img

কমলগঞ্জে ধলাই নদীর বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা, নিম্নাঞ্চলের ২০টি গ্রাম প্লাবিত।।

প্রকাশিত :  ১১:৩২, ২০ আগষ্ট ২০২৪

কমলগঞ্জে ধলাই নদীর বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা, নিম্নাঞ্চলের ২০টি গ্রাম প্লাবিত।।
সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি, বন্যার শঙ্কা
টানা ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে  ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কমলগঞ্জ পৌরসভা, রহিমপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, আদমপুর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের প্রায়ই ১০টি স্থান অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পানি বাড়তে থাকলে এসব স্থান দিয়ে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ-আদমপুর আঞ্চলিক সড়কের ঘোড়ামারা ও ভানুবিল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কমলগঞ্জ পৌরসভার খুশালপুর, শ্রীনাথপুর, আলীনগর ইউনিয়নের যুগীবিল, মঙ্গলপুর, বারামপুর, জালালীয়া, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের উত্তর বালিগাঁও, বনগাঁও, চৈতন্যগঞ্জ সহ প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে চারিদিক থৈথৈ করছে। বানের জলে বিভিন্ন গ্রামে পুকুর ও ফিসারির মাছ ভেসে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলী জমি।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কমলগঞ্জের তথ্য মতে জানা গেছে ধলাই নদীর পানি দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর কয়েকটি বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি বেড়ে বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
img

অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমে

প্রকাশিত :  ১০:২২, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৫২, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

প্রাকৃতজ শামিমরুমি টিটন 


আলোনিশি খেলে চলে দিবারাত জলের খেলা

জলের খোলসে ভ্রূণজল বেঁধেছে বাসা—

দুলে ওঠে ঊ‍র্মির ঢেউ বুকে সিন্ধুব্যাথা

পলেপলে রচে ধরা প্রেমাখরে অমরাবতী

লিখে রাখে রসাদেহে আদিজল অন্তরালে

সত্য-শুদ্ধ প্রেমের কথা, যা হয়নি বলা....।


সুপ্ত-গুপ্ত জ্যোতি অমৃত প্রেমে মৃত্যুর সুধারস!

তুমি ছিলে প্রেম আরও বাস্তব—পৃথিবী প্রেমের মতো

দিবানিশি শেষে, ডুবে গেছি প্রগাঢ় নিবিষ্ট ধ্রুবলোকে

দেখেছি তোমারে নিভৃত খ-চোখে—খচিত খ-জল ভ্রূণ

অনিমেষ ধ্রুব! খগের মতো চেয়ে-চেয়ে দেখেছি কেবল

তুমি দিনেদিনে উর্বরা যৌবনে চিরায়ত সুধারস!

স্ফীত কল্লোল রমণীয় রমণ ভরা বর্ষার জলে—

ষড়ঋতু খেলে প্রেমের জলকেলী তোমার ষড়াঙ্গ দেহে!


ধরা-ধড় প্রেমে অনন্ত ধারায় ফুটেছে জীবন ফল!

রজঋতু রসে কোরাঙ্কিত কেশর সুবাসিত মধুময়

তোমার পদ্ম-নাভিতে গজানিয়া কদম নাগেশ্বর!

অঙ্কুরিত পুটে-নক্ষত্র ভ্রূণ-কোঁড়ে শাপলা-শালুক;

বিকশিত তোমার প্রশস্থ পয়োধ কলমী কচুরী ফুল

ঝিলমিল ঝিলে স্বপ্নিল প্রেমের স্রোতে ধরণী ব্যাকুল!


স্নিগ্ধ নরম আলতো তুলতুল ধূলিরেণু ঘাসফুল

লিলি টিউলিপ লাল সূর্য চুমে রক্তজবার ঠোঁটে—

উদয় অস্তে রসাঞ্জন রসা রসালো স্বর্ণলতা,

প্যাঁচিয়ে ধরেছ যথায় উথলিয়া উঠেছে প্রেমের স্রোত

যৌবন জোয়ারে রমণীয় তোমার হরিদ শরীরদেহ—

উর্বরা তত প্রশস্ত গভীর অস্থির সাগরের মতো!...

আদরে আদরে ভরে দিয়েছো তুমি জগৎ-জীবনকুল,

তারার বাসরে তুমি স্বর্ণচাঁপা চন্দ্রের নাকফুল!


ধ্রুপদী দোহিতা প্রেমে পরিপ্লুত ধরা প্রমোদকানন

দেখেছি প্রেমের শিহরনে তোমার দেহের গোলাপ ফুল!

তোমার প্রেমের আচ্ছাদনে প্রিয় স্বর্গ গিয়াছি ভুলে—

দিবানিশি দ্যুতি আলো-অন্ধকারে অতল প্রেমের জ্যোতি

বিম্ব ছায়ায় ধোঁয়াশা কুয়াশায় ধুমকেতু ধুপছায়া—

সজ্জিত দেহ প্রজাপতির মতো অর্কি রঙের বাসর!


কী নিঃশব্দ নীরব ভেসে যায় আবির প্রেমের স্রোত

অন্ধনিশিথে চন্দ্রমুখে দেখি তোমার নগ্ন দেহ—

খেলিতেছ তুমি চন্দ্র কলাবতী অমৃত প্রেমের রসে

বিকশিত তুমি সৌষম্য চির জগৎ-গন্ধা-ফুল

পুষ্পবতীর পরাঙমুখে চেয়ে থাকে নগ্ন পা-দুটি—

শিশিরের মতো চুমু খাই তোমার মধুপ আলতা পায়ে

হেঁটে যায় প্রেম নিশি নগ্ন পায়ে ভোরের শিশির মেখে

আমার হৃদয়ে নিশিভোর তোমার পায়ের নূপুর বাজে!


বুকে মরানদী কেঁদেছিল প্রেমে কী নিঃশব্দ নীরব!

মেঘে ভাসে জল চন্দ্র ডুবজল থাকে না মেঘের বাড়ি

ঘরহারা পাখি কখন কোথা ঘুরে, জানে নাকি প্রেমপাখি?

শূন্য ঘরেতে নির্জর প্রেমের অরূপ বসতবাড়ি—

অমৃত প্রেমের মূর্ছনা বাজায় এক মরমিয়া কবি!

তৃষ্ণা লাগে না মগ্ন মীনজলে, কস্তুরি মৃগনাভে

অথচ, কত কী! বলেছি কামনায়, বাসনার প্রেমজালে

কুহেলী মায়ায় ধোঁয়াশা কুয়াশায় মিছামিছি

ছেঁড়াফাড়া সব বিদীর্ণ স্মৃতি ধূলিকণা উঁইঢিবি—

বিরহ-বিমূঢ় বিবর্ণ মলিন, ধূসর পাণ্ডুলিপি!


প্রতি জনে এক, চেনা অচেনা সবে—লহরি রঙের লীলা,

মিলিতেছে প্রাণে ঐক্যে-একতা নিত্য প্রেমের পথে!

চন্দ্র-সূর্য নক্ষত্র তারা কেউ কাউকে চিনে কী?

চেনাজানা প্রেমে—যে প্রেমিক অচেনা প্রেমে সাজায় বাসর,

জানে কি গ্রহরা? কী নেশায় মত্ত প্রবর ঘূর্ণি-ঘোর—

সদা দিবানিশি কী প্রেম প্রেষণায় মৌন যশঃকীর্তন,

কী তৃষ্ণা প্রেমে আলো-অন্ধকারে—জানে কি জ্যোতির্লোক?

কে জানে তবে? জানে এক প্রেমিক, জানে প্রেমের কারক—

কী মহিমা প্রেমে, কী সৃজনকলায় প্রেম খেলে নিশিদিন!

অধরা মাধুরী, কে বাজায় বাঁশরী প্রেমের কক্ষপথে—

আমি জেগে থাকি প্রেমের-আলোনিশি নিশিভোর!

অথচ, কত কী বিফল বেদনায় বলিয়াছি দিবারাত!

হায়রে জীবন, শূন্য বিভাজনে ভ্রম বিরচন! ওহো!

মায়ায় কায়ায় সহস্র নিশুতি দেখেছি স্বপ্ন কত,

বেঁধেছি অথই স্বপ্নের বাসর, কত কী ঊর্ণাজালে!

ভেঙে গেছে শেষে নিশির শিশিরের মতো পৃথিবীর প্রেম

আলো আর নিশি এই চির খেলায় বাঁচিয়াছি একদিন!

চেয়ে দেখ নিশিভোর আমি চির অণ্ধ শেষে!—


প্রেমের জ্যোতিতে মৃত্যুর ছায়ায় নামে উজাগর রাত

তাই লিখে যাই—হে প্রিয় অনাগত, জীবনের জয়গান;

প্রেমের ধারায় বয়ে যায় অনন্ত চির স্বর্গ সময়!

বলে যাই প্রিয়—বিদূর ছায়াপথে প্রেমের গল্প যত

বেদনা বিধুর কাঙ্ক্ষা নিয়তির নিরত কষ্ট তত!

লোভ-লাভ-দেহে মৃত্যু কাকে বলে? ভয়ভীতি ফেলে

যে খেলায় প্রেমে, জানে সেই প্রেমিক! খুলে যায় মৃত্যুতে

স্বর্গ প্রেমের দ্বার—জীবন দেখে মৃত্যুর-সৌন্দর্য!

যারে মন যারে ময়ূরপঙ্খি-নায়- জ্যোতিষ্ক পথ দেখায়!

অপার প্রেমের রহস্য প্রগাঢ় উলঙ্গ পথের মতো

মৃত্যু শূন্য জগৎ মধুময় মধুর অমৃত প্রেমে—

আহা মায়াময়! মৃগতৃষ্ণা প্রেমে মরে নষ্ট প্রহর;

ফুরায় সময় কাহলী কোলাহলে মিলন-বিরহ প্রেমে

হা হা, হুহুতাশ ফাঁকা শূন্যে পূর্ণ অগ্নি-পবন-জলে

সুপ্ত-গুপ্ত প্রেমের রহস্য আলোক-অন্ধকারে—

চন্দ্রিমা রাতে সাদা ঘোড়ার স্রোত ভেসে যায় দিগন্তে!

সাতটি তারার তিমিরে নিশ্চুপ সপ্ত ভুবন দূর—

অন্ধনিশিতে দুলকী ছুটে যায় কালো ঘোড়ার স্রোত

পৃথিবীর বুকে অন্ধকার ফুঁড়ে নেমে আসে নিশিভোর...

————————————————————




কবি প্রাকৃতজ শামিমরুমি টিটন: লেখক-সম্পাদক-প্রকাশক, জননন্দিত মহাকবি, ঔপন্যাসিক; বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি।
(উক্ত কবিতাটি তাঁর ‘অমৃত রসে মৃগতৃষ্ণা প্রেমে’ মহাকাব্য উপন্যাস থেকে সংকলিত।)