ইতিহাস কথা কয়

img

সনাতন-দীননাথ আপন আলোয় উদ্ভাসিত : মতিয়ার চৌধুরী

প্রকাশিত :  ১০:০৩, ১৩ আগষ্ট ২০২৪

সনাতন-দীননাথ আপন আলোয় উদ্ভাসিত : মতিয়ার চৌধুরী

ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত  থাকার কারনে যখনই সময় পেতাম, তখনই বিভিন্ন এলাকার সকল  বয়সের মানুষের কাছ থেকে আমি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে রাখতাম আর এটি ছিল আমার নেশা। আশি ও নব্বইয়ের দশকে নবীগঞ্জ সহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে কথা বলে সেখানকার কুশীলবদের তথ্য বিশেষ করে সরপঞ্চদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি এবং তা সংরক্ষন করে রাখি। আমার প্রয়াত পিতা রফিকুল হক চৌধুরী ও আপন দুই চাচা আব্দুল কদ্দুস চৌধুরী ও সফিকুল হক চৌধুরী নবীগঞ্জ থানার ৩ নম্বর সার্কেলের সরপঞ্চ হিসেবে দীর্ঘ ৩৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। সরকারিভাবে সরপঞ্চদের তথ্য সেভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি, তাই মৌখিক মৌখিক ইতিহাস ও সেই সময়ের দলিল দস্তাবেদ ও অন্যান্য প্রমানাদি ঘেটে সরপঞ্চদের ইতিহাস সংরক্ষণই ছিল আমার গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে উপজেলা ভিত্তিক প্রথম ইতিহাসগ্রন্থ ‘নবীগঞ্জের ইতিকথা’, ১৯৯০সালে ‘সিলেট বিচিত্রা‘, ‘সিলেট ও সিলেটী ভাষা’ ১৯৯৯ সালে, ‘যুক্তরাজ্যে সিলেটবাসী’ ২০০০ সালে, ‘সিলেট নাগরী হরফে’ বাংলা এবং ইংরেজীর অনুবাদসহ ১৯৯৫-২০০০ সিলেটী ভাষা শিক্ষার বই এক থেকে অষ্টম খন্ড  ‘ছিলেটী লেখা আর পড়া’, এবং সিলেট একাডেমি ইউকে এন্ড ইউরোপ কর্তিক প্রকাশিত, ‘ঐতিহ্য’ ১৯৯৮ সালে, আমার সম্পাদিত এবং বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ফররুখ আহমদ চৌধুরী (ফখরু) কর্তৃক সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘সিলেট গাইড’-১৯৯৭ সাল, ‘টেন সিলেটী পয়েম’ বাংলাদেশের শ্রেষ্ট দশজন মরমী সাধকের লিখা সিলেটী নাগরী থেকে বাংলা এবং ইংরেজীতে অনুদিত আমার এবং ইংরেজ গবেষক ড. জেমস লয়েড উইলিয়ামের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশ করে লন্ডনের স্টার প্রকাশনী। আমার লেখা ও সম্পাদিত বিভিন্ন গ্রন্থ এবং বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড এবং ভারতের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও ম্যাগাজিনে বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়। আজকের নিবন্ধ সেরকমেরই গবেষণার একটি অংশ। 

ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকা বিভাগের সিলেট জেলার নবীগঞ্জ রাজস্ব জেলার [বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এর আমলে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থী সুবে বাংলা কে ১৩ টি ‘চাকলায়’ বিভক্ত করা হয়। আবার প্রত্যেক চালকায়ে কয়েকটি রাজস্ব জিলায় ভাগ করেন। চাকলায়ে সিলেটকে ১০ টি রাজস্ব জিলায় ভাগ করা হয়। এর একটি রাজস্ব জিলা হচ্ছে নবীগঞ্জ। নবীগঞ্জ রাজস্ব জিলায় ১৯ টা পরগণা ছিল]। জন্তরী পরগণার অন্তর্গত ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি গ্রাম মুক্তাহার। মুক্তাহার নামেরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে, এই গ্রামের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব শ্রীমান গঙ্গারাম দাস। শ্রীমান গঙ্গারাম দাস সম্ভবত নবীগঞ্জ মুন্সেফ কোর্টের পেশকার বা এ জাতীয় কর্মচারী ছিলেন। [“হিস্ট্রি এন্ড স্ট্যাটিস্টিক অব ঢাকা ডিভিশন” নামক গ্রন্থে বৃহত্তর সিলেটে ৬টি মুন্সেফী আদালতের উল্লেখ রয়েছে। তন্মধ্যে নবীগঞ্জে ১টি অন্যতম মুন্সেফী আদালত ছিল। যার আয়তন ছিল সত্রসতী পরগনার শেষ অর্থাৎ বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে হবিগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে নবীগঞ্জের মুন্সেফ কোর্ট বিলুপ্ত হয়ে হবিগঞ্জ মহকুমা সদরে স্থানান্তরিত হয়।] তিনি একজন সফল কৃষকও ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস। তাঁর পুত্র দ্বয়কে তিনি পাঠশালা ও টোলে  পড়াশোনা করান (তখনও এই এলাকায় এম.ই. স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় নি। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে নবীগঞ্জ যুগল-কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়)।


শ্রীমান সনাতন দাস (১৮৫৫–১৯৩৮): শ্রীমান সনাতন দাস ছিলেন ওই অঞ্চলের একজন শৌখিন ব্যক্তি। পাখি শিকার ও ভ্রমন ছিল তাঁর অন্যতম শখ। লম্বা পাইপের (নলের) খাসার তৈরি ফস্বী হোক্কায় তামাক টানতেন তিনি। তখনকার সময়ে গ্রাম-বাংলার মানুষের বিনোদনের উৎস ছিল যাত্রাগান, পালাগান, ঘেটুগান ইত্যাদি। তিনি এসবের আয়োজন ও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি ছিলেন শৌর্যের অধিকারী ও দূর্দান্ত সাহসী ব্যক্তি। এলাকার বিচার-বৈঠকে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্ধী। নিজের এলাকার বাইরেও তিনি বিচার বৈঠকে প্রশংসিত হন। তাঁর নিরপেক্ষ বিচারে কেউ কখনো প্রশ্ন তুলতেন না। ব্রিটিশ শাসনামলের একটা সময় তিনি নবীগঞ্জ থানার ৩৯ নম্বর সার্কেলের সরপঞ্চ নির্বাচিত হন। [ব্রিটিশ শাসনামলে নবীগঞ্জকে ৪১ টি সার্কেলে বিভক্ত করা হয়। সার্কেলের প্রধান নির্বাহীকে সরপঞ্চ বলা হতো। সরপঞ্চ বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা। সরপঞ্চের পরিষদে দুইজন সরপঞ্চায়েত বা সহকারী সরপঞ্চ থাকতেন। একজন সরপঞ্চ বেশ কিছু প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন। চৌকিদার নিয়োগ, টেক্স কালেকশন, গ্রামীন বিরোধ নিষ্পত্তি, বিচার সালিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা প্রভৃতি। থানা সার্কেল অফিসার বা প্রশাসনিক উচ্চ পদস্থ অফিসারের তত্বাবধানে সরাসরি হাত তুলার মাধ্যমে সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চ বা  সরপঞ্চায়েত নির্বাচিত হতেন। সরপঞ্চ দুইজন চৌকীদার নিয়োগ দিতে পারতেন। ক্ষেত্র বিশেষে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে সরপঞ্চ নিজস্ব ক্ষমতাবলে ৪/৫ জন ব্যক্তিকে সালিশ কার্যে নিয়োগ করতে পারতেন। সরপঞ্চের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রসাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সার্কেল প্রথা বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন কাউন্সিল চালু করেন করেন। কয়েকটি সার্কেল নিয়ে গঠন করা হয় একটি ইউনিয়ন কাউন্সিল।] শ্রীমান সনাতন দাস সরপঞ্চ (১৮৯৫ - ১৯০০) সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং সরপঞ্চের দায়িত্ব পালন কালে তিনি অনেক সামাজিক ও মানবিক কাজ করেন। তৎকালীন সময়ে গ্রামীণ সালিশী তথা বিচার ব্যবস্থায় এলাকায় সনাতন দাস এক অগ্রগণ্য নাম। সে সময়কার সমবায় সমিতি ব্যবস্থা, কৃষক উন্নয়ন ও গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী ও সর্বভারতীয় কংগ্রেস দলের সমর্থক। সে সময়ে ব্রিটিশ রাজ প্রতিনিধি মহকুমা সদরে সরপঞ্চ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে মিটিং করলে তিনিও সেইসব মিটিংয়ে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত থাকতেন। তাঁর স্ত্রী এক কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে মৃত্যুবরন করেন।

শ্রীমান দীননাথ দাস (১৮৬০ - ১৯৪৩): শ্রীমান দীননাথ দাস ছিলেন স্বশিক্ষিত ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব। শারীরিকভাবে সুঠাম ও শক্তিশালী দেহের অধিকারী দীননাথ ছিলেন সাহসিকতা ও বিচক্ষণতায় অনন্য। পড়তেন সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবী। তিনিও ভ্রমণ পিপাসু এবং যাত্রাদল সহ গ্রামীণ সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করতেন। তৎকালীন সময়ে গ্রাম-বাংলা ছিল লোকজ সংস্কৃতির সূতিকাগার। যেখানে লোক জীবনের নানা উপাদান ছিল। দীননাথ লোকজ সংস্কৃতির প্রতি গভীর টান অনুভব করতেন। জারি, সারি, লোকগানের আসর, যাত্রাপালা, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা প্রভৃতিতে পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি অংশগ্রহণ করতেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি এলাকায় সমাদৃত হন। বড় ভাইয়ের পরবর্তীতে নবীগঞ্জ থানার ৩৯ নম্বর সার্কেলের সরপঞ্চ নির্বাচিত হন এবং সরপঞ্চ (১৯০০ - ১৯০৫) হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। শ্রীমান দীননাথ দাস ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী একজন নিরেট ভদ্রলোক। তিনি কংগ্রেসের সমর্থক হলেও নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর অনুসারী ছিলেন। তাঁর দুই কন্যা ও এক পুত্র। একমাত্র পুত্র শ্রীমান দীগেন্দ্র চন্দ্র দাস (১৯০৫-১৯৭৬) প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে নবীগঞ্জ যুগল কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাইনর পাশ করেন। তিনি ফুটবল খেলার প্রতি আসক্ত ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি খেলার জন্য তাঁর টিম নিয়ে দূর দূরান্তের বিভিন্ন গ্রামে গিয়েছেন। লোকগীতি ও যাত্রাগান তাঁর প্রিয় ছিলো। তিনি যাত্রা দলের উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কৃষি-ভিত্তিক জীবন যাপনের পাশাপাশি তিনি তাঁর মেধা, মনন ও সাহসিকতায় এলাকার সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্যতা ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

সনাতন-দীননাথ ভাতৃদ্বয় ছিলেন সফল কৃষক। তাঁদের বিশ্বাস ছিল লবন ও কেরোসিন ছাড়া মাটিতে সবকিছুই উৎপাদন করা সম্ভব। বাড়িতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু প্রজাতির ফলের ও ফুলের গাছ সংগ্রহ করে রোপন করতেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃষি জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের কর্মসূচিতে অনুপ্রানিত হয়ে তাঁরা নিজেদের জমিতে এর প্রতিফলন ঘটান। তাঁদের দুই ভাইয়ের নৌকা বাইচের খুব শখ ছিল। নিজেদের ছিল শখের দৌড়ের নৌকা ও একটি দুই মাইল্লা গোস্তী নৌকা (দুইজন মাঝি পরিচালিত গোস্তী নৌকা)। মুক্তাহার গ্রামের পূর্ব ধারের শ্রীমান কালী চরন দাসেরও [বঙ্ক চন্দ্র দাসের (মাস্টার) জ্যেঠাতুত বড়ো ভাই] দৌড়ের নৌকা ছিল। তখনকারদিনে বর্ষাকালের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম ছিল নৌকা বাইচ। বর্ষায় এই দুই দৌড়ের নৌকার প্রতিযোগীতা এলাকাবাসীদের আনন্দ দিতো। আর গোস্তী নৌকায় করে তাঁরা ছয়রে (বেড়াতে) বের হতেন। তাঁদের গোস্তী নৌকায় থাকা-খাওয়া ও গান-বাজনার ব্যবস্থা ছিল। তৎকালীন সময়ে মুক্তাহার গ্রামের যে সকল গুণীজনেরা অত্র এলাকার সামাজিক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- শ্রীমান গোলক দাস, শ্রীমান কালীচরণ দাস (কালী সাধু), শ্রীমান গরি দাস (গরি সরকার), শ্রীমান বিশ্বনাথ দাস (মাস্টার), শ্রীমান কুরু দাস, শ্রীমান প্রহল্লাদ দাস (মাস্টার) প্রমুখ।


সনাতন-দীননাথ ভাতৃদ্বয়ের কর্মজীবনের ও পারিবারিক বেশ কিছু অমূল্য স্মারক ও তথ্য উপাত্তে সমৃদ্ধ দলিল দস্তাবেজ ছিল, যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এবং রাজাকার কর্তৃক বাড়িঘর লুটপাটের ফলে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তবে তাঁদের নাম এখনো মুছে যায় নি। শ্রীমান দীননাথ দাসের প্রৌপুত্রদ্বয় তরুন লেখক ও গবেষক রত্নদীপ দাস (রাজু) ও রত্নেশ্বর দাস (রামু) কর্তৃক নবীগঞ্জ উপজেলার মুক্তাহার গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রবীন্দ্র চন্দ্র দাস গ্রন্থাগার’- এ এই দুই কীর্তিমানের স্মরণে গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষের নাম ‘সনাতন-দীননাথ পাঠকক্ষ’ নামকরন করা হয়েছে। যা তাঁদের স্মৃতি জাগরুখ করে রাখার মতো চমৎকার একটি পদক্ষেপ। যে দেশ ও জাতি তার পূর্বপুরুষদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে, সে দেশের জাতীয় ইতিহাস ততটাই সমৃদ্ধ হয়। এই উদ্যোগের জন্য আমি গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক সাধুবাদ জানাই। আর এভাবেই আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একেকজন সনাতন-দীননাথেরা আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে থাকবেন প্রজন্মান্তরে।

তথ্য ঋণ: বিভিন্ন সময়ে তথ্য দিয়েছেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু শ্যামাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত (বিধুবাবু; সাবেক জমিদার ও চেয়ারম্যান, গ্রাম: গুজাখাইড়, নবীগঞ্জ), জনাব আব্দুল আজিজ চৌধুরী (শিক্ষাবিদ, গণপরিষদ সদস্য, গ্রাম: চরগাঁও, নবীগঞ্জ), ভাষাসৈনিক ও সিলেট মুসলিম সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্টাতা সেক্রেটারী ও সিলেট অঞ্চলের প্রাচীণতম মাসিক আল ইসলাহ, সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হক, ইতিহাস বেত্তা মনির উদ্দিন চৌধুরী গ্রাম জহিরপুর জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জ, বাবু যোগেন্দ্র চন্দ্র দাস (মাস্টার; গ্রাম: মুক্তাহার, নবীগঞ্জ), শ্রীযুক্ত রূপেশ চক্রবর্তী (রূপেশ ঠাকুর; বিশিষ্ট ব্যক্তি, গ্রাম: মুক্তাহার, নবীগঞ্জ), বাবু ভাগ্যেশ্বর দাস (ভাগ্যেশ্বর বাবু; সাবেক নবীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ নেতা, গ্রাম: মুক্তাহার), ডা. কুটিশ্বর দাস (কুটিশ্বর বাবু; সাবেক চেয়ারম্যান, ৭নং করগাঁও ইউনিয়ন, গ্রাম: মুক্তাহার, নবীগঞ্জ), বাবু চূড়ামণি দাস (চূড়ামণি সরকার; বিশিষ্ট ব্যক্তি, গ্রাম: মুক্তাহার, নবীগঞ্জ), বাবু লক্ষ্মী কান্ত দাস (মাস্টার; গ্রাম: মুক্তাহার, নবীগঞ্জ), বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র চন্দ্র দাস (মাস্টার; গ্রাম: মুক্তাহার, নবীগঞ্জ। শ্রীমান দীননাথ দাসের নাতি) প্রমুখ।


লেখক: ইউরোপ ব্যুরো চিফ, বার্তা সংস্থা এনএনবি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাবেক সেক্রেটারী, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব। প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশন ইংল্যান্ড।


img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর