img

হাসিনার পতনের পর ৬০ শতাংশ বাজার হারিয়েছে কলকাতা

প্রকাশিত :  ০৬:২৬, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হাসিনার পতনের পর ৬০ শতাংশ বাজার হারিয়েছে কলকাতা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন । গত ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচার সরকারের পতন পর থেকে ভারতে কমে গেছে বাংলাদেশি পর্যটক। গত একমাসে যারা কলকাতায় গেছেন তার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। শেখ হাসিনার মতো তারাও নিজেদের রক্ষা করতে দেশটিতে অবস্থান করছেন। সাধারণ পর্যটকরা না যাওয়ার কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে পোশাকের বাজারের বেঁচাকেনা। ৭০ শতাংশ কমেছ হোটেল বুকিং। এক তৃতীয়াংশে নেমেছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর সংখ্যা। সব মিলিয়ে বড় ধরনের আর্থিক সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে দেশটি। 

শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়াতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অভিজ্ঞতাও ভালো না হওয়াতে ধারণা করা যাচ্ছে খুব সহজেই কাটবে না এ সংকট। 

বাংলাদেশের জনগণ মনে করেন বাংলাদেশে ভারতের অতিরিক্ত প্রভাব, পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হলে দীর্ঘ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে কলকাতা। 

এসএস হগ মার্কেট, যা নিউ মার্কেট বলে পরিচিত, অথবা তার আশপাশের বিপণী বিতানগুলিতে সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বেড়াতে এসে হোক অথবা চিকিৎসা করানো জন্য, বেশিরভাগ বাংলাদেশি পর্যটকই কলকাতায় এলে নিউ মার্কেটে কেনা কাটা করতে গিয়ে থাকেন। খবর বিবিসি বাংলার। 

নিউ মার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা বলেন, পোশাকের দোকানগুলিতে বাংলাদেশি ক্রেতাদেরই ভিড় দেখা যেত। এক মাস হয়ে গেল, তারা এখন আর ভারতে আসছেন না প্রায় কেউই। আমাদের দোকানগুলোর ৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে এই এক মাসে। 

পোষাক, সাজগোজের জিনিস অথবা জুতো সহ সব ব্যবসায়ীই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিউ মার্কেটের কাছাকাছি আরও যে কয়টি বড় শপিং মল বা বড় বড় দোকান আছে, সেখানেও একই পরিস্থিতি বলে জানা যাচ্ছে। 

হোটেলের ঘর প্রায় ফাঁকা

মার্কুইস স্ট্রিট এলাকাটি বহু বাংলাদেশি মানুষের কাছে অতি পরিচিত এলাকা। কলকাতার কেন্দ্রস্থলের এই এলাকায় বহু হোটেল রেস্তোরাঁ আছে, যারা মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপরে নির্ভর করেই ব্যবসা করে থাকে।

এছাড়াও ওই অঞ্চলে মানিএক্সচেঞ্জ, বাসের কাউন্টারসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রায় সব ধরনের পরিসেবাই পাওয়া যায়।

ওই এলাকায় গেলে মনেই হবে না যে এটা ঢাকার বাইরে অন্য কোনও শহরের রাস্তা।

তবে জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের আসা কমে গিয়েছিল। আর আগস্ট থেকে তা একরকম বন্ধই হয়ে গেছে।

মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল মালিকদের সংগঠনের নেতা মনোতোষ সরকার বলেন, এখন শুধু মাত্র মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে মানুষ আসতে পারছেন, অথবা আগে থেকে যাদের ভিসা নেওয়া ছিল, তারা আসছেন। 

তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেও আমাদের হোটেলগুলোর ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ অকুপেন্সি রেট ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে। 

রুম অকুপেন্সি রেট হল হোটেল ব্যবসার একটি শব্দ, যা হোটেলের মোট ঘরের সংখ্যার কত শতাংশে মানুষ থাকছেন, তার হিসাব।

অর্থাৎ হোটেলগুলিতে ১০০টি ঘর থাকলে এখন মাত্র ৩০টি ঘরে পর্যটক থাকছেন।

সরকার আরও বলেন, মার্কুইস স্ট্রিটে তো শুধু হোটেল নয়, বাংলাদেশি পর্যটকদের আরও বহু পরিসেবা প্রদানকারী সংস্থা আছে। তাদেরও মূল ক্রেতা ওদেশের পর্যটকরাই। তারা এখন এতটাই কম সংখ্যায় আসছেন, যে সব ব্যবসায়ীরাই মার খাচ্ছে। বাস আসছে বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে, কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে ওই ৩০ শতাংশ মতোই আসন ভর্তি হচ্ছে, বাকিটা ফাঁকা থাকছে।

কতদিন এই অবস্থা চলবে, তা অনিশ্চিত। তাই অন্য কোনও অঞ্চলের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায় কী না, সে ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু করছেন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল ব্যবসায়ীরা।

হাসপাতালেও রোগী কমেছে

বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে আসেন, তাদের একটা বড় অংশ স্বাস্থ্য পরিসেবার জন্য আসেন। কলকাতা হোক বা ভেলোর, চেন্নাই,বেঙ্গালুরু অথবা দিল্লি-মুম্বাই – বহু বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশের মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

এই সব হাসপাতালগুলিতে বাংলা কথা বলা কর্মকর্তারা যেমন থাকেন, তেমনই বাংলাদেশিদের জন্য থাকে পৃথক পরিসেবা-ডেস্কও।

কলকাতার যেসব বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীরা বেশী সংখ্যায় আসেন, ওই হাসপাতালগুলি বলছে গত একমাসে খুব কম রোগী সেদেশ থেকে এসেছেন।

যদিও ভারতের হাইকমিশনগুলি মেডিক্যাল ভিসা দিচ্ছে, তা সত্ত্বেও আগের তুলনায় কম সংখ্যক রোগীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে কলকাতার হাসপাতালগুলিতে।

মনিপাল হসপিটালস্ গোষ্ঠী কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করেছে কয়েক মাস আগে। তাদের অধীন হাসপাতালগুলিতে গড়ে ২১০০ জন বাংলাদেশি রোগী আসেন প্রতি মাসে। সেই সংখ্যাটা প্রায় এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত :  ১৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১১ হাজার ৮৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি মাস অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ২২ লাখ ডলার বা ৯৮৬ কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসছে। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে প্রবাসী আয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, এই সময়ে রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

এই সময়ে ১১ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাবাক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসার পর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর গত সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।


অর্থনীতি এর আরও খবর