img

ছুটি না নিয়েই ইউপি চেয়ারম্যান ব্রিটেনে

প্রকাশিত :  ১৬:৩৫, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 ছুটি না নিয়েই ইউপি চেয়ারম্যান ব্রিটেনে

সুনামগঞ্জ জেলাস্থ জগন্নাথপুর উপজেলার ৩ নং মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরীন বিদেশে গমনের জন্য ছুটির আবেদন করেন তা মঞ্জুর হওয়ার আগেই বিধি বহির্ভূতভাবে ব্রিটেনে চলে গেছেন তিনি। প্রায় দুই মাস ধরে ভুক্তভোগীরা তাকে পাচ্ছেন না। এমনকি ফোনও বন্ধ রয়েছে।

৩ নং মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান শেরীনের যুক্তরাজ্যে গমনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ত্যাগ করেন মাহবুবুল হক শেরীন। জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। প্রায় এক মাস ধরে চেয়ারম্যান এলাকায় না থাকায় ইউনিয়নবাসী পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান শেরীন যেভাবে বিধি বহির্ভূতভাবে ব্রিটেনে গেছেন ঠিক তেমনি ইউপি সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আব্দুল ওহাব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনও বিধিবহির্ভূত ও অবৈধ।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার ৩নং মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেরীন বহির্বিশ্ব যুক্তরাজ্যে গমনের জন্য ইউএনও’র মাধ্যমে

 সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবর ৯০ দিনের ছুটির জন্য একটি আবেদন করেন। আবেদনে ছুটির যৌক্তিক কারণ না থাকায় ৯ জুন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে ছুটির যুক্তিসঙ্গত কারণ জানাতে জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে জেলা প্রশাসক তা জগন্নাথপুর ইউএনও বরাবর পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এই তদন্তের দুই মাস আগেই ইউপি চেয়ারম্যান শেরীন যুক্তরাজ্যে চলে যান।

ইউপি সচিব তরিকুল ইসলাম জানান, ইউপি চেয়ারম্যান শেরীন যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন । সেখানে তিনি ৩ মাস থাকবেন। যাওয়ার আগে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ইউপি সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি ৯০ দিনের ছুটি নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান অন্তত দুই মাস আগে যুক্তরাজ্যে গেছেন। ইউপি সচিব, ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ প্রথম দিকে ইউনিয়নে সেবাগ্রহীতাদের চেয়ারম্যান ঢাকায় চিকিৎসা নিতে গেছেন বলে বিভ্রান্ত করেছেন। ঈদের পর থেকে বলছেন তিনি ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে গেছেন।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, ৩ নং মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শিরীন যুক্তরাজ্যে গমনের বিষয়টি তার জানা আছে। তবে ইতিপূর্বে তিনি যুক্তরাজ্যে গমনের জন্য ৯০ দিনের ছুটির জন্য একটি আবেদন করেছেন। আবেদনটি অনুমোদন হয়নি, এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ছুটির অনুমোদন ছাড়া বিদেশ গমন বিধিবহির্ভূত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যথাযথ নিয়মে দায়িত্ব হস্তান্তর না হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনও বিধি বহির্ভূত। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার

প্রকাশিত :  ১২:৫৮, ১৭ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫৯, ১৭ জুন ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় স্কুল ছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যায় প্রতিবেশী মো: জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আসামির দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশীকালে হত্যাকাণ্ডের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ। 

সোমবার (১৬ জুন ) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে  মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এসব তথ্য গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।

গত ১২ জুন সকালে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের কন্যা এবং স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাসিফা জান্নাত আনজুম (১৫) 
কোচিং ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় । এরপর সে আর ফিরে আসেনি। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও তাকে না পেয়ে স্বজনরা ঐ দিনই কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ।

নিখোঁজের দুই দিন পর ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় থানায় ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়। 

ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতিঃ দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম আপছার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। 

দ্রুততম সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল (অতিঃ দায়িত্বে কুলাউড়া সার্কেল) নেতৃত্বে কুলাউড়া থানার অফিসারদের নিয়ে কয়েকটি বিশেষ টিম গঠন করে আশেপাশের বাপক তল্লাশী করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়। 

শুধু স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ৬টি টিম গঠন করা হয়। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জাগো এবং নারী ঘটিত কিছু বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় জুনেল মিয়াকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করে পর্ন সাইটে ব্রাউজিং এর তথ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। আটকের পর দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত জুনেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পুলিশ সুপারের সামনে রাত ১২ টার দিকে হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। 

জিজ্ঞাসাবাদের জুনেল মিয়া জানায়, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেটে আসা যাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া ভিকটিমের সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে ঘটনার দিন গত ১২জুন ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামীর বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় আসামী ভিকটিমের সাথে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেয়। ভিকটিম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল মিয়া ভিকটিমকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তখন ভিকটিম চিৎকার করলে জুনেল মিয়া তার হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরলে ভিকটিম ঘটনাস্থল কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমকে মোকাম সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখে। 

মোকামের মাঠে পড়ে থাকা ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে  এবং ভিকটিমের পরিহিত বোরকাটি নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলী গংয়ের পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারীর পাশে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয় লোকজন এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভিকটিমের সেই বোরখা উদ্ধার করে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর