পকেটে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে তারা আমাদের ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দুষ্কৃতকারীদের চালানো নৈরাজ্য, ধ্বংসযজ্ঞ রুখতে না পারার পেছনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্বলতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
বিএনপি-জামাত-জঙ্গি একজোট হয়ে এই হামলা চালিয়েছে জানিয়ে দলের নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে তিনি বলেন, পকেটে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে থাকলে সবাইকে ঘড়ে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে কষ্ট লাগে রংপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যখন দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর করলো, আগুন দিলো, তখন তো আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আপনারা কীভাবে ভুলে গেলেন আমরা বীরের জাতি, দেশ স্বাধীন করেছি।
মন্ত্রী বলেন, দাবি আদায় হওয়ার পরেও আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছে না, এটা শিক্ষার্থীদের বড় ভূল। নাশকতার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছি, হতবাক হয়েছি। আমরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছিলাম যে, বাঙালি এই কাজ (ধ্বংসযজ্ঞ) কীভাবে করতে পারে! পরবর্তীতে মনে হয়েছে যে, এই বাঙালিইতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এই বাঙালিরাই আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এই ঘটনাটাই আমাদের সবকিছু মনে করিয়ে দেয়। তবে নাশকতাকারী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নাশকতাকারীরা চিহ্নিত হবে না, ততক্ষণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনের পেছনে নিশ্চয়ই একটা কারণ ও শক্তি আছে। তারা আমাদের গর্বের মেট্রোরেলেও আগুন দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসের টোল ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হলো। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ হলো। ভিসিকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হলো। কেন তাকে জানে মেরে ফেলবেন, তার দোষটা কী? নরসিংদীতে জেলা কারাগার হাজার হাজার জনতা এসে ভেঙে ফেললো। সেখান থেকে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। রংপুরে তাজহাট থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ডিবির কার্যালয়ে আক্রমণ করা হলো। ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানা, উত্তরা থানা, মোহাম্মদপুর থানায় আক্রমণ করেছে। এভাবে একের পর এক থানায় হামলা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতি তার বেঞ্চে শতকরা সাত ভাগ রেখে বাকি সব কোটা বাতিল করে দিয়েছেন। যে পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়েছে সেটার সুবিধাও মেধাবীরা পাবে। কারণ আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের সন্তানদের বেশির ভাগের বয়স অনেক আগেই ৩০ বছর পার হয়েছে। কাজেই আমাদের জন্য আর কোটা নেই। এখন জিরো, সেই ক্ষেত্রেও আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) কিছু বলিনি। এখন ৯৮ শতাংশ মেধায় আসবে। এরপরও ছাত্রনেতারা বলছে না তারা আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে চায়। তারা যে আরও দাবি করেছিল সেগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন।
কারফিউ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। বিজিবি, পুলিশ সবাই মিলে জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কাজ করছে। সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে। আমরা কারফিউর সময় নিয়ে প্রতিদিনই বৈঠক করছি আগামীকাল সময় কত কমানো যায়। তবে আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে কারফিউর আর প্রয়োজন হবে না।
সাংবাদিকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এ আন্দোলনে দুই জন সাংবাদিক শাহাদাতবরণ করেছেন। এক নারী সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়ে এখন ট্রমাটাইজ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এখনও নিজের জীবনকে বিপন্ন করে সংবাদের জন্য কাজ করছেন, এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন শেষে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নাসিমা জামান ববি, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।