img

ট্রমা কাটিয়ে উঠবেন কীভাবে?

প্রকাশিত :  ১০:৫১, ২৬ আগষ্ট ২০২৪

ট্রমা কাটিয়ে উঠবেন কীভাবে?

মানসিক বিপর্যয় বা ট্রমা শব্দটির সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত। নানা কারণে মানুষ মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। মানসিক আঘাতে কিছুদিনের জন্য যেমন বাধাগ্রস্ত হতে পারে দৈনন্দিন জীবন, কারও কারও ক্ষেত্রে আবার মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাও দেখা যায়। এক্ষেত্রে করণীয় যা তা বিষয়ে পরামর্শ রইলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলামের।

ট্রমায় যা ঘটে

জীবনের যেকোনো পরিসরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মানসিক চাপের সৃষ্টি হলে শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামলাতে তৎপর হয়ে ওঠে শরীর। বিপর্যয়ের প্রাথমিক সময়ে অস্থির লাগতে পারে, বুক ধড়ফড় করতে পারে, হতে পারে ঘাম, এমনকি উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও সৃষ্টি হতে পারে। নেতিবাচক পরিস্থিতির শিকার হওয়া ব্যক্তি উদ্বিগ্ন বোধ করেন। তার খাওয়ার রুচি কমে যেতে পারে, হতে পারে ঘুমের সমস্যা। মনমেজাজও বিগড়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক কাজে মন তো বসেই না এবং একই সময়ে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে।

দীর্ঘ মেয়াদেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন

মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তির এমন দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার। এই ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি ভয় বা আতঙ্কের অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে সমস্যায় পড়তে পারেন। আশাহীন, ভরসাহীন একটি জীবনযাপন করতে পারেন তিনি। নিজেকে অযোগ্য কিংবা অপরাধীও মনে করতে পারেন তিনি। বিপর্যস্ত মনের অন্য উপসর্গগুলোও থাকতে পারে তার মধ্যে। জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্কগুলো বজায় রাখতে হিমশিম খেতে পারেন তিনি। এমনকি এগিয়ে যেতে পারেন আত্মহননের পথেও।

সমাধান কী

আপনজনদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে হবে। ব্যক্তিজীবনের খারাপ লাগার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো উন্মুক্ত পরিসরে বলা ঠিক নয়। বরং পরিবার, বন্ধু, কিংবা একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন নিজের অনুভূতি।

নিজেকে ব্যস্ত রাখুন

নিজের রোজকার দায়িত্ব সম্পন্ন করতে চেষ্টা করুন। স্বাভাবিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করাই ভালো। শরীরচর্চা করুন রোজ। মানসিক চাপ কমবে। এ ছাড়া শ্বাসের ব্যায়াম, যোগব্যায়াম কিংবা ধ্যান করতে পারেন।

প্রয়োজনে সাহায্য নিন

নিজের কিংবা কাছের মানুষদের প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। সুস্থ হতে সবারই যে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয়, তা কিন্তু নয়। অনেক মানুষই কাউন্সেলিং সহায়তা এবং সাইকোথেরাপি নেওয়ার মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসেন। 


img

ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে যেসব অভ্যাসে

প্রকাশিত :  ০৫:৩৭, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বাসার চাবি কোথায় রেখেছেন তা মনে না পড়া কিংবা বাজার থেকে কী কী কিনতে হবে তা হুট করে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ইদানীং অনেকেই ভুগছেন। এমনটা যে বয়স্কদের হচ্ছে তা নয়। অনেক কম বয়সীদের মধ্যেও এ ধরনের ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। হুট করে সবকিছু গুলিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে ভুলে যাওয়া কিংবা পছন্দের মানুষের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর তারিখ ইত্যাদি ভুলে যাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা নয়। চলার পথে হুট করে কিছু মনে না রাখত্রে পারলে খানিকটা পিছিয়ে পড়তে হয়। কখনো কখনো অন্যদের সামনে বেশ অস্বস্তিতেও পড়তে হয়।

কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিনের কিছু অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করছে। দিনের পর দিন একই অভ্যাসের কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে। 

উচ্চস্বরে গান শোনা: গান শোনা খুব ভালো একটি অভ্যাস। গান শুনলে মস্তিষ্ক শীতল হয়। দুশ্চিন্তা দূর হয়। কিন্তু কানে হেডফোন গুঁজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উচ্চস্বরে গান শুনলে মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়। টানা ৩০ মিনিট অতি উচ্চমাত্রার শব্দ শুনতে থাকলে শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণ রূপে লোপ পেতে পারে। শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও লোপ পেতে পারে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম: অতিরিক্ত ‘স্ক্রিন টাইম’ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। অফিসে সারা ক্ষণ কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের সামনে মুখ গুঁজে বসে থাকা, সারাক্ষণ ফোন স্ক্রল করা, স্ক্রিনে গেমস খেলা, ওয়েব সিরিজ দেখা ইত্যাদি কাজগুলো করলে দিনের অধিকাংশ সময় স্ক্রিনে চোখ থাকে। এতে চোখের যেমন  ক্ষতি হয়, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও কমে যায়। এতে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে।

অন্ধকারে থাকা: কেউ কেউ অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসেন। দীর্ঘ সময় অন্ধকারে থাকার অভ্যাস মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। এই অভ্যাস মনে বিষণ্ণতা তৈরি করে। আর বিষণ্ণতা মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে ধীর করে দেয়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সঠিক রাখতে প্রাকৃতিক আলোতে থাকতে হবে। সূর্যের আলোতে সময় কাটাতে হবে। এতে মেজাজ ভাল থাকে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বাড়ে।

একা থাকার অভ্যাস: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারলে অনেক বন্ধু পাওয়া যায়। কিন্তু ভার্চুয়াল বন্ধুরা কাছের হয় না। এখন বেশিরভাগ মানুষ ভেতর থেকে একা হয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ভীড়-আড্ডা-অনুষ্ঠানে যেতে চান না। পারিবারিক অনুষ্ঠান হোক কিংবা অফিসের পার্টি— সব কিছুই এড়িয়ে চলতে চান। অর্থাৎ নিজের মতো একা থাকতে চান। একা থাকার অভ্যাসও কিন্তু মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা কাছের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় হাসিখুশি ও কর্মদক্ষ হন। তাঁদের স্মৃতিশক্তিও অন্যদের তুলনায় বেশি হয়।

অধিক পরিমাণে চিনি খাওয়া: অতিরিক্ত চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার খাওয়াও মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। আবার বার্গার, ভাজাপোড়া খাবার, আলুর চিপ্স বা কোমল পানীয়ের মতো খাবার স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। তাই এসব খাবারের বদলে খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফল ও বাদামজাতীয় খাবার রাখতে হবে।