img

প্রিয় ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার

প্রকাশিত :  ০৮:১২, ৩০ আগষ্ট ২০২৪

প্রিয় ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার


প্রিয় ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার,

আসসালামু আলাইকুম। আমি করিম চাচা, একজন সাধারণ মানুষ, আপনার কাছে এই চিঠি লিখছি আমাদের দেশের মানুষের হৃদয়ের কথা আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আপনাকে সবার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সম্মান জানাই। আজ আপনাকে এই চিঠির মাধ্যমে যে অনুরোধ জানাতে চাই, তা আমাদের সকলের প্রাণের দাবি। আমাদের দেশ যেন দুর্নীতিমুক্ত হয়, আর সেই সঙ্গে আমরা যেন একটি উন্নত ও সম্মৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে পারি—এই স্বপ্নই আমাদের প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে বড় আশা।

স্যার, আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, এই দেশটি একসময় ছিল সোনার বাংলা। আমাদের পূর্বপুরুষরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধশালী, আর শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশের। কিন্তু দুর্নীতি, অন্যায়, আর স্বার্থপরতার ফলে সেই স্বপ্ন আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে। আমরা জানি, আপনি সবসময় দেশ এবং মানুষের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। আপনার নেতৃত্বে, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, বিশ্ববাসীও স্বীকার করে। সেই প্রেক্ষাপটে, আমরা আপনাকে এ জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখতে চাই, যে পথ দেখাবে দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধশালী এক বাংলাদেশের দিকে।

দুর্নীতি আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এটি শুধু অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে না, মানুষের নৈতিকতাকেও বিনষ্ট করছে। একটি জাতি যখন নৈতিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তাদের জন্য উন্নতি তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের সন্তানরা একটি সৎ, ন্যায়পরায়ণ সমাজে বড় হতে পারে, যেখানে তারা সঠিক মূল্যবোধ শেখে এবং একজন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে—এই আশা নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। কিন্তু আজকের সমাজে, সেই মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, এবং এর পেছনে রয়েছে দুর্নীতির করালগ্রাস। 

আপনার কাছ থেকে আমরা যে প্রত্যাশা করি, তা হলো আপনি আমাদের দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি নির্মূল করবেন। আপনি জানেন, দুর্নীতি কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি একটি সমাজব্যাপী সমস্যা। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে, এবং উন্নয়নের প্রতিটি পদক্ষেপকে ব্যাহত করেছে। আমাদের দেশে যারা সত্যিকারের পরিবর্তন চান, তারা সবাই চান দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান। আপনার নেতৃত্বে, আমরা চাই আপনি এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যা দুর্নীতিকে চিরতরে নির্মূল করতে পারে। 

স্যার, আমরা চাই এমন একটি সমাজ, যেখানে আইনের শাসন থাকবে এবং সবাই সমানভাবে আইনের আওতায় থাকবে। আমাদের সরকার যেন কোনোভাবেই দুর্নীতির সাথে আপস না করে। আমরা চাই, যারা দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আপনি হয়তো জানেন, অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে এমন একটি বিচারব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যা দুর্নীতিবাজদের জন্য কোনো রকম ছাড় না দেয়।

অন্যদিকে, একটি দেশের উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন তার জনগণ শিক্ষিত, সচেতন এবং কাজের প্রতি মনোযোগী হয়। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও আপনি নজর দিন। আমরা চাই, আমাদের দেশের যুবসমাজ যেন সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয় এবং তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। আপনার নেতৃত্বে, আমরা চাই একটি সুশিক্ষিত, কর্মঠ ও সৎ জাতি গঠিত হোক, যারা দেশের উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।

স্যার, আপনি সবসময় গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছেন, যার ফলে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। আমরা চাই, আপনি এ কাজটি আরো বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন করুন। গ্রামের মানুষ যেন তাদের কাজের সঠিক মূল্য পায়, তারা যেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে, এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করুন। 

আপনার নেতৃত্বে আমরা একটি উন্নত, সম্মৃদ্ধশালী এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। আমরা বিশ্বাস করি, আপনার অসাধারণ নেতৃত্বে এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত দেশ, যেখানে তারা তাদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারে, সেই দেশের জন্য আপনার কাছে এই আকুল আবেদন করছি।

স্যার, আপনি আমাদের দেশের একজন গর্বিত সন্তান। আপনাকে আমরা এই জাতির আশার বাতিঘর হিসেবে দেখি। আপনার প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে যে, আপনি আমাদের এই স্বপ্নপূরণের পথে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। আপনার নেতৃত্বে, আমরা দুর্নীতিমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, এবং উন্নত বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করব—এই প্রত্যাশায় দিন গুনছি।

আপনার কাছে আমাদের প্রার্থনা, আপনি আমাদের এই দায়িত্ববোধের আওতায় নিয়ে আসুন, যাতে আমরা সকলে একসঙ্গে এই দেশটিকে উন্নত ও সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে পারি। আমরা আপনার পাশে আছি, এবং সবসময় থাকব, যতদিন না আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাই। 

আপনার সদিচ্ছা ও দৃঢ়তায় আমরা বিশ্বাস করি, এবং আমরা জানি, আপনি আমাদের এই চাওয়া পূরণে সফল হবেন। 


অগণিত শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা সহ,  

করিম চাচা  

বাংলার মানুষের পক্ষ থেকে

img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর