img

নৈতিক নেতৃত্বের পথে: উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার -রেজুয়ান আহম্মেদ

প্রকাশিত :  ১৯:৪৮, ২৩ আগষ্ট ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ২১:৫৬, ২৩ আগষ্ট ২০২৪

নৈতিক নেতৃত্বের পথে: উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার -রেজুয়ান আহম্মেদ

বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার স্বপ্ন কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, কিংবা বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল নয়; এর সাথে সম্পর্কিত রয়েছে নৈতিকতা, সুশাসন, এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সততা। একজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নৈতিক মানদণ্ড যদি উন্নত না হয়, তবে সেই ব্যক্তি নিজেই দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এই বাস্তবতায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে নৈতিকতা ও সততার শিক্ষা প্রদান করা এবং তাদের প্রকৃত অর্থে মানুষের সেবায় নিযুক্ত করা।

বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি রোধ করছে এমন অনেক কারণের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের নৈতিক দুর্বলতা একটি বড় কারণ। অনেক ক্ষেত্রে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, এবং তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে দেশের স্বার্থের উপরে স্থান দেন। এই প্রবণতা শুধু সরকারি কার্যক্রমকে ব্যাহত করে না, বরং সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে। একটি উন্নত দেশের ভিত্তি হলো সুশাসন, এবং সুশাসনের মূলে রয়েছে নৈতিকতা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত একটি নৈতিকতা ভিত্তিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রবর্তন করা, যা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা, এবং জনসেবার মানসিকতা বিকাশ করবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে, কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হবে যে তারা জনগণের সেবক, এবং তাদের প্রধান কাজ হলো দেশের কল্যাণে কাজ করা, ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়।

কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করা উচিত, যেখানে নৈতিকতা, সততা, এবং পেশাগত দায়িত্বের বিষয়ে শিক্ষাদান করা হবে। এই প্রশিক্ষণে নৈতিকতার বিভিন্ন দিক, দুর্নীতি প্রতিরোধের উপায়, এবং সুশাসন সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনা করা হবে।

 কর্মকর্তাদের কাজের মূল্যায়নে নৈতিকতার মানদণ্ড যুক্ত করা উচিত। যারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কার ও স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে নৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। একজন নৈতিক নেতা কেবল নিজের কাজেই সততা প্রদর্শন করেন না, বরং তার অধীনস্থদের মধ্যেও নৈতিকতার বীজ বপন করেন। এই ধরণের নেতারা দলের মনোবল বাড়িয়ে তোলেন এবং কর্মীদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হন।

সরকারি কর্মকর্তারা যদি শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনকে একটি চাকরি হিসেবে দেখে, তাহলে তারা কখনোই দেশের প্রকৃত সেবক হতে পারবেন না। তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে তারা দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, এবং এই দায়িত্ব পালন কেবল পেশাগত নয়, নৈতিকও। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে এই সচেতনতা গড়ে তোলা যে তারা দেশের সেবক, এবং তাদের কাজের ফলশ্রুতিতে দেশের উন্নয়ন বা অধঃপতন নির্ভর করছে। এজন্য, তাদের প্রতি নির্দেশনা দিতে হবে যে তারা তাদের কাজে মানবিকতা, সুশাসন, এবং জনগণের কল্যাণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন। 

কর্তব্যপরায়ণতা ও সততা একটি সরকারি কর্মকর্তার প্রধান গুণাবলী হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত কর্মকর্তাদের এ বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করা এবং তাদের মধ্যে একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যেখানে সততা ও নৈতিকতার কোনো বিকল্প নেই। 

দুর্নীতি একটি দেশের উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যদি দুর্নীতির প্রবণতা থাকে, তবে তা দেশের অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার চেতনা গড়ে তুলতে হবে। তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে তারা দেশের জনগণের প্রতিনিধি, এবং তাদের কাজের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য, একটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নৈতিকতা শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেয় এবং এই শিক্ষার মাধ্যমে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রকৃত সেবার মানসিকতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, তবে তা বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হবে। নৈতিক ও সৎ সরকারি কর্মকর্তারা দেশের উন্নয়নের পথে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবেন।

বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা অবকাঠামোগত অগ্রগতি যথেষ্ট নয়; এজন্য প্রয়োজন নৈতিকভাবে উন্নত, সৎ, এবং দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে নৈতিকতার বীজ বপন করা। তবেই, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগিয়ে যাবে, এবং দেশটি একদিন সত্যিই উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাবে।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর