img

দিল্লির সমান ভূমি দখলে নিয়েছে চীন : রাহুল গান্ধী

প্রকাশিত :  ১৩:০৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দিল্লির সমান ভূমি দখলে নিয়েছে চীন : রাহুল গান্ধী

ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী চীনের সঙ্গে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনকে ভালোভাবে সামলাতে পারছেন না। এ সুযোগে লাদাখে দিল্লির সমপরিমাণ ভূমি দখলে নিয়েছে চীন।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে দেওয়া ব্ক্তব্যে রাহুল গান্ধী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনি যদি চীনকে ভালোভাবে মোকাবিলা করার কথা বলেন এবং সে সঙ্গে আমাদের ভূখণ্ডের চার হাজার বর্গকিলোমিটারে চীনা সেনা থাকে; তাহলে হয়তো আমরা চীনা সেনাদের দখলে নিয়েছি। তারা লাদাখে দিল্লির আয়তনের সমপরিমাণ ভূমিতে অবস্থান করছে। আমি মনে করি, এটি একটি বিপর্যয়।

রাহুল গান্ধী আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের সেনা যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের চার হাজার বর্গকিলোমিটার দখল করলে আমেরিকা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? কোনো প্রেসিডেন্ট কী এই বলে পার পেয়ে যাবেন, তিনি ভালোভাবে পরিচালনা করেছেন? তাই আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী মোদি চীন পরিস্থিতি মোটেও ভালোভাবে সামাল দিতে পারছেন না। কারণ, চীনা সেনাদের আমাদের ভূখণ্ডে বসে থাকার কোনো কারণ নেই।

গত বছর একই রকম অভিযোগ করেছিলেন রাহুল। তখন কংগ্রেস নেতা অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লাদাখে ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের কাছে মিথ্যা বলছেন। কারণ, প্রকৃত সত্য হচ্ছে- চীন ভারতের ভূখণ্ড কেড়ে নিয়েছে।

ভারতের সঙ্গে উত্তপ্ত হয়ে আছে চীনের সীমান্ত রাজনীতি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

লাদাখ ভারতের একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। এই অঞ্চলের উত্তরে কুনলুন পর্বতশ্রেণি এবং দক্ষিণে হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত। ১৯৪৭ সাল থেকে এই অঞ্চলটি ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে রাহুলের এই অভিযোগের আগেই চলতি সপ্তাহে ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত অঞ্চলে চাঞ্চল্যকর চীনা সেনা প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে।

বলা হচ্ছে, ভারতের অরুণাচল প্রদেশের অন্তত ৬০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে চীনের সেনারা। শুধু তাই নয় অঞ্চলটিতে নিজেদের ঘাঁটিও গেড়েছে জিনিপিং বাহিনী।

অরুণাচলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম অরুণাচল-২৪ ও নিউজিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তথা পিএলএ সেনারা অরুণাচলের অন্তত ৬০ কিলোমিটার ভিতরে অনুপ্রবেশ করেছে। এ সময় তারা আনজাও জেলার কাপাপুতে একটি ক্যাম্পও স্থাপন করে। সেখানে কাঠে আগুন ধরানো, পাথরের গায়ে রঙ ব্যবহার করে লেখা চীনের নাম এবং চীনা খাদ্যসামগ্রীর ছবি দেখে বোঝা যায় আনুমানিক এক সপ্তাহ আগে চীনা সেনারা সেখানে ঘাট স্থাপন করেছিল।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চীনা সেনারা প্রবেশের পর পাথরের গায়ে চলতি বছরের চিহ্ন এঁকে দেয়। যা সাধারণত ভারতের কোনো অঞ্চল দখলের পর তা নিজেদের দাবি করার কৌশল হিসেবে করা হয়ে থাকে। খবরে বলা হয়, দুই দেশকে বিভক্তকারী ম্যাকমোহন লাইনের হাদিগ্রা পাসের কাছে কাপাপুতে ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশের একটি ক্যাম্প রয়েছে। আর আনজাও জেলার নিকটতম প্রশাসনিক এলাকা চাগলাগাম ম্যাকমোহন লাইন থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ ছাড়া চাগলাগাম থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পার্বত্য এলাকায় গ্লাইতাকরু পাসের অবস্থান।

এর আগে, ২০২২ সালের আগস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, পিএলএ সেনারা হাদিগ্রা হ্রদের কাছে নিজস্ব অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম দেখাশোনা করছে। সেখানে তিনটি খননকারী মেশিন দিয়ে খনন কাজ পরিচালনা করতে দেখা যায় চীনা সামরিক বাহিনীকে। একই বছরের ১১ আগস্ট চাগলাগাম থেকে ৩০ কিলোমিটারেরও কম দূরের ওই এলাকার নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ করে চীনের সামরিক বাহিনীর এলআরপি টহল দল।

২০২১ সালে ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে কমপক্ষে ৬০টি ভবনের দ্বিতীয় ক্লাস্টারের নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে চীনা বাহিনী। ২০২০ সালে চীনা সেনারা অরুণাচলের দিবাং উপত্যকা জেলায় ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। ২০১৯ সালে অরুণাচলের ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভেতরে ডোইমরু নালার ওপর একটি কাঠের সেতু তৈরি করে পিএলএ সেনারা। 

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

img

হিজবুল্লাহর ড্রোন কীভাবে ইসরায়েলের এতটা ভেতরে ঢুকে হামলা চালাল

প্রকাশিত :  ০৮:০৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

দখলদার ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা খুবই ‘নির্ভরযোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে গতকাল রোববার ইসরায়েলের অনেকটা ভেতরে ঢুকে প্রাণঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম হয় হিজবুল্লাহর ড্রোন।

লেবাননের ইরান-সমর্থিত রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলাটি হয়েছে মধ্য-উত্তর ইসরায়েলের একটি সেনাঘাঁটিতে।

হামলায় চার ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। আহত ৬০ জনের বেশি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে হতাহত হওয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, হামলায় আহত সাত সেনার অবস্থা গুরুতর।

স্থানীয় সময় গতকাল দিনের শেষ ভাগে এই ড্রোন হামলা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর গতকাল অন্যতম সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হলো ইসরায়েল।

আইডিএফ বলেছে, হিজবুল্লাহর পাঠানো একটি ড্রোন বিন্যামিনা শহর-সংলগ্ন একটি ইসরায়েলি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায়। শহরটির অবস্থান তেল আবিবের উত্তরে। লেবানন সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে।

গতকাল হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বিন্যামিনায় ইসরায়েলি বাহিনীর একটি পদাতিক প্রশিক্ষণ শিবির নিশানা করে হামলা চালাতে একঝাঁক ড্রোন পাঠিয়েছে।

হিজবুল্লাহর এমন কথার পর ইসরায়েলে ড্রোন হামলার খবর এল।

হিজবুল্লাহ বলে, গত বৃহস্পতিবার লেবাননে হামলা চালায় ইসরায়েল। বদলা হিসেবে তারা গতকাল ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত বৃহস্পতিবার লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ২২ জন নিহত হন। আহত ১১৭ জন।

হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলের গোলানি ব্রিগেডকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে।

গোলানি ব্রিগেড আইডিএফের একটি পদাতিক ইউনিট। এই ইউনিটের সদস্যদের দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করেছে ইসরায়েল।

হামলার দায় স্বীকার করার কিছু আগে হিজবুল্লাহ তাদের সদ্য প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে। এ বার্তায় তিনি হিজবুল্লাহর সদস্যদের নিজেদের লোকজন, পরিবার, জাতি, মূল্যবোধ ও মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানান। গত মাসের শেষ দিকে ইসরায়েলি হামলায় নাসরুল্লাহর নিহত হন।

গতকাল দিনের শুরুর দিকে আইডিএফ বলেছিল, লেবানন থেকে পাঠানো একটি ড্রোন তারা রুখে দিয়েছে। তবে এ ঘটনা কোথায় ঘটেছে, তা তারা নির্দিষ্ট করে বলেনি।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা খুবই নির্ভরযোগ্য। কিন্তু গতকাল এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পেরেছে হিজবুল্লাহর ড্রোন। গতকাল হিজবুল্লাহর ড্রোন ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে প্রাণঘাতী হামলা চালায়।

সিএনএন আরও বলেছে, গতকাল হামলার সময় বিন্যামিনা এলাকায় কোনো সতর্কবার্তার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ড্রোন কীভাবে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের এতটা গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যতিব্যস্ত রাখার জন্য উত্তর ইসরায়েলি শহর নাহরিয়া ও একর নিশানা করে বেশ কয়েক ডজন রকেট ছোড়ে। একই সঙ্গে তারা একঝাঁক ড্রোন পাঠায়।

হিজবুল্লাহ বলেছে, এই ড্রোনগুলো শনাক্ত হওয়া এড়াতে পেরেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা রাডারগুলোকে ফাঁকি দিতে পেরেছে। ড্রোনগুলো বিন্যামিনার অভিজাত গোলানি ব্রিগেডের প্রশিক্ষণ শিবিরের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায়।

আইডিএফের শীর্ষ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ ঘটনা তদন্ত করবে। কীভাবে ঘাঁটিতে ড্রোন প্রবেশ করল, কিন্তু সতর্কসংকেত বাজল না, তা খতিয়ে দেখা হবে।

ঘাঁটিটি থেকে দেওয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে হাগারি বলেন, তাঁরা এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবেন। তাঁরা ঘটনাটি তদন্ত করবেন।

আইডিএফের এই মুখপাত্র বলেন, তাঁরা যুদ্ধের শুরু থেকেই ড্রোনের হুমকি মোকাবিলা করে আসছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় উন্নতি দরকার।