img

‘ডাক্তারদের নৈতিকতার অভাব, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজন গভীর পরিবর্তন’

প্রকাশিত :  ২১:১৮, ১২ আগষ্ট ২০২৪

‘ডাক্তারদের নৈতিকতার অভাব, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজন গভীর পরিবর্তন’

বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্তমানে নানা সংকটের মুখোমুখি। দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারদের আচরণ এবং পদ্ধতি আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্ন তুলছে। নৈতিকতার অভাব, রোগীদের প্রতি অবহেলা, এবং অতিরিক্ত টেস্টের কারণে কমিশন লাভের প্রবণতা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে। এই আর্টিকেলটি এসব সমস্যা সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনার চেষ্টা করবে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরবে।

 চিকিৎসা সেবার নৈতিক সংকট

দেশের বহু মানুষ জানেন যে, ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে প্রায়শই তাদের অসহায় এবং দুর্বল অনুভূতি হয়। রোগীরা প্রায়ই ডাক্তারদের খারাপ ব্যবহারের শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রে, ডাক্তারদের পেশাদারিত্বের অভাব দেখা যায়, যা রোগীদের ওপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যত্নের পরিবর্তে, কিছু ডাক্তার অতিরিক্ত পরীক্ষার জন্য রোগীদের হাতে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন। 

এই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমের ওপর আস্থা নষ্ট করে দেয়। বেশি টেস্টের মাধ্যমে কমিশন লাভের প্রবণতা রোগীদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্যাথলজি ল্যাবগুলোও এই কমিশন প্রথার মাধ্যমে রোগীদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই অনৈতিক প্রক্রিয়া রোগীদের জন্য এক প্রকার দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা সঠিক এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

 ভারতের চিকিৎসার প্রতি আকর্ষণ

বাংলাদেশের অনেক রোগী তাদের দেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছেন। তারা মনে করেন, ভারতের চিকিৎসা পদ্ধতি বেশি উন্নত এবং সেবা মান ভালো। এর মূল কারণ আমাদের দেশের ডাক্তারদের নৈতিকতার অভাব। যদি আমাদের ডাক্তাররা রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতেন এবং নৈতিকতার সাথে তাদের কাজ করতেন, তাহলে হয়তো রোগীদের ভারতের চিকিৎসার প্রতি এত আগ্রহ হত না।

 নিবিড় নৈতিকতা ও রোগীর প্রতি যত্ন

ডাক্তারদের পেশাগত নৈতিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বাস্থ্যকর সমাজ গড়ে তুলতে হলে ডাক্তারদের উচিত রোগীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল হওয়া। রোগীদের প্রতি ভাল আচরণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করার মাধ্যমে ডাক্তাররা তাদের পেশাদারিত্বের মর্যাদা বজায় রাখতে পারেন। অতিরিক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কমিশন লাভের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে এবং রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিরোধ ও সংস্কার

চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সরকারের ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি তৈরি করতে হবে যা ডাক্তারদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করবে। রোগীদের সঠিক তথ্য ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে তারা নৈতিকতার সাথে তাদের কাজ করতে পারেন।

 একটি সুস্থ সমাজের আহ্বান

আমাদের দেশকে একটি স্বাস্থ্যবান ও উন্নত সমাজে পরিণত করতে হলে ডাক্তারদের নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। রোগীদের জন্য সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা এবং সঠিক চিকিৎসার প্রদানই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। রোগীদের প্রতি সম্মান, সেবা, এবং আন্তরিকতার সাথে তাদের চিকিৎসা করতে পারলে আমরা শুধু একটি উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব না, বরং দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারব।

চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন এবং নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি জরুরি পদক্ষেপ। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে একটি সুস্থ, সৎ, এবং উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য কাজ করতে পারি।

রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর