img

বৃষ্টির ছোঁয়ায় -রেজুয়ান আহম্মেদ

প্রকাশিত :  ০৮:৪১, ১৮ আগষ্ট ২০২৪

বৃষ্টির ছোঁয়ায় -রেজুয়ান আহম্মেদ

বৃষ্টি এসেছে, ভিজে গেছে শহর,  

ছায়া মেঘের তলে হারিয়ে যায় পর।  

শান্তির আবেগ ছুঁয়ে এলো নীরবে,  

ভালোবাসা ছড়িয়ে স্বপ্নের জানালায়।


গোধূলির রঙে রঙিন হলো সকাল,  

আমার মনে বাজছে খোলা প্রেমের গান।  

মেঘে লুকিয়ে প্রেমের বাতাসে,  

তুমি এলে স্বপ্নে মিষ্টি আলোয়।


হাস্যে মিশে উদাসিনী বাতাসে,  

তোমার ছোঁয়ায় আমার হৃদয় কাঁপে।  

প্রতিবিম্বিত তোমার মুখের ছায়া,  

তুমি আমার চোখের জ্যোতি, আমার আশা।


স্বপ্নধারায় সাজানো এই আবেগে,  

আবার আসবে কি তুমি নিশীথরাতে?  

বৃষ্টি ম্যানহোলে ছড়িয়ে গেলে,  

তুমি আসবে কি আমার প্রেমের আবেদনে?


বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বরাবরই কবি ও লেখকদের অনুপ্রেরণা হয়ে এসেছে। সেই সৌন্দর্যের অন্যতম একটি দিক হলো বৃষ্টি। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা, তার সাথে মিলিয়ে যাওয়া মেঘ এবং মাটির সুবাস যেন মনকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দেয়। আজকের আর্টিকেলে, আমরা সেই বৃষ্টির গল্প, তার সাথে প্রেমের আলাপ এবং আবেগের মেলবন্ধন নিয়ে আলোচনা করবো। 

বৃষ্টি এসেছে ভিজে গেছে শহর। বর্ষার প্রথম ফোঁটা মাটিতে পড়তেই শহর যেন এক নতুন রূপে সজ্জিত হয়েছে। প্রতিটি রাস্তা, গাছের পাতা, এবং মানুষের মন যেন ভিজে উঠেছে সেই বৃষ্টির শীতল ছোঁয়ায়। 

বৃষ্টি যখন আসে, তখন মেঘও তার সাথে থাকে। ছায়া মেঘের তলে শহর যেন হারিয়ে যায় এক মায়াবী আবরণে। মেঘের সেই গাঢ় ছায়ায় লুকিয়ে থাকা আলোর খেলা আমাদের কল্পনায় এক নতুন রঙ যোগ করে। 

বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন শান্তির আবেগ ছুঁয়ে আসে। যখন আকাশ থেকে মাটিতে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে, তখন সেই আওয়াজ যেন এক সুরের মতো মনে হয়। এই সুর আমাদের মনকে শান্ত করে, আমাদের অবসন্ন মনে এক নতুন প্রেরণা যোগায়। 

ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায়। যেন প্রতিটি ফোঁটা একেকটি স্বপ্নের জানালা হয়ে উঠেছে। সেই জানালা দিয়ে আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পাই, তার হাসি, তার চোখের চাহনি। 

গোধূলির রঙে যখন আকাশ সেজে ওঠে, তখন মনেও এক রঙিন সকাল শুরু হয়। সেই সকালে, আমাদের মনে বাজে খোলা গান। প্রেমের বাতাসে মেঘে লুকিয়ে থাকে আমাদের সকল স্বপ্ন, সকল আশা। 

তুমি আমার স্বপ্নে মিষ্টি আলো হয়ে এসে মনকে উদ্ভাসিত করো। সেই আলোয় মন যেন নতুন করে জীবনের মানে খুঁজে পায়। 

বৃষ্টি যেমন শহরকে ভিজিয়ে তোলে, তেমনই তোমার ছোঁয়া আমার হৃদয়কে উদাসিনী বাতাসে মুগ্ধ করে তোলে। সেই বাতাসে মিশে থাকা তোমার হাসি আমার হৃদয়কে আন্দোলিত করে, যেমন করে বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দ। 

তোমার ছোঁয়ায় আমার হৃদয়ে কাঁপে, ঠিক যেমন করে বৃষ্টির ঝরনায় মাটিতে কম্পন ধরে। এই কম্পনই হলো প্রেমের প্রকৃত রূপ, যা বৃষ্টির সাথে মিলে যায়। 

বৃষ্টির জলে যেমন প্রতিবিম্ব দেখা যায়, তেমনি তোমার মুখের ছায়াও আমার মনে প্রতিবিম্বিত হয়। সেই প্রতিবিম্ব আমার চোখের জ্যোতি হয়ে থাকে, যা আমাকে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচতে শিখায়। 

স্বপ্নধারায় সাজানো আবেগে আমরা কি আবার একে অপরকে পাবো? নিশীথরাতে, যখন বৃষ্টি ম্যানহোলে ছড়িয়ে পড়ে, তখন মনে হয়, তুমি আবার আসবে আমার জীবনে, আমার প্রেমের আবেদনে সাড়া দিতে। 

বৃষ্টি, মেঘ, এবং প্রেম – এই তিনের মেলবন্ধনেই আমাদের জীবনের অনেকটা সময় কেটে যায়। এই আবেগগুলো আমাদের জীবনকে রঙিন করে তোলে, যেমন করে বৃষ্টি প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে। প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটায়, প্রতিটি মেঘের ছায়ায় এবং প্রতিটি প্রেমের স্পর্শে আমরা খুঁজে পাই নতুন জীবনের অর্থ, যা আমাদের প্রতিদিন এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

img

আমরা কেমন মানুষ?

প্রকাশিত :  ০৭:৪১, ২১ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫৩, ২১ অক্টোবর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

মোসাম্মৎ কল্পনা—একটি নাম, একটি গল্প, একটি হাহাকার। বয়স মাত্র ১৩, অথচ জীবনের অঙ্কুরেই তার কচি হৃদয়ে নেমে এসেছে পাশবিক অত্যাচারের কালো ছায়া। কল্পনা আমার মেয়ে হতে পারত, আপনারও হতে পারত। কিন্তু কল্পনার জন্য কেউ রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়াবে না। তার জন্য কোনো শ্লোগান উঠবে না, কোনো ব্যানার উড়বে না। কল্পনার কান্না শোনা হয় না, কারণ সে এক নীরব প্রান্তরে আবদ্ধ, যেখানে তার দমবন্ধ স্বপ্নগুলো ম্লান হয়ে গেছে।

চার বছর আগে, যখন তার বয়স ছিল মাত্র নয়, তখন থেকেই তার ওপর শুরু হয় এই অমানবিক নির্যাতন। জিনাত জাহান আদর নামের এক নারীর কাছে সে ছিল যেন একটি নির্জীব পুতুল। শো-ব্রাশ দিয়ে পিটিয়ে তার সামনের পাটির চারটি দাঁত ফেলে দেওয়া হয়। হেয়ার স্ট্রেইটনারের উত্তাপে তার কোমল শরীরে ছাপ রেখে দেওয়া হয়েছিলো এমনভাবে, যা শুধু কল্পনার শরীর নয়, তার আত্মাকেও পোড়ায়। গরম পানি ঢেলে তার পায়ে যে পচন সৃষ্টি করা হয়, তা কেবল কল্পনার শরীরকেই ধ্বংস করছে না, বরং আমাদের সমাজের নৈতিকতাকেও দেখিয়ে দিচ্ছে কতটা পচে গেছে।

কল্পনা শুধু একটি মেয়ে নয়, সে আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি। তার শরীরের প্রতিটি ক্ষত, প্রতিটি ছ্যাঁকা আমাদের মানবতার ওপর এক একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে। আমরা কি কল্পনার মতো মেয়েদের রক্ষা করতে পেরেছি? এই সমাজ কি আদৌ এই নিষ্ঠুরতার দায় এড়াতে পারে? কল্পনার নির্যাতন কি শুধুই তার নিজের, নাকি পুরো মানবজাতির ব্যর্থতার প্রতীক?

জিনাত জাহানের শাস্তি কী হবে, আমরা জানি না। হয়তো সে কিছুদিন কারাগারে থাকবে, হয়তো কিছুদিন পরেই সে আবারও সমাজে ফিরে আসবে, মাথা উঁচু করে। কিন্তু কল্পনা? সে তো আর কোনোদিন ফিরে আসবে না তার সেই সুন্দর, স্বপ্নময় শৈশবে। তার শৈশব কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তার জীবনের রঙ মুছে দেওয়া হয়েছে।

আমার যদি কিছু করার ক্ষমতা থাকতো, আমি নিশ্চিতভাবেই জিনাত জাহানের জীবনেও সেই একই চিহ্ন রেখে দিতাম। তাকে পঙ্গু বানাতাম, শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও, যেন সে কল্পনার প্রতিটি কান্নার মূল্য বুঝতে পারে। কিন্তু তাতে কি কল্পনা ফিরে পাবে তার হারানো শৈশব? তার সেই হাসি, যা ছিল একসময় মুক্ত ঝরনার মতো?

আমাদের এই সমাজে কল্পনারা বারবার জন্মায়, বারবার নিঃশেষিত হয়, আর আমরা নির্বিকার দাঁড়িয়ে দেখি। কেউ কল্পনার জন্য পথে নামে না, কেউ তার জন্য শ্লোগান তোলে না। আমরা শুধু দুঃখ প্রকাশ করি, কয়েকদিন পর ভুলে যাই, আর সেই সঙ্গে কল্পনাদের কষ্টের গল্পও ভুলে যায় সমাজ।

কিন্তু এই গল্প শুধু কল্পনার নয়। এটি আমাদের সবার। কল্পনার কান্না, তার নির্যাতন, আমাদের সবার হৃদয়ে একটি স্থায়ী ক্ষত হয়ে থাকা উচিত। হয়তো আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারিনি, কিন্তু অন্তত তার যন্ত্রণার গল্প আমাদের মানবিকতাকে শিখতে বাধ্য করুক। কারণ, কল্পনা শুধু একটি নাম নয়, সে আমাদের বিবেকের একটি অন্ধকার অধ্যায়, যা আমাদের বারবার প্রশ্ন করে—"আমরা কেমন মানুষ?"