সম্প্রতি হাবল টেলিস্কোপে ধরা ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সির নতুন ছবি তুলে। গ্যালাক্সির পোশাকি নাম মেসিয়ার ৩৩। এই গ্যালাক্সিটা হলো আমাদের স্থানীয় গ্যালাক্সি গ্রুপের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যালাক্সি। এই গ্যালাক্সি দেখতে সুন্দর এবং রহস্যময়, কারণ এখানে নতুন তারার জন্ম খুব দ্রুত হয়।
ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সি আমাদের গ্যালাক্সির (মিল্কিওয়ে) থেকে ছোট, মাত্র ৬০,০০০ আলোকবর্ষ বিস্তৃত। এটি অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি এবং মিল্কিওয়ের পর সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি। প্রায় ৩০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই গ্যালাক্সিকে বলা হয় তারার ‘কারখানা’, কারণ এখানে প্রচুর নতুন তারা তৈরি হয়।
এই গ্যালাক্সিতে নতুন তারার জন্ম হয় প্রচুর গ্যাস ও ধূলার সংঘর্ষ থেকে।
হাবল টেলিস্কোপের ছবিতে দেখা যায় বড় বড় লাল মেঘ, যা H-II অঞ্চল নামে পরিচিত। এই অঞ্চলগুলোতে গ্যাসের মেঘের সংঘর্ষ থেকে বিশাল বড় বড় তারার সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়া এত দ্রুত হয় যে এই গ্যালাক্সি প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির তুলনায় ১০ গুণ বেশি তারা তৈরি করে।
হাবল টেলিস্কোপের এই নতুন ছবি বিজ্ঞানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে নতুন তারার সৃষ্টি সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাচ্ছে।
এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের বড় বড় গ্যালাক্সির ভবিষ্যৎ সংঘর্ষ এবং তাদের পরিবর্তন সম্পর্কেও বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সির এই নতুন ছবি মহাবিশ্বের বিস্ময়কর তারার জন্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য জানাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এই গ্যালাক্সিতে তারার দ্রুত সৃষ্টি বিজ্ঞানীদের মহাজাগতিক গবেষণায় আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রকাশিত :
০৮:৪১, ০৩ অক্টোবর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ০৯:০২, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
দিনে দিনে সবুজের ছোঁয়া বাড়ছে ঊষর সাহারা মরুভূমির বুকে ! আফ্রিকার বিশাল মরুভূমির উষ্ণ বাদামি শরীরে পড়ছে সবুজের ছোপ। বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলে বাড়ছে গাছপালার পরিমাণ।
সম্প্রতি নাসার উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে এমন কিছু দৃশ্য; যা দেখে অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম উপগ্রহটি সাহারা মরুভূমির সবুজ শ্যামল রূপ তুলে ধরেছে সকলের সামনে। পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক এবং রুক্ষ স্থানে এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।
চারিদিকে শুধু ধূ-ধূ প্রান্তর। যে দিকে দু’চোখ যায় শুধু বালি আর বালি। দূর-দূরান্তে তাকালেও মরুভূমির বুকে পানির হদিস পাওয়া দুষ্কর। নাসার উপগ্রহের ক্যামেরায় যে ছবি সেপ্টেম্বর মাসে ধরা পড়েছে তাতে দেখা গেছে মাত্র এক মাসের মধ্যেই টলটলে পানি ভরে উঠেছে প্রায় শুকনো হ্রদগুলো। সাধারণত সাহারার হ্রদগুলো শুষ্ক থাকে। বেশির ভাগ হ্রদে পানির লেশমাত্রও থাকে না।
এই ঊষর, প্রাণহীন বালির প্রান্তরে এত সবুজের অস্তিত্বের কারণ কী? প্রকৃতির এই বিপরীতধর্মী আচরণের নেপথ্যে কী লুকিয়ে রয়েছে? প্রকৃতির কোনো খামখেয়ালি আচরণে ভোল বদলে গেল মরু সাহারার?
সাহারার এই পরিবর্তিত রূপের নেপথ্যে রয়েছে এক ঘূর্ণিঝড়। যার জেরে পাল্টে গেছে সাহারার একাংশের ছবি। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তরফে জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত ৭ এবং ৮ সেপ্টেম্বর সাহারা মরুভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে বৃষ্টি হয়েছে।
অতিক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারি বৃষ্টি হয়েছে সাহারা মরুভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। আর তাতেই কার্যত সবুজের বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফ্রিকার বিষুবরেখার উত্তরে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হচ্ছে ততই উত্তরে সরে যাচ্ছে ইন্টারট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জ়োন বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চলের সীমানা।
জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষক কার্স্টেন হাউস্টেইন জানিয়েছেন, সীমানাটি এই বছর সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি উত্তরে সরে গেছে। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে দুগুণ থেকে ছয় গুণ বেশি আর্দ্র হয়ে উঠছে সাহারা। এছাড়া গোটা পৃথিবীতে এল নিনো (উষ্ণ সামুদ্রিক জলস্রোতের পরিবর্তন) থেকে লা নিনোর (বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ) রূপান্তরের প্রভাব তো রয়েছেই।
মৌসুমি ঝড়ের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সাহারায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে। এমনকি মাঝেমধ্যে বন্যাও দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া গবেষকেরা।
মরক্কো, আলজিরিয়া, তিউনিসিয়া ও লিবিয়ার মতো যে সব অঞ্চলে বৃষ্টি প্রায় হয়ই না, সে সব অঞ্চলগুলো কার্যত ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বিশেষত মরক্কো এবং আলজেরিয়ার ওই শুষ্ক জায়গাগুলোতে এক বছরে যতটা বৃষ্টি হয়, তা দু’দিনেই হয়ে গেছে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর। চাঁদ, সুদান এবং এরিট্রিয়ার কিছু অংশে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেড়েছে।
পৃথিবীর বুকে আফ্রিকার উত্তর অংশই রুক্ষতম। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বর মাসে অন্য বছরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় বন্যাও হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে পরিবেশগত পরিবর্তন আসছে। তার ফল ভোগ করছে সাহারাও। অবশ্য এতে শাপে বর হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ মরুভূমিটির।
পৃথিবী যত বেশি উষ্ণ হবে, দিনের পর দিন সাহারায় তত সবুজায়ন হবে। চলতি বছরের জুনে নেচারে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দশকে সাহারার জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকবে। সাহারায় সবুজের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু গবেষকেরা।
উডল হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট পিটার ডি মেনোকাল জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টি হলে বালির আস্তরণ সরে গিয়ে মাটি বেরিয়ে যায়। সেই সুযোগেই অনুকূল পরিবেশ পেয়ে সবুজ গাছপালা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সাল থেকে বর্ষা ক্রমশ দক্ষিণে সরে যেতে শুরু করে, বৃষ্টির অভাবে ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয় সাহারা।
তবে মালি, নাইজেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, এমনকি পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের কৃষকেরা গত তিন দশকে নিজেদের চেষ্টায় কয়েক কোটি গাছ লাগিয়েছেন। সাহারা মরুভূমির অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছেন।