img

আজকের শেয়ার বাজার: গতিপ্রকৃতি ও আগামীকালের পূর্বাভাস

প্রকাশিত :  ১৪:১৯, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আজকের শেয়ার বাজার: গতিপ্রকৃতি ও আগামীকালের পূর্বাভাস

রেজুয়ান আহম্মেদ


শেয়ার বাজারের প্রতিটি দিনের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের মনে একটি নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করে। আজকের শেয়ার বাজারের পারফরম্যান্স এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রভাবগুলি বিশ্লেষণ করে আগামীকালের বাজারের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ার বাজারে লেনদেনের প্রতিটি মুহূর্তে যে পরিবর্তন ঘটে, তা ভবিষ্যতের বাজারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে সহায়তা করে। আজকের শেয়ার বাজারের বিশ্লেষণ এবং আগামীকালের সম্ভাব্য বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে উপস্থাপন করা হলো।

আজকের শেয়ার বাজারের সূচনা ছিল কিছুটা ইতিবাচক। যদিও সকালে লেনদেনের শুরুতে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল, দুপুরের দিকে বাজারে একটি মৃদু পতন লক্ষ্য করা যায়। এই পতনের কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির কিছু মন্দার লক্ষণ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া আজকের বাজারে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

সকালে শেয়ার বাজারে কিছু শক্তিশালী খাতের শেয়ারগুলোতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে ব্যাংকিং, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে উল্লেখযোগ্য উত্থান দেখা গিয়েছে। এই উত্থানের পেছনে মূল কারণ ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা অর্জনের আশা এবং কিছু নতুন নীতিমালা ও ঘোষণার প্রতিফলন। কিন্তু দুপুরের পর বাজারে কিছু শেয়ারের মুনাফা কাটার প্রবণতা দেখা যায়, যা বাজারের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মধ্যবর্তী সময়ে বাজারের পতনের পেছনে কয়েকটি মূল কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু অস্থিরতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা বাড়িয়েছে। এছাড়াও, কিছু শেয়ারের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সেগুলি বিক্রির চাপও বাড়ে, যা বাজারের পতনে অবদান রাখে।

আজকের শেয়ার বাজারের পারফরম্যান্সে বিভিন্ন খাতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল। প্রধানত ব্যাংকিং, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, এবং নির্মাণ খাতের শেয়ারগুলির অবস্থা বিশ্লেষণ করা জরুরি।

ব্যাংকিং খাতে আজকের লেনদেন শুরুতে ইতিবাচক ছিল। দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলির ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দুপুরের পর ব্যাংকিং খাতে কিছু মুনাফা কাটা শুরু হয়, যা খাতের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রযুক্তি খাত আজকে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় বিভিন্ন নতুন পণ্য ও সেবার উদ্বোধন এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে উত্থানের খবর। তবে বাজারের শেষের দিকে কিছু শেয়ারের দাম কমে, যা খাতের সমন্বিত মূল্যায়নে সামান্য পতন সৃষ্টি করে।

স্বাস্থ্যসেবা খাত আজকের শেয়ার বাজারের অন্যতম প্রভাবশালী খাত ছিল। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষিতে এই খাতের শেয়ারগুলির চাহিদা বৃদ্ধির ফলে খাতটি আজও শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। যদিও দিনের শেষের দিকে কিছু মুনাফা কাটার চাপ ছিল, তবে খাতটির সামগ্রিক পারফরম্যান্স ছিল সন্তোষজনক।

নির্মাণ খাতের শেয়ারগুলিতে আজ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিছু বড় প্রকল্পের ঘোষণার ফলে নির্মাণ খাতের শেয়ারগুলিতে প্রাথমিক উত্থান দেখা গিয়েছিল, কিন্তু দিনশেষে বাজারের সামগ্রিক পতনের প্রভাবে খাতটির পারফরম্যান্স কিছুটা নেতিবাচক ছিল।

