|| মকিস মনসুর ||

img

শিক্ষকদেরকে অসম্মান করা জাতির জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক!

প্রকাশিত :  ১৮:৫৪, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিক্ষকদেরকে অসম্মান করা জাতির জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক!

|| মকিস মনসুর ||

শিক্ষকের ঋণ কখনো শোধ করা যায় না। আজ আমরা জীবনের যেখানেই প্রতিষ্ঠিত থাকি না কেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক—শিক্ষিকাদের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। শিক্ষাকে যাবতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলে, শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম।বলতে গেলে এর বিকল্প নেই। শিক্ষার হাতেখড়ি যদিও শুরু হয় পরিবার থেকে, কিন্তু তার পূর্ণতা পায় একজন শিক্ষকের হাতে। 

মহান আল্লাহু রাব্বুল আলামিন শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। তাদের সম্মানে ভূষিত করেছেন। ফলে সমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। 

পবিত্র কোরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে।

মহান আল্লা তা’আলা বলেন, ‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক, আয়াত ১—৫)

আমাদের প্রিয় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা  (সা:) (আ:) এরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব—শিষ্টাচার শেখো। এবং যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো, তাকে সম্মান করো। (আল—মুজামুল আওসাত, হাদিস ৬১৮৪)

মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য আমাদের কোনো না কোনোভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যেতে হয়। বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়নে জানা যায়, মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ছিল গুরুগৃহ, অর্থাৎ জ্ঞান অর্জনের জন্য গৃহ ত্যাগ করে শিক্ষাগুরু বাড়িতে যেতে হতো। পবিত্র হাদিস হিসেবে প্রচলিত আছে, জ্ঞান অর্জনের জন্য সূদুর চীন দেশে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষার মূলমন্ত্রই হলো সঠিক জীবন দর্শন দান। এই জীবন দর্শন দান করেন শিক্ষক। একটি শিশু যখন শিক্ষকের কাছে যায় তখন মন থাকে খালি ক্যানভাস। শিক্ষক তাঁর জ্ঞানের তুলি দিয়ে সেখানে জীবনের ছবি আঁকেন। ধীরে ধীরে মানব শিশুকে মানবে পরিণত করেন। জগতের ভালো—মন্দ, ন্যায়—অন্যায় বিচার—বিশ্লেষণের বোধ সঞ্চারিত করেন। স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন, ‘মানুষের অন্তর্নিহিত পরিপূর্ণ বিকাশই হলো শিক্ষা, আর তাঁর পথপ্রদর্শক হলেন শিক্ষক।’ তাই শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড, তবে শিক্ষক হলেন সেই মেরুদণ্ড গড়ার প্রধান কারিগর। একজন শিক্ষকের ভূমিকা ব্যতিত কোনো জাতিই শিক্ষিত জাতিতে পরিণত হতে পারে না।

একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা—মা’ আমাদের প্রথম শিক্ষক হলে ও আসল শিক্ষক হলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষক যারা আমাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন।

শিক্ষকরা জাতিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে নিজেরা মোমের মতো নিঃশেষিত হন। একজন শিক্ষক নিজে শিক্ষা অর্জন করার পর পরই অপরকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত ও চরিত্র গঠনে ভূমিকা পালন করে থাকেন। 

ইদানিং বাংলাদেশের বতমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লিখতে বাধ্য হচ্ছি, কোনো শিক্ষক যদি ভুল করেন প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্ত করে প্রসাশনিক অ্যাকশন নেওয়ার বিধান রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচার করা হবে। এটাই বাস্তবতা। 

একজন শিক্ষকের দোষ/গুণ/ভালো/মন্দ অনেক বিষয় থাকতেই পারে। সে বিচারের ভার শিক্ষার্থীরা নেবে কেন? 

সারা দেশব্যাপি শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানোর এক হিড়িক দেখা যাচ্ছে। ফেইসবুক ও টিভি চ্যানেল এবং বিভিন্ন পত্রিকার নিউজে বেশ কিছু ছবি এসেছে, একজন স্যারকে জো\'রপূর্বক পদ\'ত্যাগ করানোর সময় স্ট্রো\'ক করেছেন। সত্য কি না জানিনা গতকাল নাকি এই সম্মানিত শিক্ষক মারা গেছেন। আরেকজন ম্যাডামকে জুতা গলায় দেওয়া হয়েছে। অন্যান্যদেরকে মার পিট করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শারিরীর আক্রমন করেছে শিক্ষকদের এ এক হৃদয়বিদারক কান্নার চিত্র। একজন শিক্ষক! 

সারা জীবন শিক্ষকতা পেশায় কাটিয়ে ছাত্রদের বেত্রাঘাতে তার পিটেই আকা হলো ক্ষতবিক্ষত বাংলাদের মানচিত্র ২০২৪? ক্ষমা করো হে জাতির শিক্ষাগুরু আমরা তোমার নিরাপত্তা দিতে পারিনি আমরা লজ্জিত!!!

শিক্ষকদের বিচার করার দায়িত্ব কখনো শিক্ষার্থীদের হতে পারে না। প্রশাসন আছে, আইন আছে, আছে পরিচালনা কমিটি। এমন বেয়াদবি শিক্ষার্থীরা করবে কেন? কোন ভাবেই ছাত্ররা বা অন্যরা শিক্ষককে অপদস্ত হেনাস্থা করে জোর পুর্বক পদত্যাগ করানো, এটা অপ —সংস্কৃতি, অমানুষিক, অমানবিক, 

শিক্ষকদেরকে অসম্মান করা জাতির জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক! 

ফেইসবুকে করা একজন ব্যক্তির কমেন্ট পুরাপুরি তুলে ধরছি, কোন শিক্ষকের অপরাধের পক্ষে আমি নই। শিক্ষক অপরাধ করেছেন, দালালি করেছেন, নানান রকম অনিয়ম করেছেন, অতএব তাঁকে শাস্তি পেতে হবে, আমি আপনার সাথে একমত। এমন অপরাধী কোন শিক্ষক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে না চাইলে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করতে হবে,তাই বলে ছাত্ররা ইচ্ছামত বেয়াদবি করবে? মিডিয়ার সামনে এসে ‘আমি অমুক স্যারের মাথায় থাপ্পড় মেরে উল্লাস করছে আবার আরেকজন এর গায়ে হাত তুলতে পেরেছি!’ বলে বিজয়ের হাসি হাসবে? সেই চিত্র বা সাল কি ভূলে যাবে জনগন। শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করার এটাই কি একমাত্র পদ্ধতি?

সদ্য পদত্যাগ কারী একজন শিক্ষকের মনে আকুতি। 

কী দেখার কথা, কী দেখছি?

সদ্য পদত্যাগ করা একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের লেখনিঃ

আমি যেহেতু প্রায় ২২ বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে ছিলাম তাই ব্যর্থতা আমারই। 

প্রিয় এলাকাবাসী ক্ষমা করবেন চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। আমাদের যেমন সীমাবদ্ধতার অভাব নেই, তেমন চেষ্টারও ত্রুটি ছিল না। কিন্তু পারিনি।

আসলে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় ছাত্রদের জন্যে, ভাটি এলাকার এই কলেজটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দরিদ্র এলাকা ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্য।

সুতরাং তাদের চাহিদা মোতাবেক সাজাতে হয়।

আমি আমার ছাত্রদেরকে নিজের সন্তানের মত ভালোবেসেছি।

তাদের উত্তম ভবিষ্যৎ এর জন্য চেষ্টা করেছি, আদর দিয়েছি, সোহাগ করেছি, ধমক দিয়েছি, বুকে টেনে নিয়েছি, কিন্তু চাহিদা পুরন করতে পারিনি।

ইদানিং এ আমার কিছু কথার দ্বারা আমি আমার সন্তানসম ছাত্রদেরকে বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

তাই তারা আমাকে আর চায়না। ক্ষমার কোনো সুযোগও নেই, বিচার ছাড়াই ফাঁসির ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

আমি মেনে নিয়েছি।

সারা পৃথিবীতেই তো সন্তানের জীবন সাজাতে গিয়ে অনেক বাবা—মা রাই নিঃস্ব হচ্ছে, পথে বসছে। আমি ব্যতিক্রম হব কেন?

তারাতো কোমলমতি বুঝতে পারেনি এক বাবাকে শাস্তি দিতে গিয়ে তারা তার আরেক ভাই /বোনের রিজিক বন্ধের হাতিয়ার হয়েছে।

আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আর কি দোষ? সারা বাংলাদেশে এত এত পদত্যাগ, ওরা যদি একটা দু\'টা পদত্যাগ না করাতে পারে।

তাহলে এটা তাদের ব্যর্থতা মনে হবে!

পৃথিবীর সব বাবার মত আমিও সব সময় আমার সন্তানের বিজয় দেখতে চাই।

আমি একজন ব্যর্থ মানুষ, তবুও স্বপ্ন দেখতাম এই ক্যাম্পাস থেকে সাদা কাফনে বা লাল গালিচায়, ফুলেল শুভেচ্ছায় বিদায় হবো, আমার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। এক নিমিষেই সব শেষ।

এই শেষ বয়স এসে পৃথিবীর কারোর প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, কষ্ট পেয়েছি, প্রাণ খুলে কেঁদেছি, হালকা হয়েছি, মেনে নিতে চেষ্টা করছি।

সবকিছুর ফয়সালাতো উপর থেকেই হয়।

আল্লাহর কাছে বলেছি \"হে আল্লাহ তোমার দুনিয়া তো অনেক বড়, তুমি নিশ্চয়ই কোন না কোন জায়গায় আমার জন্য, আমার সন্তানের জন্য উত্তম রিজিক এবং সম্মানের ব্যবস্থা করে রেখেছো।

“আমি আশা করতে চাই বা বলতে চাই.. বাংলাদেশের তথা পৃথিবীর কোন ছাত্র যেন তার নিকৃষ্ট শিক্ষকটিরও রিজিক বন্ধের হাতিয়ার না হয়।

কারণ, এই পদ্ধতি যে কত বেদনার, কত কষ্টের তা আমি ভুক্তভুগি ভালোভাবে টের পেয়েছি।

আমি যেন এই পদ্ধতিতে বিদায় হওয়ার পৃথিবীর শেষ শিক্ষকটি হতে পারি।

শিক্ষক বিদায় করার অনেক পদ্ধতি আছে। সেগুলো প্রয়োগ করা হোক, ছাত্র দিয়ে কেন?

ভালো থেকো ‘চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ’ খুব ভালো থেকো”। আমীন।

চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের সদ্য পদত্যাগ কারী একজন শিক্ষকের মনের আকুতি এই লেখা পড়ে খুউব লজ্জা হচ্ছিলো, এ কি হচ্ছে, এটা কোন ধরনের অমানুষিক ও অমানবিক কার্যক্রম। 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুর বলেছিলেন মানুষ তো সবার ঘরে জন্মায়, কিন্তু মানুষ্যত্ব সবার ঘরে জন্মায় না।”

স্যার এ পি যে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, মেধাবী হয়ে গর্ব করার কিছু নেই, শয়তান ও কিন্তু মেধাবী হয়। মনুষ্যত্ব ও সততা না থাকলে সে মেধা ঘৃণিত, কোনো সুস্থ মানুষ এইসব অপকর্ম সাপোর্ট করতে পারেনা। এসব বন্ধ করানো হচ্ছে না কেনো, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা কি চোখ থাকিতে অন্ধ হয়ে আছেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব  ও একজন শিক্ষক ছিলেন। প্লিজ একটু চোখ খুলুন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, সম্মানিত শিক্ষকদের এই অপমান কেনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না, এটা খুবই দুঃখজনক।

আগে শিক্ষক দেখে শিক্ষার্থীরা ভয় পেতো, এখন শিক্ষার্থীদের দেখে শিক্ষককেরা ভয় পাচ্ছে । জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে; আমাদের প্রাণের বাংলাদেশে শিক্ষকদের প্রতি কতিপয় নামধারী মেধাবীদের সন্ত্রাসী আচরনে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মানুষের মধ্যে মানুষ্যত্ব এবং পশুত্ব দুটোই থাকে। কিন্তু অমানুষের মধ্যে আদৌ মানুষ্যত্ব থাকেনা, যা থাকে তার পশুত্ব।

প্রকৃত শিক্ষা যে অর্জন করেছে সে কখনও শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করতে পারে না, এসব ঘটনার জন্য আমি বা আমরা সব ছাত্রদের দায়ি করতে চাই না।

যে  সব নামধারী ছাত্র আজ তার শিক্ষকের গায়ে হাত তুলছে আগামীতে সে তার বাবার গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা বোধ করবে না।

এসব বন্ধ না করা হলে শিক্ষকের অভিশাপ নিয়ে এই প্রজন্ম কোনোদিন কিছু করতে পারবে না।

শিক্ষক এর বিচার করার দায়িত্ব কোনো শিক্ষার্থীর হতে পারে না। যিনি একটি অক্ষর শিখিয়েছেন তিনিও শিক্ষক সম্মানের পাত্র।

দোষী হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অব্যাহতি/চাকুরিচ্যুতি বা যেকোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিবে; কিন্তু অভদ্র বেয়াদবেরা হেনস্থা করে জোরপুর্বক পদত্যাগ করাবে? তা নিতান্ত অমানবিক, সন্ত্রাসতুল্য অপরাধ। 

শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে না—পারলে, নীতি নৈতিকতা ও জাতির বিপর্যয় অনিবার্য।

সকল বিবেকবান মানুষের মতো  আজকের এই লিখনীর মাধ্যমে আমি ও এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি, এবং আশাকরছি এই সব অমানুষিক, অমানবিক কাজ যাতে বন্ধ হয় এর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহ দোষীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। আসুন, “শিক্ষক হচ্ছেন পিতার সমান, সারাজীবন জানাবো সম্মান” এই হোক আমাদের সবার অঙ্গীকার। 

জয় হোক মানবতার, মানুষ্যত্ব জাগ্রত হোক, প্রানের বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখকঃ মোহাম্মদ মকিস মনসুর, চেয়ারম্যান, ইউকে বিডি টিভি; প্রধান সমন্নয়ক; প্রতিভা মেধা প্রকল্প; সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি, ডেইলি সিলেট এন্ড দৈনিক মৌলভীবাজার মৌমাছি কন্ঠঃ সম্পাদক, ওয়েলস বাংলা নিউজ


img

যৌনতা এবং শারীরিক চাহিদা থেকে জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় – এ আর রহমানের আত্মোপলব্ধি

প্রকাশিত :  ০৭:৩২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

অস্কারজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এ আর রহমান, যিনি পৃথিবীকে সুরের মাধ্যমে নতুনভাবে চিনিয়েছেন, সম্প্রতি নিজের জীবনের এক অদেখা অধ্যায় প্রকাশ্যে এনেছেন। সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর, এক দীর্ঘ নীরবতার শেষে রহমান তাঁর ব্যক্তিগত যাত্রা সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে জীবনের উদ্দেশ্য এবং মানবিক সম্পর্কের মধ্যে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার সীমা থাকে না; জীবনের পরিধি আরও অনেক বড় এবং গভীর।

তিনি তাঁর একটি বক্তব্যে বলেন, ‘‘যৌনতার মতো শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়, কখনও…’’ তাঁর এই উক্তি শুধু একটি সঙ্গীতশিল্পীর দৃষ্টিকোণ নয়, বরং একটি জীবনদৃষ্টি, যেখানে আত্মিক পরিপূর্ণতা এবং মানসিক শান্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। রহমানের মতে, আমাদের জীবনে একটি গভীর শূন্যতা রয়েছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক সুখ দ্বারা পূর্ণ হতে পারে না। আমাদের আধ্যাত্মিক বা মানসিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যা জীবনকে অর্থবহ এবং পূর্ণতা দেয়।

প্রায়ই সমাজে যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ককে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু রহমানের অভ্যন্তরীণ জগতের এই খোলামেলা উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের অঙ্গনের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে আনন্দ, শান্তি এবং পূর্ণতা আসতে পারে। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা মেটানোই জীবনের সব নয়’’—এই কথায় তিনি একদিকে যেমন জীবনের উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করছেন, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বও তুলে ধরছেন।

এ আর রহমানের মতে, একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য তখনই ভালো থাকতে পারে, যখন সে জীবনের গভীরে প্রবাহিত হতে পারে। তিনি বলছেন, ‘‘অবসাদ ঘিরে ধরে, কারণ আমার মনে হয়, আমাদের সবার মধ্যেই একটা শূন্যতা রয়েছে।’’ এরই মধ্যে গল্পকাররা, দর্শন, বিনোদন, এমনকি কখনও কখনও ওষুধের মাধ্যমে এই শূন্যতা পূর্ণ করা যায়। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য সেই সব জিনিসে সীমাবদ্ধ নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য হলো, রহমানের ব্যক্তিগত জীবনের অধ্যায়গুলো। তাঁর স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলীর প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়, যে যেখানে তিনি তাঁর শূন্যতা, দুঃখ এবং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও জীবনের একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ খুঁজে পেয়েছেন। ‘‘এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে’’—রহমান তাঁর নিজের দুঃখ এবং সংগ্রামকে পৃথিবীর বৃহত্তর দুঃখের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ক্ষতি এবং হতাশা একে অপরকে অনুসরণ করে। তবুও, তিনি এই ভঙ্গুরতার মধ্যে জীবনের অন্য অংশগুলির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ আর রহমানের এই বক্তব্যে প্রতিটি মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রশংসা করা হয়েছে—মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং অন্যের জন্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। তিনি বলেছেন, ‘‘যখন তুমি অন্যের জন্য বাঁচবে, তখন তোমার মধ্যে এই চিন্তাগুলি আসবে না।’’ এর মাধ্যমে তিনি আমাদেরকে জীবনকে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য না, বরং একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাঁচার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এমন একটি নৈতিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া উচিত, যা শুধুমাত্র আমাদের শারীরিক চাহিদা পূরণে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং মানসিক উন্নতি, আমাদের জীবনের বাস্তব মূল্যমানের পরিচয় দেয়।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম

মতামত এর আরও খবর