বাংলাদেশের উন্নয়নের ছোঁয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের ভুল ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
রেজুয়ান আহম্মেদ
বর্তমান সময়ে কিছু পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ভিত্তিহীন সমালোচনা করে চলেছেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসছে এমন সব দাবি, যেখানে তারা অভিযোগ করছেন যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা নাকি তাদের দেশের থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে যাচ্ছেন। এই ধরনের বক্তব্য শুধু ভিত্তিহীন নয়, বরং প্রমাণহীন এবং সঠিক তথ্যের অভাবে তারা এ ধরনের মন্তব্য করছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে যা সারা পৃথিবী অবাক হয়ে লক্ষ্য করছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যা পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই হয়তো জানেন না, তা হলো বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ভারতের থেকেও বেশি। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং তার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশ তার শিল্প, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দারুণ অগ্রগতি করেছে। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, কেন বাংলাদেশ থেকে মানুষ ভারতে যাবে যখন তাদের নিজেদের দেশে অধিকতর উন্নয়ন ও সুযোগসুবিধা রয়েছে?
পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের যে বক্তব্য, সেটি যে নিছক একটি গুজব এবং ভুল ধারণার প্রতিফলন তা বুঝতে হবে। শুধু তাই নয়, এ ধরনের মন্তব্য বাংলাদেশের প্রতি একটি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং পর্যটন শিল্প
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশি পর্যটকদের গভীর সম্পর্ক। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি পর্যটকদের আগমন এবং কেনাকাটার কারণে অনেক ব্যবসা টিকে আছে। হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রতিদিন পশ্চিমবঙ্গে যান চিকিৎসা, শিক্ষা এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কাজে। এটি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। যদি পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চলতে থাকে এবং এর ফলে বাংলাদেশি পর্যটকরা পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে পশ্চিমবঙ্গের অনেক ব্যবসা এবং পর্যটন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাণিজ্যিক মুনাফা কমে যাবে এবং বহু ব্যবসা তাদের দরজা বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশি পর্যটকদের গুরুত্ব
বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা, শিক্ষা ও কেনাকাটার জন্য অনেক মানুষ যান। পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মার্কেটগুলিতে বাংলাদেশিদের উপস্থিতি প্রতিদিন চোখে পড়ে। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল। অথচ এই সংখ্যালঘু ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যে ভুল তথ্য প্রচার করছেন, তা একদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে তিক্ত করে তুলতে পারে, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করে তুলবে।
তাই পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের বলা উচিত যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। কারণ এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ নিজেই ক্ষতির সম্মুখীন হবে। একদিকে যদি বাংলাদেশি পর্যটকরা পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি যে কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক বহু বছর ধরে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক। এ সম্পর্ক শুধু দুই দেশের জনগণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে কোনও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ইস্যুতে অনেকবার আলোচনা হয়েছে, এবং বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা পালন করছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার দিক থেকে বাংলাদেশ বরাবরই একটি শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। তাই এ বিষয়ে কোনও ধরনের ভুল তথ্য প্রচার করা উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রান্তি ছড়াতে পারে।
গণমাধ্যমের দায়িত্ব
গণমাধ্যমের দায়িত্ব হল সত্য এবং সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হয়। কেননা ভুল তথ্য কিংবা ভিত্তিহীন মন্তব্য কেবল সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে তারা যে বক্তব্য রাখছেন, তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের মনে কীভাবে পড়তে পারে এবং এ ধরনের মন্তব্য দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
শেষ কথা
বাংলাদেশ বর্তমানে যে উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, তা অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ। মাথাপিছু আয়, জীবনমান এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি সব দিক থেকেই বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে আছে। তাই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার কোনও কারণই নেই। বরং বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান, তারা হয় পর্যটক, চিকিৎসা নিতে আসা রোগী অথবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের বোঝা উচিত, বাংলাদেশিরা পশ্চিমবঙ্গে এসে যে অর্থ ব্যয় করে, তা তাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাজেই, পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ বন্ধ করে বাস্তবতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
পরিশেষে, যদি বাংলাদেশের পর্যটকরা পশ্চিমবঙ্গে না আসে, তবে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের ভেবে দেখা উচিত। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও সহযোগিতাপূর্ণ হোক, এটাই আমাদের একমাত্র কাম্য।