জ্বালানি খাতে সহায়তা: বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ইউরো দেবে জার্মানি
প্রকাশিত :
০৯:১৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ০৯:২৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ১০০ কোটি ইউরো (প্রতি ইউরো ১৩৩ টাকা করে হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার ৩০৩ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ৮০০ টাকা) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
রিজওয়ানা হাসান জানান, আগামী ১০ বছরে এই সহায়তা দেবে জার্মানি। এর মধ্যে চলতি বছরই বাংলাদেশ পাবে দেড় কোটি ইউরো। বেসরকারি খাত, গবেষণা ইনস্টিটিউট, একাডেমিয়া ও সুশীল সমাজের মতো সশ্লিষ্টদের সাথে এ নিয়ে আলোচনা ও প্রচারে একমত হয়েছে দুই দেশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান অ্যাম্বাসেডর আচিম ট্রস্টারের সঙ্গে মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করেন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এরপরই তিনি এসব তথ্য জানান। এ সহায়তার জন্য তিনি জার্মানিকে ধন্যবাদ দেন।
তিনি আরও বলেন, এই সহযোগিতায় ক্ষুদ্র জাতিগত সংখ্যালঘু, নারী ও যুবকদেরও সম্পৃক্ত করা হবে। এভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টার বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জার্মানির দক্ষতা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাব দেন।
এছাড়াও বৈঠকে নদী পরিষ্কার, পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ, পরিবেশ ও জলবায়ু-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়েও কথা হয়।
প্রযুক্তি স্থানান্তর ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য আরও উপায় খোঁজার জন্য একটি পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে বৈঠকটি শেষ হয়।
আজকের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন চিত্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি বিভাজিত মনোভাবের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বাজারে ছিল প্রাণবন্ত লেনদেন, উচ্চ ভলিউম এবং কয়েকটি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (DSEX) দিন শেষে ১.৬০ পয়েন্ট বা ০.০৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৫০৬৬.৪৪ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে।
অন্যদিকে, ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস (DSES) সূচকটি ২.১১ পয়েন্ট বেড়ে ১১০৩.০৭ পয়েন্টে উঠেছে, যা শক্ত মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর ইতিবাচক অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। তবে ব্লু-চিপ শেয়ারভিত্তিক সূচক ডিএস৩০ (DS30) সামান্য ০.০৫ পয়েন্ট কমে ১৯০৮.৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
লেনদেনের সারসংক্ষেপ: সংখ্যাগুলো যা বাজারের স্পন্দন জানায়
আজ মোট ২,০৭,২০৬টি ট্রেডে ২৬.৮০ কোটি ইউনিট শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৬৬৬ কোটি টাকা।
এই চিত্রই প্রমাণ করে যে, বাজারে লেনদেন ছিল গত দিনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয়।
দিনভর লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৭৪টি কোম্পানির শেয়ার দরবৃদ্ধি পেয়েছে, ১৬৬টি দর হারিয়েছে, এবং ৫৪টি কোম্পানির শেয়ার অপরিবর্তিত থেকেছে—যা স্পষ্টভাবে বিনিয়োগকারীদের দ্বিধান্বিত মনোভাব ও সেক্টরভিত্তিক নির্বাচনের ইঙ্গিত দেয়।
সূচকের চলাচলের বিশ্লেষণ: দিনের ভেতরে নাটকীয়তা
ডিএসইএক্স (DSEX) সূচকের ঘণ্টাওয়ারি চলাচল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দিনের শুরুতে সূচকে কিছুটা পতন হলেও মধ্য ভাগে উল্লেখযোগ্যভাবে পুনরুদ্ধার ঘটে। তবে শেষ ঘণ্টায় সূচকটি আবারও নিচের দিকে নামতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত ৫০৬৬.৪৪ পয়েন্টে স্থিত হয়।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে যে, বিনিয়োগকারীরা দিনের শুরুতে কিছুটা হতাশ থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে আশাবাদী লেনদেন করেন; তবে শেষ পর্যন্ত মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাজারকে আবার নিচে নামিয়ে আনে।
মার্কেট ম্যাপ: কোন সেক্টরে কেমন চিত্র?
