সিরাজগঞ্জে মাইক্রোবাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে দুই ভাইসহ নিহত ৫
প্রকাশিত :
০৯:২৭, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে দুই ভাইসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন।
আজ রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক মহাসড়কের কুটিরচর এসিআই ফুড কারখানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কামারখন্দ ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর অপু কুমার মণ্ডল ও শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
নিহতরা হলেন- সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ভাটরা গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে নুরুজ্জামান (৫২), তার ছোটভাই তারেক রহমান (৫২), রায়গঞ্জের হাট পাংগাসি গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম, রেজাউল করিম এবং আব্দুল মজিদ নামে আরও দুই ব্যক্তি। নিহত রেজাউল করিম ও আব্দুল মজিদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
অর্থনীতির অন্ধকারে বাংলাদেশ: নির্বাচনের আলো কি শেষ আশার প্রদীপ?
প্রকাশিত :
০৬:০১, ১৬ মার্চ ২০২৫ সর্বশেষ আপডেট: ০৬:০৬, ১৬ মার্চ ২০২৫
রেজুয়ান আহম্মেদ
বাংলাদেশ এক কঠিন সময় পার করছে। দেশের প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোতে তালা ঝুলছে, হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়ে দিশেহারা, বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অথচ রাজনৈতিক অস্থিরতার সুর ক্রমশ চড়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হতে পারে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু সেই সুযোগ কি আদৌ আসবে?
গাজীপুরের টঙ্গী, কালিয়াকৈর কিংবা নারায়ণগঞ্জ—কয়েক বছর আগেও যেখানে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় মুখর ছিল, সেখানে আজ নীরবতা। গত এক বছরে শুধু গাজীপুরেই প্রায় ৩০০টি গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অন্তত ৫০,০০০ শ্রমিক।
অমিত (৩২), একজন সেলাই অপারেটর, কণ্ঠ ভারী করে বললেন, "কারখানা বন্ধ হওয়ার পর তিন বেলা খেতেও পারছি না। বাড়িঘর বিক্রি করেও ঋণ শোধ করতে পারিনি।"
শিল্প মালিকদের সংগঠন BGMEA জানিয়েছে, ক্রমাগত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানি জটিলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গার্মেন্টস মালিক বললেন, "ব্যাংকের ঋণের বোঝা বইতে পারছিলাম না, শেষমেশ কারখানা বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।"
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ২০২২ সালে ছিল ৩.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.২ বিলিয়নে। জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো তাদের প্রকল্প স্থগিত করেছে।
একজন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি বললেন, "বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অবকাঠামো সংকট বিনিয়োগের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এই পরিস্থিতিকে "অর্থনৈতিক হার্ট অ্যাটাক" বলে বর্ণনা করে বলেন, "বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া শুধু রেমিট্যান্স ও গার্মেন্টস খাতের ওপর ভরসা রেখে অর্থনীতিকে সচল রাখা সম্ভব নয়।"
অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ও বাড়ছে। গাজীপুরের বাসিন্দা রিনা আক্তার (৪০) বললেন, "আমার ছেলে স্কুলে যেতে ভয় পায়। মাসখানেক আগে ছিনতাইকারীরা ওর জুতো পর্যন্ত নিয়ে গেছে!"
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির হার বেড়েছে ৬৫%।
মনোবিজ্ঞানী ড. ফারহানা মোবিন বলেন, "যখন মানুষের সামনে বেঁচে থাকার উপায় কমে আসে, তখন তারা সহজ পথ খোঁজে। অনেকেই বাধ্য হয় অপরাধে জড়াতে।"
বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপ নেই, রাজনৈতিক মেরুকরণ চরমে পৌঁছেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. তাসনিম সিদ্দিকী সতর্ক করে বলেছেন, "যদি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, তাহলে সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর অর্থনীতি আরও গভীর সংকটে পড়বে।"
আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ওয়াচ এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন।
সম্ভাব্য সমাধান কী?
অর্থনীতিবিদদের মতে, সংকট কাটাতে এখনই তিনটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
১. নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা: সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন।
৩. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ: বেকারদের জন্য আর্থিক সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গাজীপুরের বস্তিবাসী করিম মিয়া আক্ষেপ করে বললেন, "নেতারা যদি একদিন আমাদের মতো না খেয়ে থাকতেন, তাহলে বুঝতেন এই দুর্দশার অর্থ কী!"
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ গভীর সংকটে। রাজনৈতিক ঐক্য ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা ক্ষমার অযোগ্য হয়ে থাকব।
কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, "অন্ধকারে আলো জ্বালো, যাত্রা শুরু করো আগামীর পথে।" এখন সেই আলো জ্বালানোর সময় এসেছে।
রেজুয়ান আহম্মেদ: লেখক, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম