওয়ায় বৈশ্বিক অস্থিরতার তাৎক্ষণিক প্রভাব এখানে তেমন পড়ে না।

বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত নন, বরং সচেতনভাবে অপেক্ষমাণ

যুদ্ধের খবরের পর ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি কিছু এশীয় বাজারেও ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে তেমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বরং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বিগত কয়েকদিন ধরে একটি স্থিতিশীল এবং খানিকটা ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

ডিএসই-এর একজন অভিজ্ঞ ব্রোকার হাউজের কর্ণধার বলেন, “এখন আমাদের বিনিয়োগকারীরা অনেক পরিণত। আগের মতো আর গুজব শুনেই হুড়োহুড়ি শুরু করেন না। এখন তারা পরিস্থিতি দেখে, বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।”

তেলের দাম বাড়লে তার ছায়া পড়বে অর্থনীতিতে, শেয়ারবাজারেও

বাংলাদেশ প্রায় পুরোপুরি জ্বালানি তেলের আমদানির উপর নির্ভরশীল। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং তেলের দাম যদি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সরকারকে হয় বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে, নয়তো জনগণের উপর সেই বাড়তি মূল্য চাপিয়ে দিতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।

এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, পরিবহন খরচ ও কৃষি উৎপাদনের খরচও বেড়ে যাবে। সবকিছুরই প্রভাব পড়বে উৎপাদন খরচে, কমবে কোম্পানির মুনাফা, এবং একপর্যায়ে শেয়ারবাজারে তা প্রতিফলিত হবে।

তবে এর সবটাই নির্ভর করবে সরকারের বাজেট প্রস্তুতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের ওপর।

ব্যাংক ও বিমা খাত: বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিমুক্ত খাতের দিকে ঝোঁকেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও বিমা খাত এখনও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ মনে করা হয়। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় এবং আয় নির্ভরযোগ্য, সেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে।

সম্প্রতি ব্যাংক খাতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—খেলাপি ঋণ কমেছে, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতি হয়েছে, এবং গ্রাহকের আস্থা কিছুটা ফিরে এসেছে। বিমা খাতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোতে।

স্বর্ণ ও নিরাপদ সম্পদে ঝোঁক বাড়লেও বাংলাদেশের সুযোগ সীমিত

আন্তর্জাতিক অস্থিরতার সময়ে স্বর্ণের প্রতি ঝোঁক বাড়ে, কারণ এটি ঐতিহ্যগতভাবে ‘সেফ হ্যাভেন’ হিসেবে পরিচিত। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে সরাসরি স্বর্ণে বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। ফলে কিছু বিনিয়োগকারী বিকল্প পন্থায় মূল্য সংরক্ষণের চেষ্টা করলেও, সেটি বাজারে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

যদি বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথভাবে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা করে এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে, তবে টাকাও একটি স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ডলার সংকট ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ঝুঁকি

যুদ্ধের প্রভাবে যদি ডলারের মূল্য বিশ্ববাজারে বেড়ে যায়, তাহলে আমদানি খরচ বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদন পর্যন্ত। এতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়বে এবং কিছু উৎপাদনমুখী কোম্পানির আয় হ্রাস পেতে পারে, যা শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রতিফলন ঘটাবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ডলার সরবরাহে সক্রিয় হয়েছে এবং বাজারে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে সহায়ক।

সার্বিক মূল্যায়ন: যুদ্ধের প্রভাব সীমিত, তবে সচেতনতা জরুরি

সব দিক বিবেচনায় বলা যায়, বর্তমানে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক কোনো বড় ধরনের নেতিবাচক ধাক্কার আশঙ্কা নেই। কারণগুলো হলো:

বিদেশি বিনিয়োগের হার কম,

বাজার অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত,

অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ভিত্তি এখনও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।

তবে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে, এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও মুদ্রার অস্থিরতা বাড়লে, তার কিছু পরোক্ষ প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা যেতে পারে। তখন কোম্পানির খরচ বাড়বে, মুনাফা কমবে এবং বাজারে কিছুটা নেতিবাচক সাড়া দেখা দিতে পারে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ: আবেগ নয়, বিশ্লেষণই হোক সিদ্ধান্তের ভিত্তি

এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে তথ্য-ভিত্তিক বিশ্লেষণের উপর ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। শক্ত ভিত্তির কোম্পানিতে, যেগুলো নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় এবং যাদের ব্যালান্স শিট সুদৃঢ়, তাতে বিনিয়োগ ধরে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

বিশ্ব রাজনীতি কারো হাতের মুঠোয় নেই। কিন্তু নিজের বিনিয়োগ পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ মূল্যায়নের ভিত্তিতে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সহনশীল, পরিণত এবং বিনিয়োগবান্ধব।

তাই যুদ্ধের শব্দে বিচলিত না হয়ে, বাস্তবতার নিরিখে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হোক সবার লক্ষ্য।


লেখক: রেজুয়ান আহম্মেদ
প্রকাশকাল: ১৬ জুন ২০২৫