মার্কেট ম্যাপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিচের সেক্টরগুলোতে সর্বাধিক কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে:
ব্যাংক,
ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস,
খাদ্য ও অ্যালাইড,
ইঞ্জিনিয়ারিং,
মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
এই সেক্টরগুলোতে অনেক কোম্পানির শেয়ার সবুজ এবং লাল রঙে চিহ্নিত, যা ইঙ্গিত দেয় কিছু কোম্পানি ভালো পারফর্ম করলেও, অনেকগুলো দর হারিয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে ব্যাংকিং এবং ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে, যেগুলো সাধারণত স্থিতিশীল ও মৌলভিত্তিতে শক্তিশালী।
এছাড়া, টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরেও উল্লেখযোগ্য লেনদেন হয়েছে, যদিও কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল।
টপ গেইনার সেক্টর: কারা ছিল এগিয়ে?
\"Top Sectors By Gainer\" চার্ট অনুযায়ী,
ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর আজকের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানিকে দরবৃদ্ধির তালিকায় তুলেছে।
এরপর রয়েছে কেমিক্যালস, ইনস্যুরেন্স এবং খাদ্য ও অ্যালাইড সেক্টর।
এই সেক্টরগুলোর বেশিরভাগ কোম্পানি \"Up\" শ্রেণিতে থাকায় বোঝা যায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা এদিকেই প্রবল।
তবে কিছু সেক্টর যেমন ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার, পেপার প্রিন্টিং ও সার্ভিস সেক্টর–এ মিশ্র ফলাফল লক্ষ্য করা যায়, যেখানে লাভবান কোম্পানির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিও ছিল।
ক্যাটাগরি ভিত্তিক ভ্যালু: কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে?
\"Top Sectors By Value/Category\" ও \"Top Sectors By Category\" চার্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়,
সর্বোচ্চ মূল্যের লেনদেন হয়েছে ব্যাংক এবং ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে, যা মূলত ‘A’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মাধ্যমে হয়েছে।
‘A’ ক্যাটাগরির শেয়ার এখনো বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয়, কারণ এসব কোম্পানির ডিভিডেন্ড রেকর্ড ভালো এবং লিকুইডিটি তুলনামূলকভাবে বেশি।
এছাড়া ‘B’, ‘N’ ও ‘Z’ ক্যাটাগরির শেয়ারেও কিছুটা অংশগ্রহণ দেখা গেছে, তবে ‘Z’ ক্যাটাগরি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুলনামূলক কম।
বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন—
“আজকের সূক্ষ্ম পতনকে নেতিবাচকভাবে না দেখে বাজারের স্বাভাবিক সংশোধনের অংশ হিসেবে দেখা উচিত। ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোতেই বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ইতিবাচক।”
অপর বিশ্লেষক তানভীর রহমান বলেন—
“ব্যাংক, ফার্মা ও খাদ্য সেক্টরে যে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, তা অর্থনীতির ভেতরে একটি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈদেশিক মুদ্রা সংকট বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলছে।”
রাজনীতি ও বৈদেশিক অর্থনীতির প্রভাব
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) সঙ্গে চুক্তির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হলেও
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি,
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস,
ডলার সংকট,
এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ধীরগতি—এই সবই বাজারে চাপ সৃষ্টি করছে।
বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনো \'অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ\' নীতিতে চলছেন, ফলে বৈদেশিক অংশগ্রহণ বাড়েনি।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ
আজকের বাজার চিত্রে নিম্নোক্ত সুপারিশ করা যেতে পারে:
মৌলভিত্তি ভালো, পরিষ্কার আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত।
ঝুঁকিপূর্ণ Z ক্যাটাগরির শেয়ার বা হঠাৎ আলোচনায় আসা অস্থিতিশীল কোম্পানি এড়ানো উচিত।
বাজার এখনো পর্যবেক্ষণযোগ্য পর্যায়ে থাকায়, ‘সতর্ক বিনিয়োগ’ কৌশল অনুসরণ করাই হবে শ্রেয়।
আজকের বাজারে লেনদেনের গতি ছিল গতিশীল, তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। কিছু সেক্টরে আস্থা দেখা গেলেও বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়ে উঠেনি।
সরকার যদি নীতিগত স্বচ্ছতা এবং বিদেশি বিনিয়োগের পথ সহজ করে, তাহলে বাজারে দ্রুত আস্থা ফিরবে এবং বিদেশি অংশগ্রহণ বাড়বে—এমন আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
আজকের বাজার প্রমাণ করে, শুধুমাত্র লেনদেনের পরিমাণ নয়—বাজারে আস্থা, মৌলিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।