img

দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশ চালানোর জন্য কেমন নেতা প্রয়োজন: ড. মুহাম্মদ ইউনুস নাকি রাজনীতিবিদ?

প্রকাশিত :  ০৬:৪৯, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুর্নীতিগ্রস্ত বাংলাদেশ চালানোর জন্য কেমন নেতা প্রয়োজন: ড. মুহাম্মদ ইউনুস নাকি রাজনীতিবিদ?

রেজুয়ান আহম্মেদ

বাংলাদেশ, যে দেশটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে এসেছে, সেখানে এখনো দুর্নীতির মেঘ ঘনীভূত। দেশের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় এর প্রভাব স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে দেশের নেতৃত্ব কেমন হওয়া উচিত? একটি দেশের উন্নয়ন এবং দুর্নীতি মুক্তি অর্জনের জন্য কেমন ধরনের নেতার প্রয়োজন? একজন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো নীতিবান এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতা নাকি প্রচলিত রাজনীতিবিদদের প্রয়োজন?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি অনেক দিনের পুরনো ব্যাধি। ক্ষমতায় আসার পর অনেক রাজনীতিবিদ নিজেদের স্বার্থেই দেশকে শাসন করেছে, জনগণের কল্যাণের কথা ভুলে গিয়ে। দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজনীতিবিদদের অনেকেরই একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতা ধরে রাখা এবং নিজস্ব ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করা। 

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই, কীভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরা দেশের সম্পদ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করে। এই ধরনের নেতার কারণে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। 

অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো একজন মানুষ, যিনি নোবেল বিজয়ী এবং গরীব মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তার মতো নেতার প্রয়োজন অনেক বেশি অনুভূত হয়। ড. ইউনুস একজন সফল উদ্যোক্তা এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণার প্রবক্তা। তিনি দেখিয়েছেন যে, ছোট উদ্যোগ, মাইক্রোক্রেডিট, এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কিভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়া যায়। 

ড. ইউনুসের নেতৃত্বের অন্যতম গুণ হল তার সততা ও নৈতিকতা। তার বিশ্বাস ছিল যে, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হলে তাকে নিজেকেও নৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। এই নৈতিকতার কারণে তিনি কখনোই কোনো রকমের দুর্নীতির সাথে আপোস করেননি। 

বাংলাদেশের মতো একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো নৈতিক এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন নেতার প্রয়োজন। একজন সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক এবং জনগণের সেবায় নিবেদিত নেতা দুর্নীতি দূর করতে এবং দেশের উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে। প্রচলিত রাজনীতিবিদরা দেশের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যেভাবে নিজেদের স্বার্থে কাজ করে, তাতে দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সম্ভব নয়। 

ড. ইউনুসের মতো নেতারা রাজনীতি থেকে দূরে থেকে দেশের জন্য যা করেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তারা শুধু ক্ষমতা চাইতে নয়, দেশের মানুষের সেবা করতেই আসেন। এই ধরনের নেতার নেতৃত্বে দেশের জনগণ একটি সুস্থ ও স্বচ্ছ সরকারব্যবস্থা আশা করতে পারে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং দুর্নীতি মুক্তির জন্য যে ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন, তা শুধুমাত্র ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো নেতার মাধ্যমেই সম্ভব। একজন সত্যিকারের নৈতিক ও আদর্শবান নেতা দেশের কল্যাণে কাজ করবে, ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়। 

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যদি ড. ইউনুসের মতো নেতাকে নেতৃত্বে দেখতে চাই, তবে আমাদেরকে এই ধরনের নেতা তৈরির জন্য কাজ করতে হবে। রাজনীতির চেয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত নেতাই পারে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর