নোয়াখালীর হাতিয়ায় ৭ ট্রলারডুবি, ৩০ জেলে নিখোঁজ
রেজুয়ান আহম্মেদ: বঙ্গোপসাগরের কূলে, নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে এক অন্ধকার সন্ধ্যা বয়ে আনে বিভীষিকা। অবিশ্বাস্য এক ঝড়ের কবলে পড়ে সাতটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। এর মধ্যে ৩০ জন জেলেকে উদ্ধার করা হলেও, কমপক্ষে ৩০ জন এখনও নিখোঁজ। স্থানীয়দের কাছে, এই ঘটনা এক ভয়াবহ সংকটের সংকেত নিয়ে এসেছে।
দিনটি শুরু হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই, স্থানীয় জেলেরা তাদের ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরার জন্য রওনা দিয়েছিল। গত কয়েক দিনে, হাতিয়ার বিভিন্ন ঘাট থেকে বেশ কিছু ট্রলার সমুদ্রে গিয়ে ছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে। বৈরী আবহাওয়া, ঝোড়ো হাওয়া এবং তীব্র ঢেউয়ের কারণে ট্রলারগুলো ধীরে ধীরে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছিল।
সন্ধ্যায় যখন ট্রলারগুলো ঘাটের দিকে ফিরে আসছিল, তখন হঠাৎ করে প্রকৃতি তার রূপ বদলে ফেলল। অপ্রত্যাশিতভাবে ঝোড়ো হাওয়া ও সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে সাতটি ট্রলার একে একে ডুবে যেতে থাকে। নদী ও সাগরের সঙ্গম স্থল, যেখানে সাধারণত শান্তি বিরাজ করে, সেখানেই আজ এক হইচইয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
ডুবে যাওয়া ট্রলারগুলোর মালিকেরা—বাবর মাঝি, জান মিয়া, দেলোয়ার মাঝি, হেলাল উদ্দিন, শহীদ মাঝি, মেহরাজ মাঝি, এবং ইউনুছ মাঝি—সবাই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। ট্রলারগুলির উদ্ধার কাজ শুরু হলে, পার্শ্ববর্তী ট্রলারগুলোর সহায়তায় প্রায় ৩০ জন জেলেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে, এখনও কমপক্ষে ৩০ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
কোস্টগার্ডের হাতিয়ার স্টেশন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, "সূর্যমুখী এলাকায় একটি ট্রলার ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম, তবে মাঝিরা জানান যে ওই ট্রলার থেকে ১৮ জেলেকে অন্য ট্রলারের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও ট্রলারটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। বাকি ট্রলারগুলোর বিষয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিল্টন চাকমা জানান, "সন্ধ্যার পর সাতটি ট্রলার ডুবে যাওয়ার খবর পেয়েছি। নিখোঁজ জেলেদের সংখ্যা অন্তত ৩০ জন। তাদের বিস্তারিত তথ্য আগামীকাল সকালে জানা যাবে। ইতিমধ্যে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।"
এই দুর্যোগের খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাতিয়া এবং আশেপাশের এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। হাতিয়ার একেকটি ঘর, একেকটি পরিবার আজ মর্মান্তিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। এই ঘটনাটি শুধু সাগরের কঠোর প্রকৃতির পরিচায়ক নয়, বরং মানুষের জীবনের অস্থিরতা ও ঝুঁকিরও এক নিদর্শন।
সাগরের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া জেলেদের জন্য প্রত্যেক পরিবারে অপেক্ষার প্রহর কাটছে। কোথাও কান্নার শব্দ, কোথাও শোকে মুহ্যমান। আগামীকাল সকাল হবে আরেকটি নতুন দিনের সূচনা, যেখানে হয়তো মিলবে কিছু নিখোঁজ জেলের খোঁজ, অথবা আরো বড়ো কিছু শোকের খবর।