আগামীকালের শেয়ার বাজার কেমন যাবে তা নির্ভর করবে বেশ কিছু মূল বিষয়ের ওপর। প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাজারের গতিপ্রকৃতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার সংক্রান্ত খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। যদি আন্তর্জাতিক বাজারে কোনও বড় পরিবর্তন ঘটে, তবে তার প্রভাব আগামীকালের বাজারেও পড়বে।

যদি আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়, তাহলে আগামীকাল আমাদের শেয়ার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আশা করা যেতে পারে। বিশেষ করে, তেলের দাম হ্রাস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সূচকের উন্নতি আগামীকালের বাজারকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি কোনও নেতিবাচক খবর আসে, তাহলে তার প্রভাবও আমাদের বাজারে প্রতিফলিত হবে।

দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও আগামীকালের বাজারের গতিপ্রকৃতিতে প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, আসন্ন নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাজারে কিছু অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা সতর্কভাবে বাজারে প্রবেশ করতে পারেন, যা সামগ্রিক লেনদেনের পরিমাণে প্রভাব ফেলতে পারে।

আগামীকালের বাজারে প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের শেয়ারগুলিতে উত্থান দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে, যদি স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন কোনও উদ্ভাবন বা পণ্য উদ্বোধন হয়, তাহলে খাতটি আরও শক্তিশালী হতে পারে। একইভাবে, প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলিও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।

ব্যাংকিং খাতে যদি কোনও বড় অর্থনৈতিক নীতি ঘোষণা হয়, তাহলে খাতটির শেয়ারগুলিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যেতে পারে। একইভাবে, নির্মাণ খাতেও যদি কোনও নতুন প্রকল্পের ঘোষণা আসে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা খাতটির শেয়ারগুলিতে আগ্রহ দেখাতে পারেন।

আগামীকালের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সময়ে স্বল্প-মেয়াদী বিনিয়োগের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা বাঞ্ছনীয়।

বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বাজারের চলমান খবর এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ থাকা। যেকোনো বড় পরিবর্তন বা ঘোষণার প্রভাব বাজারে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রতিফলিত হতে পারে, তাই বিনিয়োগকারীদের নিজের বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সচেতনতার সঙ্গে বাজারে লেনদেন করতে হবে।

আজকের শেয়ার বাজারে ওঠানামা ছিল কিছুটা মিশ্র। যদিও দিনের শুরুর দিকে বাজারে উত্থান দেখা যায়, কিন্তু দিনশেষে মুনাফা কাটা এবং বাজারের সাধারণ অস্থিরতার কারণে পতন লক্ষ্য করা যায়। আগামীকালের শেয়ার বাজারে উত্থান-পতনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা অনেকাংশে নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর। বিনিয়োগকারীদের উচিত নিজেদের বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দেওয়া।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

দেউলিয়া হওয়ার পথে ১০ ব্যাংক: গভর্নর

প্রকাশিত :  ১৬:১২, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কমপক্ষে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার মতো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। তবে সরকার এসব ব্যাংক বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

আজ রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন গভর্নর।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি না কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে, তবে এটাও ঠিক অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে আছে। ১০টার মতো ব্যাংকের অবস্থা এমন। সরকার এসব ব্যাংক বাঁচানোর চেষ্টা করছে। গভর্নর ১০ ব্যাংকের কথা বললেও সেগুলোর নাম উল্লেখ করেননি।

ব্যাংক খাতের অবস্থা যাই হোক গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য আমানত ইন্সুরেন্স ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের ৯৫ শতাংশ গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিত হবে। বিশ্বের কোনো দেশই ব্যাংকিং খাতের আমানতের ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দেয় না। আমরাও ৯৫ শতাংশ গ্যারান্টি দিচ্ছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলে, ‘সেটা এস আলমের হোক বা সালমান এফ রহমানের হোক। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়নি।’

যদি কেউ এস আলমের সম্পত্তি কিনে তবে নিজ দায়িত্ব কিনবেন, তার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক নিবে না বলেও সতর্ক করেছেন গভর্নর। 

তিনি বলেন, ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাতের বাইরে চলে গিয়েছিল, ৩০ হাজারের মতো ফিরে এসেছে।

 

অর্থনীতি এর আরও খবর