‘ডাক্তারদের নৈতিকতার অভাব, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজন গভীর পরিবর্তন’
বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্তমানে নানা সংকটের মুখোমুখি। দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারদের আচরণ এবং পদ্ধতি আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্ন তুলছে। নৈতিকতার অভাব, রোগীদের প্রতি অবহেলা, এবং অতিরিক্ত টেস্টের কারণে কমিশন লাভের প্রবণতা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে। এই আর্টিকেলটি এসব সমস্যা সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনার চেষ্টা করবে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরবে।
চিকিৎসা সেবার নৈতিক সংকট
দেশের বহু মানুষ জানেন যে, ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে প্রায়শই তাদের অসহায় এবং দুর্বল অনুভূতি হয়। রোগীরা প্রায়ই ডাক্তারদের খারাপ ব্যবহারের শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রে, ডাক্তারদের পেশাদারিত্বের অভাব দেখা যায়, যা রোগীদের ওপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যত্নের পরিবর্তে, কিছু ডাক্তার অতিরিক্ত পরীক্ষার জন্য রোগীদের হাতে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন।
এই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমের ওপর আস্থা নষ্ট করে দেয়। বেশি টেস্টের মাধ্যমে কমিশন লাভের প্রবণতা রোগীদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্যাথলজি ল্যাবগুলোও এই কমিশন প্রথার মাধ্যমে রোগীদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। এই অনৈতিক প্রক্রিয়া রোগীদের জন্য এক প্রকার দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা সঠিক এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
ভারতের চিকিৎসার প্রতি আকর্ষণ
বাংলাদেশের অনেক রোগী তাদের দেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছেন। তারা মনে করেন, ভারতের চিকিৎসা পদ্ধতি বেশি উন্নত এবং সেবা মান ভালো। এর মূল কারণ আমাদের দেশের ডাক্তারদের নৈতিকতার অভাব। যদি আমাদের ডাক্তাররা রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতেন এবং নৈতিকতার সাথে তাদের কাজ করতেন, তাহলে হয়তো রোগীদের ভারতের চিকিৎসার প্রতি এত আগ্রহ হত না।
নিবিড় নৈতিকতা ও রোগীর প্রতি যত্ন
ডাক্তারদের পেশাগত নৈতিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বাস্থ্যকর সমাজ গড়ে তুলতে হলে ডাক্তারদের উচিত রোগীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল হওয়া। রোগীদের প্রতি ভাল আচরণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করার মাধ্যমে ডাক্তাররা তাদের পেশাদারিত্বের মর্যাদা বজায় রাখতে পারেন। অতিরিক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কমিশন লাভের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে এবং রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিরোধ ও সংস্কার
চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সরকারের ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি তৈরি করতে হবে যা ডাক্তারদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করবে। রোগীদের সঠিক তথ্য ও সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে তারা নৈতিকতার সাথে তাদের কাজ করতে পারেন।
একটি সুস্থ সমাজের আহ্বান
আমাদের দেশকে একটি স্বাস্থ্যবান ও উন্নত সমাজে পরিণত করতে হলে ডাক্তারদের নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। রোগীদের জন্য সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা এবং সঠিক চিকিৎসার প্রদানই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। রোগীদের প্রতি সম্মান, সেবা, এবং আন্তরিকতার সাথে তাদের চিকিৎসা করতে পারলে আমরা শুধু একটি উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব না, বরং দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারব।
চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন এবং নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি জরুরি পদক্ষেপ। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে একটি সুস্থ, সৎ, এবং উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য কাজ করতে পারি।
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম