img

মঙ্গলগ্রহে সন্ধান মিলল বিশাল জলাধারের

প্রকাশিত :  ১৯:৪৬, ১৮ আগষ্ট ২০২৪

মঙ্গলগ্রহে সন্ধান মিলল বিশাল জলাধারের

মঙ্গল হচ্ছে সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ। পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহেও রয়েছে বায়ুমণ্ডল। রয়েছে পাহাড়-পর্বত, আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি ও মেরুদেশীয় বরফ। পৃথিবীর সঙ্গে মিল থাকলেও মঙ্গলগ্রহের অনেক বৈশিষ্ট্য খুবই অদ্ভুত। এজন্যই হয়ত গবেষকরা চাঁদের তুলনায় মঙ্গল গ্রহের প্রতি বাড়তি আগ্রহ দেখান। পৃথিবীর তুলনায় আরও দূর থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এই গ্রহ৷ সৌরজগতে পৃথিবী ছাড়া মঙ্গলই একমাত্র গ্রহ, যেটি মানুষের বসবাসের যোগ্য৷

তবে সম্প্রতি মার্কিন একদল গবেষক দাবি করেছে সৌরজগতের এই গ্রহটিতে মিলেছে পানির সন্ধান। এক-দুই ফোটা নয় বরং বিশাল মহাসাগর পরিমাণ জলের আধার রয়েছে মঙ্গলগ্রহে। 

অবিশ্বাস্য হলেও, বিস্ময়কর এ তথ্য প্রকাশ করেছে, মার্কিন সংস্থা- ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস। নাসার মার্স ইনসাইট ল্যান্ডারের ডেটা ব্যবহার করে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলপৃষ্ঠের সাড়ে ১১ থেকে ২০ কিলোমিটারের গভীরে রয়েছে বিশাল এই জলাধার। লুকিয়ে আছে ভূগর্ভস্থ শিলার ফাটলে। যা, জমা হয় বিলিয়নখানেক বছর পূর্বে। সুবিশাল এই পানির স্তরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা প্রবল, এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সহকারী অধ্যাপক ভাসান রাইট বলেন, মঙ্গলগ্রহে পানির অস্তিত্ব পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পানি গ্রহের বিবর্তনের সবকিছুকে প্রভাবিত করে। আমরা জানি যে, জীবন ধারণের জন্য একটি মূল উপাদান পানি। যার মানে হলো সেখানে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে।

এর আগে, লাল গ্রহটিতে জমে থাকা পানির সন্ধান মিললেও এবারই প্রথম তরল পানির খবর পাওয়া গেল। মঙ্গলগ্রহের যে বিরান-রুক্ষ পৃষ্ঠের সঙ্গে আজ বিশ্ব পরিচিত; ঠিক ৩শ’ কোটি বছর আগে তেমন ছিল না এটি। তখন দেখতে অনেকটাই পৃথিবীর মতো ছিলো গ্রহটি। ছিল নদী, হৃদ খুব সম্ভবত সমুদ্রও। যা শুকিয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে ভাসান রাইট বলেন, প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর আগে অনেকটাই পৃথিবীর মতোই ছিল মঙ্গলগ্রহ। কিন্তু এখন সেটি নেই। এখন গ্রহটি শুকনো। তাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, পানি কোথায়? সেগুলো কোথায় গেলো? এজন্যই এই গবেষণা।

মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১৮ সালে সেখানে ইনসাইট নামক ল্যান্ডার পাঠায় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসা। যার সিসমোমিটারের সাহায্যে রেকর্ড করা হয় গ্রহটির ভূকম্পন। ২০২২ সালে চার বছরের দীর্ঘ মিশন শেষ করে ল্যান্ডারটি।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর আরও খবর

img

ঊষর মরুর বুকে কেন বাড়ছে সবুজের ছোঁয়া?

প্রকাশিত :  ০৮:৪১, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:০২, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

দিনে দিনে সবুজের ছোঁয়া বাড়ছে ঊষর সাহারা মরুভূমির বুকে ! আফ্রিকার বিশাল মরুভূমির উষ্ণ বাদামি শরীরে পড়ছে সবুজের ছোপ। বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলে বাড়ছে গাছপালার পরিমাণ। 

সম্প্রতি নাসার উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে এমন কিছু দৃশ্য; যা দেখে অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম উপগ্রহটি সাহারা মরুভূমির সবুজ শ্যামল রূপ তুলে ধরেছে সকলের সামনে। পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক এবং রুক্ষ স্থানে এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।

চারিদিকে শুধু ধূ-ধূ প্রান্তর। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু বালি আর বালি। দূর-দূরান্তে তাকালেও মরুভূমির বুকে পানির হদিস পাওয়া দুষ্কর। নাসার উপগ্রহের ক্যামেরায় যে ছবি সেপ্টেম্বর মাসে ধরা পড়েছে তাতে দেখা গেছে মাত্র এক মাসের মধ্যেই টলটলে পানি ভরে উঠেছে প্রায় শুকনো হ্রদগুলো। সাধারণত সাহারার হ্রদগুলো শুষ্ক থাকে। বেশির ভাগ হ্রদে পানির লেশমাত্রও থাকে না।

এই ঊষর, প্রাণহীন বালির প্রান্তরে এত সবুজের অস্তিত্বের কারণ কী? প্রকৃতির এই বিপরীতধর্মী আচরণের নেপথ্যে কী লুকিয়ে রয়েছে? প্রকৃতির কোনো খামখেয়ালি আচরণে ভোল বদলে গেল মরু সাহারার?

সাহারার এই পরিবর্তিত রূপের নেপথ্যে রয়েছে এক ঘূর্ণিঝড়। যার জেরে পাল্টে গেছে সাহারার একাংশের ছবি। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তরফে জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত ৭ এবং ৮ সেপ্টেম্বর সাহারা মরুভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে বৃষ্টি হয়েছে।

অতিক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারি বৃষ্টি হয়েছে সাহারা মরুভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। আর তাতেই কার্যত সবুজের বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফ্রিকার বিষুবরেখার উত্তরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হচ্ছে ততই উত্তরে সরে যাচ্ছে ইন্টারট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জ়োন বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চলের সীমানা।

জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষক কার্স্টেন হাউস্টেইন জানিয়েছেন, সীমানাটি এই বছর সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি উত্তরে সরে গেছে। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে দুগুণ থেকে ছয় গুণ বেশি আর্দ্র হয়ে উঠছে সাহারা। এছাড়া গোটা পৃথিবীতে এল নিনো (উষ্ণ সামুদ্রিক জলস্রোতের পরিবর্তন) থেকে লা নিনোর (বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ) রূপান্তরের প্রভাব তো রয়েছেই।

মৌসুমি ঝড়ের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সাহারায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে। এমনকি মাঝেমধ্যে বন্যাও দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া গবেষকেরা। 

মরক্কো, আলজিরিয়া, তিউনিসিয়া ও লিবিয়ার মতো যে সব অঞ্চলে বৃষ্টি প্রায় হয়ই না, সে সব অঞ্চলগুলো কার্যত ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিশেষত মরক্কো এবং আলজেরিয়ার ওই শুষ্ক জায়গাগুলোতে এক বছরে যতটা বৃষ্টি হয়, তা দু’দিনেই হয়ে গেছে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর। চাঁদ, সুদান এবং এরিট্রিয়ার কিছু অংশে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেড়েছে।

পৃথিবীর বুকে আফ্রিকার উত্তর অংশই রুক্ষতম। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বর মাসে অন্য বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় বন্যাও হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে পরিবেশগত পরিবর্তন আসছে। তার ফল ভোগ করছে সাহারাও। অবশ্য এতে শাপে বর হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ মরুভূমিটির।

পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হবে, দিনের পর দিন সাহারায় তত সবুজায়ন হবে। চলতি বছরের জুনে নেচারে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশকে সাহারার জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকবে। সাহারায় সবুজের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু গবেষকেরা।

উডল হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট পিটার ডি মেনোকাল জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টি হলে বালির আস্তরণ সরে গিয়ে মাটি বেরিয়ে যায়। সেই সুযোগেই অনুকূল পরিবেশ পেয়ে সবুজ গাছপালা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সাল থেকে বর্ষা ক্রমশ দক্ষিণে সরে যেতে শুরু করে, বৃষ্টির অভাবে ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয় সাহারা।

তবে মালি, নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, এমনকি পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের কৃষকেরা গত তিন দশকে নিজেদের চেষ্টায় কয়েক কোটি গাছ লাগিয়েছেন। সাহারা মরুভূমির অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছেন।

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা