img

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হবে, দেশি সম্পদ জব্দ হবে: বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত :  ০৬:৫২, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হবে, দেশি সম্পদ জব্দ হবে: বাংলাদেশ ব্যাংক

সরকার বিভিন্ন ব্যাংকের যেসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। পাচার হওয়া অর্থের বড় গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য বিশ্বব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনা শুরু করেছে। পাশাপাশি দেশে ঋণখেলাপিদের যেসব সম্পদ আছে, সেসব জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার ব্যাংকার্স সভায় এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

জানা গেছে, গতকাল ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় আট মাস পর। এটি ছিল নতুন গভর্নরের প্রথম সভা। এ সভার আলোচ্যসূচিতে নানা বিষয় থাকলেও ঘুরেফিরে সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলো নিয়েই কথা বেশি হয়। বিশেষ করে ইতিমধ্যে যেসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলোর তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়েও কথা হয়। এতে উঠে আসে, দেশের ১১ ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা টাকা তুলতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে টাকা না ছাপিয়ে বিকল্প উপায়ে এসব ব্যাংককে সহায়তার সিদ্ধান্ত হয়। অন্য ব্যাংকগুলো সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেবে, এতে নিশ্চয়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সভা শেষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে। সরকার এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের পাশে আছে। ব্যাংকগুলোর পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ সময় আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি।

গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংক খাত থেকে বিভিন্নভাবে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। মূলত সাত-আটটি ব্যাংক থেকে এই অর্থ বের হয়েছে। এসব ব্যাংক তারল্য–সংকটে পড়েছে। আমরা আগের মতো টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংকে দেব না। এটি করতে হলে দুই লাখ কোটি টাকা ছাপাতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতি, ডলারের দাম—সবকিছু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যাবে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা তারল্য–সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সীমিত আকারে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এসব ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংক থেকে টাকা আমানত হিসেবে পাবে, এতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দেবে।’

গভর্নর বলেন, ‘যেই ব্যাংকগুলো এখন সমস্যায় পড়েছে, আমরা বেশ আগে থেকেই তা জানতাম। এমনকি যাঁরা টাকা জমা রেখেছেন, তাঁরাও সেটা জানতেন। বেশি মুনাফার আশায় অনেকে এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। এ জন্য এসব ব্যাংক থেকে বেশি টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছে। তাই যাঁরা টাকা জমা রেখেছেন, তাঁদের কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যবস্থাপনাতেও পরিবর্তন আসবে। এসব ব্যাংকে নিরীক্ষা করা হবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে, এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কী হবে। এগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে একা চলবে নাকি কারও সঙ্গে একীভূত হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে। ছোট ব্যাংক হলে অবসায়ন হতে পারে। ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক টাকা নাই হয়ে গেছে। এক-দুই বছর সময় লাগবে এসব ব্যাংক মেরামত করতে।

গভর্নর বলেন, ‘আমরা বড় ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করে তাদের দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নিয়েছি। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সামনে আরও আলোচনা হবে। আমরা তাদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত আনতে ও কারিগরি সহায়তা দিতে আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তা জব্দের জন্য বলছি।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাজ্যেই শুধু একজনের ৫০০-৬০০ বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। আরও অনেকের এমন সম্পদ রয়েছে। আমাদের অর্থের বড় গন্তব্য যুক্তরাজ্য, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব অর্থ ফেরাতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।’

গভর্নর বলেন, ‘সাত-আটটি ব্যাংকে সমস্যা থাকলেও পুরো ব্যাংকিং কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। ব্র্যাক ব্যাংকের আমানতে ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি আছে। সমস্যায় পড়া ব্যাংকের আমানতকারীদের আমরা রক্ষা করব। সরকার তাঁদের পাশে আছে। কিন্তু এ জন্য সময় দিতে হবে।’

সভা শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ব্যাংক খাতের উন্নয়নে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ, আইনি কাঠামো জোরদার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী করতে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ হলো সরকারি চারটি ব্যাংকে দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের বিল পরিশোধ আটকে আছে। আমরা আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এটা শোধ হবে। এতে বাজারের ওপর যে চাপ আছে, তা কমে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, নীতি সুদহার ততক্ষণ বাড়তে থাকবে, যতক্ষণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে নীতি সুদের হার বেড়ে ১০ শতাংশে পৌঁছাবে।


অর্থনীতি এর আরও খবর

img

১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত :  ১৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১১ হাজার ৮৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি মাস অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ২২ লাখ ডলার বা ৯৮৬ কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসছে। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে প্রবাসী আয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, এই সময়ে রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

এই সময়ে ১১ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাবাক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসার পর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর গত সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।


অর্থনীতি এর আরও খবর