img

জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করালেন শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত :  ১২:৪৭, ১৮ আগষ্ট ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫৪, ১৮ আগষ্ট ২০২৪

জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করালেন শিক্ষার্থীরা
সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কিশোর রায় চৌধুরী মনিকে সড়কে পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে নিয়ে পদত্যাগ করিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।  বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীবিরোধী মিছিলে অংশ নেওয়ায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদের পদত্যাগের দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে উপজেলা শহরের ভবানীগঞ্জ বাজারে হাঁটাহাঁটি করছিলেন কিশোর রায় চৌধুরী। একপর্যায়ে একদল শিক্ষার্থী তাঁকে ঘিরে ফেলে তাঁরা তাঁকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে ইউএনও বাবলু সূত্রধর, জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা আক্তার, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ করেন।

কিশোর রায় চৌধুরীর পদত্যাগের পর রাতে উপজেলা সদরে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা ভাইস চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করে ‘হই হই রই রই, জুয়েল চোরা গেল কই’, ‘মনি গেছে যে পথে, জুয়েল যাবে সেই পথে’ বলে স্লোগান দেন।

সহকারী কমিশনার সানজিদা আক্তার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক ওসমান গণি মোবাইল ফোনে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, কিশোর রায় চৌধুরী, জুয়েল আহমদসহ আরও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি শিক্ষার্থীবিরোধী মিছিলে ছিলেন। কিশোর রায় চৌধুরীকে রাস্তায় পেয়ে শিক্ষার্থীরা  ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে  গিয়ে  পদত্যাগ করান 

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে কুরমাছড়া পাহাড়ি এলাকায় হামহাম জলপ্রপাত

প্রকাশিত :  ১০:১১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বা ঝর্ণা। যা\' হাম হাম কিংবা হামহাম বা চিতা ঝর্ণা হিসেবে পরিচিত। 

জলপ্রপাতটি ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের শেষাংশে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সাথে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন বলে জানা যায় । দুর্গম গভীর জঙ্গলে এই ঝরণাটি  মতান্তরে ১৪৭ কিংবা ১৭০ ফুট উঁচু। দেশের সবচেয়ে উঁচু ঝরণা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের উচ্চতা  ১৬২ ফুট। তবে ঝরণার উচ্চতা বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত কিংবা পরীক্ষিত মত নেই। সবই পর্যটকদের অনুমান। তবে গবেষকরা মত প্রকাশ করেন যে, এর ব্যাপ্তি, মাধবকুণ্ডের ব্যাপ্তির প্রায় তিনগুণ বড়।

হামাম ঝরণায় এপর্যন্ত (নভেম্বর ২০১১) গবেষকদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। সাধারণ পর্যটকেরা ঝরণাটির নামকরণ সম্পর্কে তাই বিভিন্ন অভিমত দিয়ে থাকেন।  অনেকের মনে সিলেটি উপভাষায় \"আ-ম আ-ম\" বলে বোঝানো হয় পানির তীব্র শব্দ, আর ঝরণা যেহেতু সেরকমই শব্দ করে, তাই সেখান থেকেই শহুরে পর্যটকদের ভাষান্তরে তা \"হাম হাম\" হিসেবে প্রসিদ্ধি পায়। তবে স্থানীয়দের কাছে এটি \"চিতা ঝর্ণা\" হিসেবে পরিচিত, কেননা একসময় এজঙ্গলে নাকি চিতাবাঘ পাওয়া যেত।

ঝরণার যৌবন হলো বর্ষাকাল। বর্ষাকালে প্রচন্ড ব্যাপ্তিতে জলধারা গড়িয়ে পড়ে। শীতে তা মিইয়ে মাত্র একটি ঝরণাধারায় এসে ঠেকে। ঝরণার ঝরে পড়া পানি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ছড়া তৈরি করে বয়ে চলেছে। এরকমই বিভিন্ন ছোট-বড় ছড়া পেরিয়ে জঙ্গলের বন্ধুর পথ পেরিয়ে এই ঝরণার কাছে পৌঁছতে হয়। ঝরণাটির কাছে যাওয়ার জন্য এখনও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয়নি, সাধারণত স্থানীয় অধিবাসীদের থেকে কাউকে গাইড বা পথপ্রদর্শক নির্ধারণ করে পর্যটকরা ঝরণা ভ্রমণ করেন। তাছাড়া ঝরণাকে ঘিরে তৈরি হয়নি কোনো সরকারি অবকাঠামোও। ঝরণায় যেতে হলে কুরমা বন বিটের চম্পারায় চা বাগান হয়ে যেতে হয়। চম্পারায় চা-বাগান থেকে ঝরণার দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। পথে অত্যন্ত খাড়া মোকাম টিলা পাড়ি দিতে হয়। এবং অনেক ঝিরিপথ ও ছড়ার কাদামাটি দিয়ে পথ চলতে হয়। ঝিরিপথে কদাচিৎ চোরাবালুও তৈরি হয়। কিন্তু সে সকল স্থানে পর্যটকদের জন্য কোনো নির্দেশিকা দেখা যায় না। এছাড়া গভীর জঙ্গলে বানর, সাপ, মশা এবং জোঁকের অত্যাচার সহ্য করে পথ চলতে হয়। বর্ষাকালে হাম হামে যাবার কিছু আগে পথে দেখা পাওয়া যায় আরেকটি অনুচ্চ ছোট ঝরণার। হাম হামের রয়েছে দুটো ধাপ। সর্বোচ্চ ধাপটি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে মাঝখানের ধাপে। এবং সেখান থেকে আবার পানি পড়ছে নিচের অগভীর খাদে। ঝরণার নিকটবর্তি বাসিন্দারা আদিবাসী ত্রিপুরা।

হাম হাম যাবার পথ এবং হাম হাম সংলগ্ন রাজকান্দি বনাঞ্চলে রয়েছে সারি সারি কলাগাছ, জারুল, চিকরাশি কদম গাছ। এর ফাঁকে ফাঁকে উড়তে থাকে রং-বেরঙের প্রজাপতি। ডুমুর গাছের শাখা আর বেত বাগানে দেখা মিলবে অসংখ্য চশমাপরা হনুমানের। এছাড়াও রয়েছে ডলু, মুলি, মির্তিঙ্গা, কালি ইত্যাদি বিচিত্র নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ।

পর্যটকরা অত্যন্ত দুর্গম পথ পাড়ি দেবার জন্য খাবার এবং প্লাস্টিকের পানীর বোতল সঙ্গে করে নিয়ে থাকেন এবং খাবারকে পানির স্পর্শ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায়ই পলিথিন ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা প্রায়ই সেসব ব্যবহৃত জিনিস বহন করে পুনরায় ফেরত না নিয়ে আসতে  ও যত্রতত্র ফেলে নোংরা করেন ঝরণার নিকট-অঞ্চল। যা\' ঝরণা এমনকি জঙ্গলের সৌন্দর্য্যহানির পাশাপাশি পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। তাই পর্যটকদেরকে পঁচনশীল বর্জ্য পুতে ফেলা এবং অপচনশীল বর্জ্য সঙ্গে করে নিয়ে আসা কিংবা পুড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়।

সিলেটের খবর এর আরও খবর